বড়কর্তা দেশে আসলে রুই কাতলা শোল পুটি সবার তটস্থ হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। কয়েকমাস পর পর বাংলাদেশে আসেন তিনি। গুনে গুনে ৫ দিনের জন্য। প্রতিদিন সকালের ব্যবস্থাপনা সভায় উপস্থিত থাকেন। সবার বক্তব্য শেষ হলে টানা হেদায়েতে সূচনা। কামলা বাহিনী মাথা নীচু করে হেদায়েত গ্রহন করে। যার সিংহভাগ জুড়ে থাকে অনাগত মন্দার হুশিয়ারী।
আজকের বিশ্বমন্দার বহু আগে থেকেই মন্দার এই গল্প শুনতে শুনতে কান ছিদ্র হয়ে গেছে। কামলাদের সতর্ক করে বলা হয় - বি কেয়ারফুল, টাইটেন ইওর বেল্ট, খুব খারাপ দিন আসছে। মানে- হিসেব করে খরচ করো, বেশী দিতে পারবো না, ব্যবসা খুব ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। প্রথম প্রথম আমরা সত্যি সত্যিই বেল্ট টাইট করা শুরু করেছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম শীত গ্রীষ্ম বর্ষা সব ঋতুতে একই শ্লোগান, তখন আমরা রাখাল ছেলের গল্পের মতো অবিশ্বাসে অভ্যস্ত হয়ে যাই। মিটিং শেষে মনে মনে বলি, বেল্টতো টানতে টানতে ছিঁড়া ফেলছি, আর কী টাইট করুম। এরপর প্যান্ট খুইলা লুঙ্গি পরতে হবে। তখন কী আবার শুনতে হবে- টাইটেন ইওর গিট্টু?
বিদেশী এই কর্পোরেটের মাঝারি কামলা হিসেবে দেখতে পাই এর বার্ষিক উলটপালট গত দশ বছরে ১০ মিলিয়ন থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেলেও কর্তার কাছ থেকে কখনো লাভের গল্প শোনা যায় না। ফলে বিশ্বমন্দার বায়ু ঝড়ো হাওয়ায় পরিবর্তিত হবার পরও কামলারা তেমন গা করছে না। ভাবছে মন্দায়ই তো আছি গত এক যুগ ধরে। গোটা কামলাজীবনে কখনো সুদিন আসে নি, নতুন আর কি বিপদ আসবে। ১০ মিলিয়নের ব্যবসা ১০০ মিলিয়নে এসে দাঁড়িয়েছে মন্দার ভেতর দিয়েই, আরো চারটি দেশে চারখানা প্রজেক্ট হয়েছে মন্দার ভেতরেই, বাংলাদেশে বিনিয়োগ দ্বিগুন হয়েছে মন্দার ভেতরেই।
তাই মন্দাও কামলাদের কাছে বেশ উপাদেয় হয়ে গেছে। কামলারা মন্দায় হাসে। ভাবে সারাবছর তো বিশ্রাম নাই, মন্দার সুযোগে বিশ্রাম হবে আর কামলা ভার একটু কমলেও কমতে পারে। গোপালের আলুপোড়া খাবার মতো। কামলারা পোড়া আলুর প্রতীক্ষায় থাকে।
No comments:
Post a Comment