[i]কোথাও ভাত নেই। সাদা কালো লাল হলুদ কোন রকমের চাল বাজারে নেই। মানুষ রাস্তায় রাস্তায় হন্যে হয়ে ঘুরছে একমুঠো ভাতের জন্য। কেউ পকেটে টাকা নিয়ে, কেউ হাতে ভিক্ষার থালা নিয়ে। ধনী-দরিদ্র-ফকির-মিসকিন সব এক হয়ে গেছে, কেউ ভাত খেতে পারছে না। চালের আড়ত থেকে উধাও হয়ে গেছে চালের বস্তাগুলো। চাল বণিক আড়ত বন্ধ করে বাড়ি চলে গেছে।
এরকম আজগুবি কান্ড দেশের লোক কখনো দেখেনি। রাজার হুকুম অমান্য করা! কিন্তু সত্যি রাজার হুকুমেই ক্ষেপে গেছে বণিক। রাজা বলেছে হয় সুলভ মূল্যে চাল বিক্রি করো, নয়তো পাজামা খুলে শুলে চড়ো। চাল বণিক বলেছে উচ্চমূল্যে চাল আমদানি করে সুলভ মূল্যে ভাত খাওয়াতে পারবে না ওরা। শূলে চড়ার ভয়ে চালই রাখলো না আড়তে।
রাজার মোটা চামড়ায় একটু গোস্বা লাগলেও কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। কারণ বনিকের টাকা রাজার শান শওকতের উৎস। তাছাড়া দেশে গণতন্ত্র, যার যা কিছু ইচ্ছা করার স্বাধীনতা। এবং সবচেয়ে বড় কথা রাজা-উজিরের চাল কিনতে হয় না। বণিক দিনের বেলা ঝগড়া করেও রাতের বেলা তাদের বাড়ি বাড়ি চালের বস্তাগুলো পৌঁছে দেয়।
চাল বিক্রি বন্ধ হওয়াতে রাজা বরং মনে মনে খুশী। এক মাস ভাত বন্ধ রাখতে পারলে অনাহার অপুষ্টিতে দেশের কয়েক লাখ লোক মরে ঠেসে যাবে, জনসংখ্যার বাড়তি চাপটা কমবে। কিন্তু দোষটা হবে বণিকের।
রাজা তৃপ্তির সাথে আরো ভাবলো, এই মড়াগুলো বরং জীবিতগুলোর চেয়ে সুখে থাকবে। যারা অনাহারে মরে তারা শহীদের মর্যাদা পায়, পরকালে গিয়ে তারা পোলাও-কোর্মা-রোষ্ট-রেজালার সাথে স্বর্গীয় দই-হালুয়া-মিঠাই-মণ্ডা খাবে। আর জীবিতগুলা ঠাসাঠাসি অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে একটু হাত পা নেড়ে বাঁচতে পারবে।
চাল সংকটে পৌর কতৃপক্ষও বিশেষ আনন্দিত। কারণ এত এত লাশ মাটিতে পুঁতে ফেলতে কদিন পরিশ্রম হলেও আজীবন তাদের গু-মুত নিয়ে ভাবতে হবে না। অনাহারী মানুষেরাই নগরের সবচেয়ে নোংরা বিষয়, সৌন্দর্য-হানির প্রধান কারণ।
সুতরাং অনাহারী জনতার ব্যাপক মরণাপন্ন হাহাকার দেখেও বেয়াড়া বণিকের শাস্তির ব্যাপারে কোতোয়ালকে কিছুই বললেন না রাজামশাই।[/i]
....................................................................................................................................................
দিন পনেরো আগে ফিরিঙ্গি বাজার ব্রীজঘাটার কাছে দেলু মিয়ার চায়ের দোকানে বসে একটা নিমকি ভেঙে চায়ের কাপে চুবিয়ে খেতে খেতে অচেনা পরিব্রাজকের কাছে এই গল্পটা শুনে অবিশ্বাসী দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল রহিম শেখ। ঘরে গিয়ে অনেক রাত পর্যন্ত ভেবেছে, এমন আজব দেশও দুনিয়াতে আছে! ভাগ্যিস সেরকম দেশে তার জন্ম হয় নাই। আবার ভাবলো, নাহ এরকম হতেই পারে না। ব্যাটা নিশ্চয়ই মস্ত চাপাবাজ। তাকে মূর্খ ভেবে যা তা গল্প করে গেছে।
গতকাল সন্ধ্যায় এক পোয়া চিনি কিনতে বেরিয়ে সারা বাজার ঘুরে একটা দোকানেও চিনি পেল না। দোকানীরা জানালো ওরা আর চিনি বিক্রি করবে না। কারণ সরকার চিনির ন্যায্য মূল্য বেঁধে দিয়েছে। ওই দামে চিনি বিক্রি পোষাবে না, বিক্রির অপরাধে শাস্তি মেনে নিতে পারবে না। তাই চিনি বাজার থেকে উধাও।
রহিম শেখের মাথাটা চক্কর মারলো হঠাৎ। দেলুমিয়ার চায়ের দোকানে শোনা গল্পটা এতদিন বাদে পুরোপুরি বিশ্বাস হতে শুরু করেছে।
No comments:
Post a Comment