Tuesday, September 30, 2014

ছুটির গন্ধে ঘুম আসে না

এই সময়গুলো তবু ভালো। একটা দিন ভালো গেলে, একটা সপ্তাহ ভালো গেলে সাফল্যজনক এক আনন্দ ভর করে। মাঝে মাঝে সেই সাফল্যের উপর চুনকালি দেয়া দিনও এসে হাজির হয়। তখন সময় কঠিন। বলতে না পারা কষ্ট, বোঝানো যায় না তেমন বেদনা, অসহায়ত্ব সবকিছু একসাথে ঘিরে ধরে। যে ভিত্তির উপর দাড়িয়ে আমাদের এই সমস্ত সুখ, সেই ভিত্তি কোথাও কেঁপে গেলে সবকিছু অর্থহীন মনে হয়। যেখানে আমার শান্তির আশ্রয় সেটাকেও নিতান্ত অকার্যকর মনে হয় তখন। প্রিয় সময়গুলোও অবান্তর হয়ে যায়।

এখন সময় ভালো, তবু সেই কঠিনকে ভুলতে পারি না। মাঝে মাঝেই কঠিন দিনগুলো আসে। আবারো আসবে। সবকিছু ছেড়ে তখন পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। আসলে পালানো হয় না। পিছুটান থাকলে ফিরে আসতে হয়। সবগুলো ভুল, পাপ, গ্লানি পুরোনো রুমালে মুছে ফিরে আসতে হয়। যদি ভূমিকম্প না থামে, তাহলে কি ফেরার পথ থাকে? কোন কোন ভূমিকম্প অগ্ন্যুৎপাতের সূচনা করে, তখন তো সকল ভিত্তি ভারসাম্যহীন। আমি দাঁড়াবো কোথায়?

এই সময়গুলো তবু ভালো, আজকের দিনটা ভালো, গতকালের দিনটাও ভালো, তার আগের দিনও। আমি স্বাধীনতা উদযাপন করেছি। মানুষ মাত্রেই স্বাধীন হতে পছন্দ করে। কিন্তু কোথাও কোথাও পরাধীনতা চায় কেন সেই একই মানুষ? এ এক অবোধ্য স্ববিরোধীতা।

প্রেরণার শক্তি অনেক। প্রেরণার অন্য নাম হতে পারে জ্বালানী। প্রেরণা থেকে অসম্ভব শক্তি নির্গত হতে পারে। সেই শক্তি সৃষ্টি করতে পারে, ধ্বংস করতে পারে, জন্ম দিতে পারে শিল্পের শ্রেষ্ঠতম সজ্জা। কিন্তু সব প্রেরণায় ধারাবাহিকতা থাকে না। প্রেরণা নিজেই হারিয়ে যায় মাঝে মাঝে। তখন শিল্প পড়ে বিপদে আর জ্বালানীর অভাবে শিল্পকর্তা ধ্বংস করতে পারে নিজের শিল্পকর্মও। এটা একটা ট্র্যাজেডি এবং এই ট্র্যাজেডির কোন প্রতিকার নেই।

একটা সম্ভাব্য কাজে সময়, অর্থ এবং শক্তি বিনিয়োগ করতে শুরু করেছি। কাজটার সাফল্য আমি দিব্যচক্ষে দেখতে পাচ্ছি। আমি পরিপূর্ণভাবে আত্মবিশ্বাসী। কাজটা হবে, কতটা সুন্দর হবে তা নিশ্চিত নই। কিন্তু আর সব কাজের মতো এই কাজের শুরুতেও আমি বিপরীত প্রতিক্রিয়াগুলো নিয়ে ভাবছি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে আমি অহেতুক ঋণাত্মক বিষয় নিয়ে চিন্তাগ্রস্থ হই। অভিযোগের সত্যতা মেনেও আমি আমার ভাবনা অব্যাহত রাখি। এটা আমার ধাক্কা সামলানোর মানসিক প্রস্তুতি। আমি খুব বড় কোন ধাক্কা খাইনি মানুষের কাছে, কিন্তু ছোট ছোট প্রচুর ধাক্কা খেয়েছি। যেখানে খাবার ছিল না সেখানেও। সেই ধাক্কাগুলো সামলেছি শুরুতেই একটা সংশয় রেখেছিলাম বলে। পুরোনো অভ্যেস, ছাড়ানো কঠিন।

দুদিন বাদেই দীর্ঘ ছুটি। পুজা আর ঈদ মিলে ৮ দিনের ছুটি। আমার জন্য অকাজের ছুটি। এবার ছুটিতে কোথাও যাবো না। যথারীতি সামাজিক কর্মে ব্যস্ত। পড়াশোনার কাজ, লেখালেখির অনেক কাজ পড়ে আছে, প্রতিবার ছুটিতে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করি। কিন্তু কিছুই হয় না। আমি বরং কর্মস্থলে অনেক বেশী কাজ করতে পারি। গত বছরের সাথে এবছরের একটা পার্থক্য আছে। আকাশে, বাতাসে, অনুভবে। অনেক কিছু যেন বদলে গেছে। বদলানো উচিত হয়েছি কিংবা হয়নি সেই বিচারে আমি অক্ষম। তবু সময় নিজস্ব গতিতে চলে, নিজস্ব পরিকল্পনায়। আমরা সময়ের অনিবার্য দাসত্ব মেনে বেঁচে থাকি।

আমাকে তুমি ছুটি দিয়েছো, অথচ আমি সেই ছুটি অনুভব করতে পারি না। ছুটির কী নিদারুণ অপচয়।

বৃষ্টির দিন শেষ, আশ্বিনের কুয়াশায় ভোর হয়, তিন শালিকের ঝগড়ায় ঘুম ভাঙ্গে। একলা রাত জাগার কথা তখন আর মনে থাকে না। কেন জাগি, জিজ্ঞেস কোরো না।




No comments: