Monday, July 12, 2010

পাগলরে তুই সাঁকো নাড়াইস নারে

চল চল চল/ ওরে তরুন দল/ তোদেরকে বোকা বানিয়ে/ যত্তসব আইবুড়োদের দল

ভয়ের কারন নাই। কবিতা লেখার অপচেষ্টা হচ্ছে না। আরেকটা টেকি গল্প। কম্পিউটারের ভুত স্মৃতি নিয়ে।

চাকরীতে ঢোকার সময় প্রথম মিথ্যাটা বলেছিলাম কম্পিউটার নিয়ে। অফিসে একখানা লেটেষ্ট কম্পিউটার কেনা হয়েছিল। ব্রান্ড Acer মডেল 486 সাথে আরো নানা ধরনের আপডেট জিনিস। নতুন ফিচার উইনডোজ ৩.১ এবং সবচেয়ে আশ্চর্য ঘটনা এটি সম্পূর্ণ রঙ্গিন। এত চোখা জিনিস দেখে আমার ২৮৬ পিসিতে করা ৭ দিনের কোর্সের জ্ঞান ভিরমি খেল।

ফলে অফিসে জয়েন করার পর বড় সাহেব যখন জিজ্ঞেস করলো কে কে কম্পিউটার জানে, আমি 'জীবনেও কম্পিউটার দেখি নাই' বলে সবার পেছনে লুকিয়ে থাকলাম। যে কয়েকজন কম্পিউটার জানে বলে হাত তুললো তাদেরকে লম্বা দিস্তা কাগজের শিট ধরিয়ে দেয়া হলো কাজ করার জন্য। আমি মনে মনে বললাম, “মরগে তোরা, আমি বাঁচলাম”।

কম্পুজ্ঞানী কলিগরা ভেবেছিল ‘কম্পু পারি’ বললে বস খাতির করবে, বেতন ভাতা বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু লম্বা কাগজের দিস্তা দেখে ‘জেনারেল’ এসির বাতাসেও ঘামতে থাকলো এবং রাত বারোটায়ও কাজ অসম্পূর্ণ রেখে বাড়ী ফিরতে লাগলো। আমি কম্পুজ্ঞান লুকিয়ে রাখছিলাম ঠিকই কিন্তু মাঝে মধ্যে উকি দিয়ে দেখি কিভাবে কি করে। খেয়াল করে দেখলাম ওই কম্পুজ্ঞানীরা টাইপ কাজে আমার চেয়ে পিছিয়ে এবং লোটাস জ্ঞান খুবই দুর্বল। দুর্বলকে সাহায্য করার নৈতিক মানসে একদিন দুপুরবেলা বললাম আমি একটু ‘ট্রাই করি’।

দেখা গেল আমার ‘ট্রাই’ ওদের চেয়ে দ্রুত হচ্ছে। বসের অগোচরে ওদের কাজে সাহায্য করার অনুরোধ পেলাম। কিন্তু একদিন কাজ শেষে পেছনে ফিরে দেখলাম বস খাড়া আমার পেছনে। ভয়ে আমার শিরদারা টনটন করতে লাগলো। কারণ বসের পরবর্তী সংলাপগুলো হুমকিমূলক।

-কি করো তুমি এখানে, কম্পিউটার জানো না, কিন্তু অন্যের কাজে বিঘ্ন ঘটাও কেন? গেম খেলতে বসেছো নাকি?
-গেম? তাওবা। কাজের জায়গায় গেম খেলবো কেন? কিসের গেম?
-ন্যাকামি করো? ভাজা মাছটিও উল্টে খেতে জানো না?
-সত্যি জানি না স্যার
-শাট আপ
-সরি স্যার
-তুমি ভালো করেই জানো লেটেষ্ট কম্পিউটারে সব ধরনের গেম লোড করা থাকে। কিন্তু খবরদার ভুলেও ওসব কখনো খেলবে না। এটা কাজের জায়গা। খেলাধুলার মাঠ নয়।
-কিন্তু কোথায় সেগুলা? আমি নিজেও খেলাধুলা পছন্দ করিনা কাজের সময়। খালি একবার দেখিয়ে দেন। জীবনেও যাবো না ওদিকে।
-আচ্ছা দেখাচ্ছি। বাট বি কেয়ারফুল। ডোন্ট এভার ওপেন দোজ গেমস!

তারপর বস একটা কমান্ড দিলে উইন্ডোজ ৩.১ খুললো। তারপর আরেকটা ক্লিক করলো। তারপর আরেকটা মেনু এলো। তারপর দেখা গেল নানা রকম তাস খেলা, মাইন সুইপার, আরো কি কি। সবাই মনযোগ দিয়ে দেখলাম। নোট করে নিলাম।

বস বললো, মনে থাকবে তো?
আমরা বললাম, ইয়েস স্যার। আলবত থাকবে।

আসলেই মনে থেকেছিল কিভাবে গেম সেকশান খুলতে হয়। সেদিন সন্ধ্যা থেকে নিয়ম করে দুই ঘন্টা কম্পিউটারে পালাক্রমে তাস খেলা চলতে লাগলো। অফিসে এতদিন পর একটা আনন্দের জায়গা পাওয়া গেল। ভার্সিটি ছাড়ার পর তাস খেলার সুযোগ হয় নাই আর।

পাগল তুই সাঁকো নাড়িস না রে।

No comments: