Monday, July 12, 2010

আবার যদু কাগু (খোমাবইয়ে আগুন)

পূর্ব কাহিনীঃ আন্ডামারার যদু কাগু

কাগুর বয়স ১৩২ বছর পেরিয়েছে। কিন্তু একেবারে বুড়ো হয়ে যায়নি। গায়ে তাকদ আছে তখনো। সেই সময় দেড়শো দুশো বছর বাঁচতো মানুষ। কাঠুরে পুত্র মধু আন্ডামারা ছেড়ে পালানোর পর যদু-কাগুর ঘুমটা ভালোই হচ্ছিল। ব্যবসাপাতিও চরমে।

কিন্তু মাঝে মাঝেই কিছু দুঃস্বপ্ন দেখে কাগু। একদিন চরম এক দুঃস্বপ্নের পাল্লায় পড়লো। দেখলো তার যদু-মাচা চুরি করে তার ৪২তম সন্তান ১২ বছরের দুষ্টু বালক একটা চিলের পাখার সাথে বেঁধে দিল। যদু-মাচা হয়ে গেল চিল-মাচা। সেই চিল-মাচা সাঁই সাঁই করে উড়ে ভিন দেশে নিয়ে গেল দুষ্টু বালককে।

বেশ কিছুদিন গেলে বালক ফিরে এলো চিল-মাচায় চড়ে। কিন্তু সাথে করে নিয়ে এলো ভিনদেশী রূপবতী যৌবনবতী ষোড়শী এক বালিকা। বয়সে এবং শরীরে বালকের চেয়েও বড়।

চিল-মাচা আন্ডামারায় ল্যান্ড করার পর বালক এসে যদুর সামনে নামলো। বলল, "বাবা ইহা আমার গার্লফ্রেন্ড জান্টুবানু, আমি ইহাকে বিবাহ করিতে চাই।"

একেতো বয়সে বড় বালিকা। তার উপর মুখে তার ভিনদেশী বুলি। কথাটা শোনামাত্র যদুকাগুর মাথায় দাবানল লেগে গেল। কত্তবড় সাহস!!! এখুনি তাকে শায়েস্তা না করলে শিক্ষা হবে না। রেগে মেগে 'ওরে হতচ্ছাড়া বিয়াদ্দপ বাঁদর তোর এতবড় দুঃসাহস, আমার সাথে বাংলায় কতা কস' বলে গদাম করে পা চালিয়ে দিল বালকের উদ্দেশ্যে।

কিন্তু সেই পা গিয়ে লাগলো পাশে ঘুমিয়ে থাকা কাগুর ৭৭ বছর বয়সী বউ গুন্নীবানুর হাঁটুতে । গুন্নীবানু তার ১১তম এবং সর্বশেষ বউ। বুড়ী এমনিতে বাতের ব্যাথায় কাহিল। সারারাত কোঁকাতে কোঁকাতে দেরীতে ঘুমিয়েছে কাল রাতে। এখন কাগুর বেমক্কা লাথি খেয়ে কাঁচাঘুমটা ভেঙ্গে গেল তার।

তার আগের রাতে তরকারীতে নুন হয়নি বলে যদু বুড়ো একটা লাথি দিয়েছিল খাবারের বাটিতে। গুন্নীবানু পাল্টা জবাব হিসেবে সেই তরকারীর আস্ত বাটি পুরোটাই যদু-কাগুর মাথার উপর ঢেলে দিয়েছিল। কাগু নীরবে হজম করে নিয়েছিল তখন।

গুন্নীবানু ভাবলো এখন সেই ঘটনার প্রতিশোধ নেবার জন্য যদুবুড়া তার ঘুমন্ত হাঁটুতে লাথি মেরেছে। কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে মেজাজ একে তো ফরটি নাইন, তার উপর আগের রাতের কথা মনে হতেই "ওরে হতচ্ছাড়া মিনসে ঘুমের মধ্যেও আমারে জ্বালাইতাস হারামী, দেখাইতাছি মজা তোর আইজ" বলে চিৎকার করে উঠলো বুড়ী।

তারপর পাশ থেকে নারকেলের ছোবড়ার পাপোষটা নিয়ে কাগুর নাক বরাবর একটা আছাড় দিল। পাপোষের আঘাত নাকে লেগে কাগুর ঘুম গেল টুটে, স্বপ্ন গেল ছুটে।

চোখ খুলে গুন্নীবানুর রুদ্রমূর্তি দেখে বুঝে ফেললো ঘটনা খারাপ, আরো খারাপ হবার আগেই মাটিতে ঝাপিয়ে পড়ে বুড়ীর পায়ে ধরে ফেললো, "বউ এইবার মাফ কইরা দে, আমি একটা খারাপ স্বপন দেইখা উঠলাম। তাই ঘুমের মিদ্যে পা চটে গেল। তোরে ইচ্ছা কইরা লাথি দেই নাই। জীবনে আর কুনদিন এরূম হইবো না। মাচার কসম"

মাচার কসম শুনে বুড়ী শান্ত হলো। তারপর কাগু স্বপ্নের ঘটনাটা বিস্তারিত খুলে বললো বুড়ীকে।

স্বপ্ন সবসময় সত্যি হয় না। কিন্তু যদি সত্যি হয়? বুড়ীও ভয় পেল ছেলের দুর্মতির আশংকায়। তাই দেরী না করে ভোর হবার আগেই যদু কাগুকে নিয়ে তাদের বানানো সবগুলা যদু-মাচায় আগুন ধরিয়ে দিল। কাগু নিজ ব্যবসার ক্ষতিও তোয়াক্কা করলো না ছেলের অমঙ্গল আশংকায়।

ফলে পরদিন থেকে আন্ডামারার লোকজন বাজারে গিয়ে তরমুজ বিক্রি করতে পারলো না, চাল কিনতে পারলো না, ডাল কিনতে পারলো না, গোসত কিনতে পারলো না। অভাবে অনটনে আরো দুর্বল হয়ে পড়লো। তারা কেবল তরমুজ খায়, আর তরমুজ হাগে। গ্রামের নালা নর্দমা সব তরমুজের লালে লাল হয়ে গেল।


[এটি ১০০% আজাইরা সাময়িক রূপকথা]

No comments: