-আপনি কি বিশ্বাস করেন ব্যাপারটা সত্যি ঘটছে?
-আমি নিশ্চিত
-এতটা নিশ্চিত কি করে হলেন?
-আমাকে কাপ্তাইয়ের সেই চাকমা বৈদ্য বলেছে
-এর আগেও তো আপনি প্রতারকের পাল্লায় পড়েছিলেন। কাগজ দিয়ে আপনাকে টাকা বানিয়ে দেবার যাদু দেখিয়েছিল এক রোহিঙ্গা প্রতারক
-করেছিল। এরপরে এটা নিয়েও আরেক রোহিঙ্গা অনেক টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে নকল মূর্তি ধরিয়ে দিয়েছে
-তারপরও আপনার বিশ্বাস, ওখানে কিছু আছে?
-আছে। তোমাকে বলি। ঘটনাটা আমি স্বপ্নেই পাই প্রথমবার। তারপরই বৈদ্যের সন্ধানে যাই। রোহিঙ্গা বৈদ্য এসে মেডিসিন কেনার নামে নানান টালবাহানা করে প্রায় পনের লাখ টাকার মতো নেয়
-এত টাকা!!
-হ্যাঁ। আমি লোভে পড়েছিলাম। আমাকে বলেছিল ওখানে যে গুপ্তধন আছে তার মূল্য পঞ্চাশ কোটি টাকার কম না।
-আর আপনি তা বিশ্বাস করলেন?
-করেছি কারণ ওই গুপ্তধনের অস্তিত্ব আমাকে জানান দেয় অদৃশ্য কিছু একটা।
-ঠিক কোন জায়গায় আছে গুপ্তধন?
-আমার বাগানবাড়িতে যে পুকুর আছে পুকুরের পাড়ে একটা মাটির ঘর আছে। সেই ঘরের নীচে আছে, ঘরের আশেপাশেও।
-যদি জানাজানি হয় তাহলে আর কেউ এসে খুড়ে নিয়ে যেতে পারে না?
-না, ওটা আর কেউ খুড়তে পারবে না। আমার উপস্থিতি ছাড়া কোন বৈদ্যও পারবে না
-বৈদ্য কি করে খুড়ে?
-বৈদ্য ওখানে কি একটা মেডিসিন দেয়। তারপর ওই জায়গায় একটা গোলাকার আলোর চাকতি দেখা যায়। সেই চাকতির নীচের মাটি কাঁপতে থাকে থরথর করে। তারপর মাটির নীচ থেকে পিতলের ডেকচি বা কলসী উঠে আসে আপনাআপনিই
-আপনি নিজের চোখে দেখেছেন?
-আমার সামনেই তো। কিন্তু যে মুর্তিগুলো ওখানে ছিল, সেগুলো কোন ফাঁকে বদলে নিয়েছে সেই বৈদ্য। আমাকে ধরিয়ে দিয়েছে নকল মুর্তি।
-এখানে এত মুর্তি কোত্থেকে আসবে
-এগুলো একসময় বড়ুয়াদের পাড়া ছিল। আরাকানীদের পূর্বপুরুষ বাস করতো। তাদের কারো রেখে যাওয়া সম্পদ হতে পারে।
-আপনি কি করে টের পান গুপ্তধনের অস্তিত্ব?
-আমি যখন বাগানবাড়িতে যাই, একটা সাপ আমার সাথে সাথে হাটে। সম্ভবত ওই সাপটা গুপ্তধন পাহারা দেয়। আমি চলে আসলে সাপটাও কোথায় চলে যায়। আমি যখন পুকুরপাড় দিয়ে হাটি, মাটির নীচ থেকে একরকমের সিগন্যাল আসে আমার কাছে। আমি টের পাই ওখানে আছে, এমনকি সাইজও টের পাই। যেমন পুকরপাড়ে ঘরটার বামদিকে যে গর্তমতো জায়গা আছে সেখানে একটা সিন্ধুক আছে। আমি নিশ্চিত খুড়লে পাওয়া যাবে।
-আপনি কুসংস্কারে ভুগছেন
-আরো অনেকে বলেছে। কিন্তু আমি জানি এটা কুসংস্কার না। এখানে যে কিছু আছে সেটা সত্যি। আমাকে সেই কাপ্তাইয়ের বৈদ্য বলেছে।
-বৈদ্য কি বললো"
-বৈদ্য বললো 'আমি আগে ভুল করেছি। এই কাজের জন্য কোন বৈদ্য টাকা নিতে পারে না। যারা টাকা মেরে চলে গেছে তারা প্রতারক চক্র। আমি এই কাজের জন্য কোন টাকা নেবো না। তবে এখন না। আরো পনের মাস অপেক্ষা করতে হবে। তারপর আমাকে ডাকবেন। আমি এসে তুলে দেবো। তবে একটা শর্ত। আমাকে একটা জিনিস দিতে হবে। আমি যে গর্ত খুড়বো সেখান থেকে আমার জন্য কিছু মাটি দিতে হবে। আমি ওই মাটির প্রকৃতি দেখে বুঝবো আর কোথায় কোথায় এরকম জিনিস আছে।'
-আপনি এই বৈদ্যকে বিশ্বাস করেন?
-অবশ্যই করি।
-আপনি মনে হয় অলৌকিক কোন প্রভাবে পড়েছেন
-আমি জানি না। কিন্তু গত দেড় বছরে আমি ফকির থেকে রাজা হয়ে গেছি।
-তোমাকে তো বললাম তখন। জমির ব্যবসা করে আমি কি অবস্থা করেছি।
-সেটা বাস্তবিকই আশ্চর্য ঘটনা। তিন বছর আগেও আপনার কিছু ছিল না। সব হারিয়ে বসেছিলেন। আবার কি করে এতসব
-আমি নিজেও বুঝি না। আমার পৈত্রিক সম্পদের বাইরে আর কিছুই ছিল না। কিন্তু গত দেড় বছরে আমি একের পর এক জমি কেনাবেচা করেছি। শেয়ারবাজার ইউনিপেটু আমার কাছে ফেল করেছে। আমার পুঁজি ছিল লাখ দুয়েক টাকা আর মানুষের বিশ্বাস।
-আপনি কি মানুষের বিশ্বাস নিয়ে খেলেছেন
-আমি কখনো বিশ্বাসভঙ্গ করিনি। আমি লোকের কাছ থেকে সস্তায় জমি কিনে দাম দিয়ে বিক্রি করেছি
-জমি বেচে এত লাভ?
-আমি খুব দ্রুত কেনাবেচা করেছি। মুড়ি মুড়কির মতো। দুলাখ টাকার জমি দশলাখ টাকা। দশলাখ টাকার জমি এক কোটি টাকা। একেরপর এক কিনেছি আর বিক্রি করেছি। প্রতিমাসে আমাকে কয়েকটা রেজিষ্ট্রি করতে হতো। আমার দলিল দেখেছো না? ওরকম আরো তিন বস্তা আছে। এখন আমি পনের বিশ কোটি টাকার মতো সম্পদ করেছি।
-মাত্র দেড় বছরে?
-আরো আছে। এই এলাকার অর্ধেক জমির দলিল আমার কাছে আছে। আমার শক্তি হলো টাকা। বাকী লোকের কাছে টাকা নাই। ব্যাংক লোন বন্ধ হবার পর কেউ জমিজমা কিনতে পারছে না। আমার কাছে নগদে যে টাকা আছে সেটা দিয়ে আমি একশো কানির একটা প্রজেক্টে হাত দিতে যাচ্ছি।
-আপনি দুঃসাহস করছেন
-আমি পারবো। আমার সাথে কাজ করার জন্য অনেকগুলো পার্টি তৈরী আছে
-এত জায়গা কেনেন, দখল নিতে সমস্যা হয় না? মাস্তান কিংবা অন্য উপদ্রপ
-হাসালে তুমি
-কেন
-আমার সাথে সব রকম লোকের যোগাযোগ আছে। এসব কাজ করতে গেলে সাধু থাকা চলে না
-যেমন
-আমার থানায় লোক ঠিক করা আছে। জমি কেনা হলে আমি থানায় জায়গার ঠিকানা আর নগদ কিছু দিয়ে আসি। আমার লোক গিয়ে জায়গা দখল নিয়ে নেয় পুলিশের উপস্থিতিতে।
-আপনাকে দেখে তো মনে হয় না আপনি এত কিছু করতে পারেন
-এখানকার সব রাজনৈতিক দলকে টাকা দেয়া আছে। কেউ ঝামেলা করে না। আমি ঘরে বসেই কাজ সারি। আমাকে রেজিষ্ট্রি অফিসেও যেতে হয় না।
-গুপ্তধন আর জমি নিয়ে আপনি তো এই এলাকায় জমিদারী কায়েম করতে পারেন।
-হাহাহাহা
-আপনার জন্য ভয়ের একটা খবর আছে
-কি?
-যে গাছ দ্রুত বাড়ে তার মাথা ভেঙ্গে যায় দ্রুত। আপনাকে কোথাও থামতে হবে
-আমি তো থামতে জানি না। আমাকে আরো কয়েক বছর এগিয়ে যেতে হবে। আর কেউ আমাকে পেছনে ফেলার আগে সবাইকে পেছনে ফেলতে হবে। আমার অনেক দিনের স্বপ্ন এটা।
-উন্মাদ স্বপ্ন
নিয়ামুল বশীরের সাক্ষাতকার এখানেই শেষ। সাদামাটা মানুষটিকে দেখে বোঝা যায়না তার ভেতরে এতকিছু। রীতিমত রহস্যময় ব্যাপার। আমি তার সম্পদের উৎসগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেছি। আমার অবিশ্বাস্য লেগেছে। তবে বৈদ্য যাদুকরের খেলার সময় উপস্থিত থাকার ইচ্ছে ছিল। সুযোগের অভাবে পারা যায়নি। পৃথিবীতে এখনো ব্যাপক রহস্যময় ঘটনা রয়ে গেছে। লোক চক্ষুর আড়ালেই ঘটে যাচ্ছে অদ্ভুতুড়ে অনেক ঘটনা। অতিপ্রাকৃতিক শক্তির উপস্থিতি স্পষ্ট। বশীর কি তাদেরই একজন?
No comments:
Post a Comment