Monday, February 26, 2024

শরচ্চন্দ্র দাস বনাম থাংলিয়ানা

 



বই দুটো প্রকাশের পরপর পাঠকের কাছ থেকে যেসব অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা পেয়েছি, তার মধ্যে বিশ্বপড়ুয়া স্নেহের মাশরুফ হোসেনের এই লেখাটা ছিল সবার সেরা।

২৫শে ফেব্রুয়ারী ২০২৪

নন-ফিকশন বা গবেষণামূলক বইয়ের ক্ষেত্রে যে ব্যক্তির যে বিষয়ে উপযুক্ত অভিজ্ঞতা কিংবা প্রশিক্ষণ নেই, সচরাচর আমি ওই বিষয়ে ওই ব্যক্তির লেখা পড়ি না। জ্ঞানের জগৎ এখন অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে, "এ্যামেচার" দের পক্ষে এতে অবদান রাখাটা কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। আগের যুগে মানুষ ঘরে বসে অনেক কিছু আবিষ্কার করে ফেলতো, এখন সেটার সম্ভাবনা খুবই কম। পিউর সায়েন্সে এটা দৃশ্যমান, সোশাল সায়েন্স বা আর্টসে এখনও অতটা দৃশ্যমান না। বাংলাদেশে এখনও কোনোরকম ট্রেনিং বা ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়াই মানুষজন শখের বশে রাজনীতি, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে বই নামিয়ে ফেলে।
এটুকু পড়ে ভুল বুঝবেন না। বই লেখা তো কোনো অপরাধ না, যে কেউ যে কোনো বিষয়ে বই লিখতেই পারে। এসব বইগুলোর মান যে সবটাই খারাপ, তাও না- চমৎকার কিছু বইও আছে। তবে পাঠক হিসেবে আমি খুঁতখুঁতে, এসব বই সন্দেহের চোখে দেখি।
এর উজ্জ্বল ব্যতিক্রম Haroon Rashid ভাই। তিনি কর্পোরেট জগতের মানুষ, ইতিহাসে তাঁর ফর্মাল একাডেমিক ট্রেনিং থাকার কথা না। অথচ এই মানুষটি তীব্র প্যাশন, ভয়াবহ পরিশ্রম এবং বছরের পর বছর লেগে থেকে কয়েকটি বই লিখেছেন এবং অনুবাদ করেছেন যেগুলো পেশাদার গবেষকদের লজ্জা দিতে সক্ষম। আমি প্রথম মুগ্ধ হই তাঁর "উপনিবেশ চট্টগ্রাম" বইটা পড়ে। চাকমা রাজাদের ইতিহাস নিয়ে তিনি আরেকটি লেখা লিখেছিলেন সম্ভবত সিল্করুটে, ওটা পড়ে এতই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে ভাইকে সরাসরি কল দিয়েছিলাম।
অত্যন্ত আনন্দের সাথে দেখতে পাচ্ছি, এবার তাঁর হাত ধরে দুটো রোমাঞ্চকর বই আসছে। আমি দুটিই সংগ্রহ করব। থাংলিয়ানা এসেছে কথাপ্রকাশে, আর নিষিদ্ধ তিব্বতে প্রথম বাঙালি এসেছে বাতিঘরে।
হারুন রশিদ ভাইয়ের বই মানেই ইতিহাসের অজানা বাঁকের হারিয়ে যাওয়া মণিমুক্তোর সন্ধান, তাঁর অনুবাদ মানেই প্রবল পরিশ্রমে গবেষণালব্ধ খুঁটিনাটি টীকা ও প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যার সমাহার।
আমি নিজেও যেহেতু "এ্যামেচার" হিসেবে একদিন বই লেখার স্বপ্ন দেখি, এ লাইনে আমি উনাকে অনুকরণীয় বলে মনে করি।
সস্তা চাকচিক্যের ভীড়ে একজন নিভৃতচারী গবেষক ও লেখক হারুণ ভাইয়ের বইগুলোর বহুল প্রচার ও পাঠ কামনা করছি।

পরের পোস্ট ছিল বাদল সৈয়দের:

Haroon Rashid নীরবে বছরের পর বছর হারিয়ে যাওয়া দুর্লভ ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করছেন। এমনকি এ কাজ করার জন্য নিয়মিত অবসরে যাওয়ার প্রায় পনের বছর আগে তিনি 'হাই প্রোফাইল' চাকুরি ছেড়ে দেন। সমসাময়িক কালে তাঁর মতো এত সিরিয়াস ইতিহাসভিত্তিক লেখক আমি খুব কম দেখেছি। এবার বইমেলায় তাঁর নিচের বইগুলো বের হয়েছে। প্রকাশ করেছে 'বাতিঘর' এবং কথাপ্রকাশ। অন্তত আমার কাছে এগুলো 'মাস্ট কালেকশন'।

প্রথম আলোতে শরচ্চন্দ্র দাসের বইটি সম্পর্কে বলা হয়েছিল:


"মেলায় বরাবরের মতোই এবারও মননশীল বইয়ের প্রতি পাঠকের আগ্রহ লক্ষ করা করা গেছে। মেলায় আকবর আলি খান, আলতাফ পারভেজ, আলী রীয়াজ, মহিউদ্দিন আহমেদের বই খুঁজছেন পাঠকেরা। তাঁদের বাইরে আনিসুজ্জামান, বদরুদ্দীন উমরের মতো লেখদের বইয়ের নতুন নতুন সংস্করণেরও চাহিদা বাড়ছে।

এবার এমন তালিকায় নতুন সংযোজন হারুন রশীদের লেখা গবেষণাধর্মী ইতিহাস আশ্রয়ী বই শরচ্চন্দ্র দাস: নিষিদ্ধ তিব্বতে প্রথম বাঙালি। শরচ্চন্দ্র দাসের মতো এমন বর্ণাঢ্য চরিত্র ব্রিটিশ ভারতে আর দ্বিতীয়টি ছিল না বললেই চলে। চট্টগ্রামের পটিয়ার এই সন্তান একই সঙ্গে ছিলেন অভিযাত্রী, পণ্ডিত ও ব্রিটিশ ভারতের প্রথম কাউন্টার ইন্টিলিজেন্ট (গুপ্তচর)। পরিচয় গোপন করে নিষিদ্ধ তিব্বতে তিনি যেভাবে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন, তা এক কথায় ছিল দুঃসাহসিক।
১৮৭৯ ও ১৮৮২ সালে দুই দফা সফরে তিব্বতের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সখ্য হয়েছিল শরচ্চন্দ্রের। কিন্তু দ্বিতীয়বার ১৮৮২ সালে তিব্বত গিয়ে ১৪ মাস থাকার পর যখন ফিরে আসেন, তখন সে দেশের সরকারের কাছে তাঁর পরিচয় প্রকাশিত হয়। শরচ্চন্দ্রকে তিব্বত অভিযানে সহায়তা করা তিব্বতের বেশ কয়েকজন নাগরিককে এর মূল্যও দিতে হয়। ব্রিটিশ ভারতের গুপ্তচরকে সহায়তার দায়ে তাঁদের সবার মৃত্যুদণ্ড হয়। গত বেশ কয়েক বছর ধরে শরচ্চন্দ্র দাসকে নিয়ে গবেষণা করেছেন হারুন রশীদ। এই বই শরচ্চন্দ্রকে নিয়ে প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা বই, এ কথা বলাই যায়।"

তার আগে তারেক অনু প্রকাশের খবর পেয়ে পাহাড়ে বসেই লিখেছিল:
হারুন ভাইয়ের Haroon Rashid এই বইটির জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান অবশেষে ঘটলো, শরচ্চন্দ্র দাশের জীবন ও অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে 'নিষিদ্ধ তিব্বতে প্রথম বাঙালি', এই বইটির সাথে বিশেষ ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণ এককালে তিব্বত গিয়েছিলাম বলে স্নেহ করে হারুন ভাই বারবার বলেছিলেন বইয়ের ব্যাক-কভারে সামান্য কিছু লিখে দিতে। সেই কয়েক লাইন-
প্রতীক্ষিত বইটি প্রকাশ করেছে 'বাতিঘর'।


কালের কন্ঠ পত্রিকায় লিখেছে থাংলিয়ানা নিয়ে।




No comments: