ইফতারের সময়ে তিন বছরের পুচকা ছোকরাটা সরবতের গ্লাস হাতে চেয়ারে দাড়িয়ে এক নাগাড়ে চিৎকার করে যাচ্ছে।
"ওতা দাও,ওতা দাও ওতা দাও......."
কেউ বুঝতে পারছে না তার চাওয়াটা কি। দিশা পাশের চেয়ারে। ওর কান ঝালাপালা। সে অনেক চেষ্টা করেও কি বলছে কিছু বুঝতে পারছে না। আমি মনোযোগ দিয়ে দই চিড়া গিলে যাচ্ছি। এই সময়ে পিচ্চিপাচ্চিগুলাকে সচেতনভাবে এড়িয়ে থাকার চেষ্টা। কিন্তু এই ব্যাটা থামছে না। শেষে ওর মা সংলাপে যোগ দিল।
-ওতা মানে কি?
-ওই ওতা
-পেয়াজু?
-না, ওতা
-জিলিপী?
-না, ওতাআআআ (ক্ষেপে যাচ্ছে আবার)
-ছোলাবুট?
-নাআআআ
-মুড়ি??
-নাআআআআ আমি ওতা কাবো, ওতা দাওওওওও
-এখানে আর কিছু তো নেই, ওতা মানে কি
-ওইদে ওকানে, ওত্তা
-কি মুশকিল, কি বলে বুঝো তোমরা?
আমি তখন চিড়া শেষ করে ছোলা মুড়ি মাখাচ্ছি সালাদ দিয়ে, পেঁয়াজুতে একটা কামড় দিয়ে পুচকাটার অসন্তুষ্ট চেহারার দিকে তাকিয়ে আন্দাজ করার চেষ্টা করলাম, ওতা মানে কি?
-কিরে ব্যাটা, কি চাস, হালিম খাবি নাকি?
-হ্যাঁ, আলিমমমম। আমি আলিম খাবো, আলিম দাওওওওও!
সারছে! প্রতিদিন হালিম কিনি, আজ কেনা হয়নি। ব্যাটা আজই হালিমের দাবী তুললো? আমি চুপ গেলাম। ওর মা যোগ দিল আবার সংলাপে
-আজকে হালিম বানাই নাই (উত্তরটা ভুল দিল, ফাঁদে পা)
-একন আলিম বানাও (হুকুম দিল পুচকা)
-আজকে হালিম বানানো যাবে না
-তুমি আলিম বানাও!!!
-আমি পারবো না!!!
-আ-মি আ-লিম খা-বোওওওও........(চীৎকার)
যখন কোন কিছু জোর দিয়ে চায়, তখন বাক্য থেকে শব্দগুলো অক্ষরগুলো আলাদাভাবে উচ্চারণ করবে সে।
মা ছেলে মুখোমুখি সংঘর্ষের আশংকা দেখা দিল। বিপদেই না পড়লাম। এখন হালিম পাবো কই। দিশা এটা সেটা দেয়, কিছুতে ভোলাতে পারে না।
অগত্যা ওর মাকে এগ্রেসিভ হতে হলো। ডাইরেক্ট একশান। এগিয়ে গিয়ে কোলে করে 'আলিম' থেকে দূরে বারান্দায় নিয়ে যেতে হলো। সেখানে অপেক্ষমান দাড়কাক। কাক আসছে বললে, একটু থামে। কাকজাতি ওর দিকে কয়েকবার নজর দিয়েছে বারান্দার গ্রীলের ফাঁকে। সেই থেকে কাকদের পছন্দ করে না সে। অবশেষে এই করে পুচকা শিহানের ইফতার পর্ব সাঙ্গ হলো গতকাল।
No comments:
Post a Comment