Monday, October 4, 2010

পাআআআআআআআআআআ

বাসায় পৌঁছে কলিংবেল বাজাতেই সবচেয়ে কাংখিত যে শব্দটা ভেতর থেকে ভেসে আসে সেটা হলো “বাবা এসেছেএএএএএএ………..”।

.

বলাই বাহুল্য ওটা কার গলা। সদ্য চতুবর্ষ পেরুনো ওশিন। ছুটে এসে ছোট ছোট দুহাতে জড়িয়ে ধরবে কিংবা এক লাফে গলায় ঝুলে পড়বে। ইদানীং তার পেছন পেছন আরেকজনও আসার চেষ্টা করে। ইনি এখনো হাঁটতে পারেন না, কিন্তু ওয়াকারে করে সারা ঘর দাপিয়ে বেড়ান সাই সাই করে। তিনিও কলিং বেল শোনামাত্র হৈ হৈ শব্দ করা শুরু করবে, দুহাত বাড়িয়ে যদ্দুর সম্ভব ছুটে আসবে। তারপর আলতো করে বলবে, ‘পা…’। কয়েক সেকেন্ড বিরতি দিয়ে আরেকটু জোর দিয়ে “পাআআ…..”। কেউ শেখায়নি, এই শব্দ নিজে নিজে তৈরী করেছে। তার নিজস্ব তিন চারটে শব্দের ভান্ডার তৈরী করেছে ১৩ মাস পেরুনো ড.শিহান রিশাদ।

.

আমাকে ‘পা’ কিংবা 'পাপা' ডাকে শিহান। ইংরেজের বাচ্চা হলে বুঝতাম যে পাপার সংক্ষিপ্ত রূপ পা, কিন্তু বাঙালের পোলা হয়ে কোত্থেকে পা আবিষ্কার করলো ভেবে পাই না। আগে হালকা ধমকে দিয়ে বলতাম, কিরে ব্যাটা আমি ‘পা’ মানে ট্যাং হলাম কেমনে? কিন্তু আজকাল অজান্তে আমিও এই ‘পা’ ডাকের ভক্ত হয়ে গেছি এবং চিন্তায় আছি কখন 'পা' ডাকের মেয়াদ শেষ হয়ে 'বাবা' কিংবা 'আব্বা'র যুগ চলে আসে।

.

কেবল ‘পা’ নয়। আমি বাসায় ঢোকামাত্র বিশেষ চিত্তচাঞ্চল্য দেখা যাবে তার মধ্যে। বোধহয় সারাদিনের না বলা কথাগুলো হড়বড় করে বলতে থাকে এবং শব্দের বাজেট দুটো। ‘পা’ আর ‘কা’ এই দুই শব্দ দিয়ে সব বকবকানি। ফোন কিংবা কলিংবেল বাজলে বলবে, ‘কে’? আর শিক্ষাদীক্ষা বিষয়ক তাবৎ বস্তুকে 'ক-খ' দিয়েই সামলাবে। এমনকি আমার ল্যাপিকে দেখলেও বলবে ‘ক-খ’।

.

গতকাল থেকে নতুন এক রসিকতা যুক্ত হয়েছে। আমার হাতটা টেনে নিয়ে উপরে আর নীচের মিলিয়ে পাঁচটা দাতের কামড় দেবার মতলবে থাকে। ব্যাথা পাচ্ছি বলে মৃদু ধমকে দিলে চোখ পিট পিট করে হাসে। যেন বলতে চায় “হালকাই তো দিলাম, এতেই ব্যাথা পাও?”

.

আসলে যে কথা বলার জন্য 'ক-খ' করলাম এতক্ষণ তা হলো, আমি বুড়ো হইতেছি আর পোলা ফাজিল হইতেছে দিন দিন।

No comments: