গরম পানির মগে ধূসর সাদা ছোট্ট টি ব্যাগটা চুবিয়ে দিলাম। মগের তলানিতে গিয়ে বসে গেল টি-ব্যাগটা চুপচাপ। কয়েক মুহূর্ত পরেই টিব্যাগের তলা থেকে সোনালি রঙের ঢেউ খেলানো লিকার মগের তলদেশ আলোকিত করতে শুরু করে। অপূর্ব এক দৃশ্য। আমি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকি। জলের ভেতর ভেজা ধোঁয়া যেন, কুন্ডলী পাকিয়ে ওঠা রঙিন লিকারগুলো ছড়িয়ে পড়তে থাকে সারা মগে।
খানিক বাদেই স্বচ্ছ গরম জলের মগটি হয়ে ওঠে একরাশ তরল সোনার আধার। তারপর সেই সোনালু রং আস্তে আস্তে গাঢ় হয়। সেই গাঢ়তা একসময় খয়েরী মেঘের ঘনত্ব নিয়ে তলা ছাড়িয়ে উর্ধ্বমুখী হতে থাকে। আমি আনমনে চেয়ে থাকতে থাকতে দু’আঙুলের মাঝে টিব্যাগের সুতোটা ধরে আলগোছে নাড়তে থাকি। রঙের খেলা সমাপ্ত হলে সিক্ত টি ব্যাগটি তুলে নিয়ে বাইরে ফেলে দেই। তারপর সেই রাঙানো মগটা মুখের কাছে এনে প্রথম চুমুক দিলাম উষ্ণ তরলে। নিমেষেই কষ-তিক্ত একটা স্বাদ জিবে আশ্রয় নিল।
ঠোঁটের বামপাশটা কুঁচকে উঠতে গিয়েও থেমে গেল। মনে পড়লো, এই তেতো অপ্রত্যাশিত নয়। স্বেচ্ছায় জেনে শুনেই চিনি খাওয়া বাদ দিয়েছি। হরদম তেতো চায়ের স্বাদ নিচ্ছি। একসময় তেতো চা অসহ্য লাগতো, তেতো কিছুই নিতে পারতাম না। কাউকে তেতো স্বাদ নিতে দেখলে বিস্মিত হতাম। অথচ আজকাল প্রতিদিন অবলীলায় দুকাপ তেতো হজম করি। বহুকাল মিষ্টতায় ডুবে ছিলাম বলেই বোধহয় আজ আমি তেতো ভালোবাসি।
বেলা বাড়তে বাড়তে তেতোটাই সত্য হলো আজ? নাকি রঙের মুগ্ধতায় তেতো হজম করে নিচ্ছি। এত যুগ চা খাবার পরে এই অপূর্ব রঙ চোখে পড়লো আজকেই প্রথম!
No comments:
Post a Comment