‘আছে’- এই অনুভূতি খুব জরুরী। যাদের আছে তাদের জন্য যেমন, যাদের নেই তাদের জন্যও। যাদের যা আছে অনেক সময় তারা তা বুঝতে পারে না। অনুভব করে না। হারিয়ে যাবার পরেই মনে পড়ে, আমারও ছিল। যাদের এখন নেই, তাদেরও একসময় ছিল। যখন ছিল তখন অনুভব করেনি। চলে যাবার পর মনে পড়েছে, আমারও ছিল। কী ‘আছে’? তালিকার কোন সীমানা নেই। বস্তুগত এবং অবস্তুগত যে কোন ধরণের বিষয় হতে পারে। পরিবার, সম্পর্ক, জীবিকা, স্বচ্ছলতা, সম্পদ, সময়, সুবিধা, সুস্থতা, সৌন্দর্য যে কোন বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আছে - এই অনুভূতির অভাবে প্রচুর মানুষ নিজেকে বঞ্চিত মনে করে। যা নেই, তা নিয়েই হাহাকার করতে থাকে। যা আছে, সেটার কাছ থেকে প্রাপ্য সুখের অংশ বুঝে নিতে পারে না। পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ ‘আছে’ বিষয়ে সমান। ইলন মাস্ক থেকে কৃষক গণিমিয়া পর্যন্ত এই অনুভূতি নিয়ে একইরকম সুখ অনুভব করতে পারে। গনিমিয়া সাড়ে চার হাজার টাকায় একটা গরু বাছুর কিনে যতটা সুখী হয়েছে, ইলন মাস্ক বিলিয়ন ৪৪ বিলিয়ন ডলারে টুইটার কিনেও সেরকম সুখী হয়েছে। দুজনের অর্জনের অর্থমূল্য যোজন যোজন দূরত্ব থাকলেও অনুভূতির বিচারে দুজনের সুখ কারো চেয়ে কোন অংশে কম নয়। আমাদের দেহে সুখের অনুভূতি বিলিয়ে দেয় যে পদার্থ, সেটা চার হাজার টাকার লেনদেনে যে পরিমাণ নির্গত হয়, চল্লিশ বিলিয়ন ডলার পেয়ে গেলে সেটা একশো গুন বেশি নির্গত হবার কোন সুযোগ নেই। সুতরাং এখানে সম্পদের পার্থক্য যতই থাকুক, অনুভূতির পার্থক্য খুব বেশি হবে না। শুধু নিজেকে সেই অনুভূতির জন্য প্রস্তুত করতে জানতে হবে। অনেক কম থেকেও কখনো কখনো দেখা যাবে গনি মিয়া ইলন মাস্কের চেয়েও বেশি সুখী।
২. 'অধিকার' প্রয়োগের অধিকার
অধিকার থাকলেই সবসময় সেটা আদায় করতে হবে তেমন কোন কথা নেই। কড়ায় গণ্ডায় নিজের সব হিসেব বুঝে নেবার মধ্যে কোন মহত্ব নেই। অন্যের ক্ষতি করে নিজের ন্যায্য অধিকার বুঝে নেয়াটাও এক ধরণের অন্যায়। খুব প্রয়োজন না হলে নিজের সব অধিকার আদায় করা উচিত নয়। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণী মূলত নিজের দেহটারই মালিক। নিজের দেহ ছাড়া অন্য কোন কিছুর ওপর অধিকার হলো বাড়তি পাওনা। বাড়তি পাওনা আদায় করতে গিয়ে মানুষ সারা পৃথিবীতে অশান্তির সৃষ্টি করে।
৩. প্রয়োজন বনাম চাহিদা
প্রয়োজন এবং চাহিদা মানবজাতির সবচেয়ে ভারসাম্যহীন ব্যাপার। মানুষ বাদে অন্য সব প্রানী প্রয়োজন এবং চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে। কিন্তু মানুষের চাহিদা সবসময় প্রয়োজনকে ছাড়িয়ে যায়। কতটুকু ছাড়াতে পারে তার কোন সীমা নেই। সেটা মহাবিশ্বের মতো অসীম। মানুষের প্রয়োজন ও চাহিদার মধ্যে এই চরম ভারসাম্যহীনতা পৃথিবী জুড়ে কলহবিবাদের জন্ম দিয়েছে। মানুষ মনে করে প্রয়োজন শেষ হলে থেমে যাওয়া পরাজিত হবার লক্ষণ। অতএব বিজয়ী হবার মানসে চাহিদাকে এতটা প্রলম্বিত করে সেটা অন্যের প্রয়োজনকেও কেড়ে নিতে থাকে। এমনকি অন্যের প্রয়োজনকে নিজের চাহিদার পদতলে রাখাকে সাফল্য হিসেবে দেখা হয়। যার কাছে এক লাখ টাকা আছে তার প্রয়োজন এক কোটি হলে যৌক্তিক হতে পারে। কিন্তু যার একশো কোটি টাকা আছে, তার প্রয়োজন শেষ হয়ে যাবার কথা। কিন্তু সে তবু হাজার কোটি টাকার দিকে হাত বাড়ায়। হাজার কোটির চাহিদা বাড়তে বাড়তে লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলেও কেউ থামে না। অথচ মানুষ ভাল করেই জানে সে এক হাজার বছর বেঁচে থাকবে না। তার গড় আয়ু একশো বছরেরও কম। ৫০ বছরের পর থেকে তার ভোগের শক্তি কমতে শুরু করে। মানবজাতির এই নির্বুদ্ধিতা কেউ নিন্দার চোখে দেখে না। কারণ মানুষের দৃষ্টি এটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। অথচ প্রয়োজন আর চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য থাকলে পুরো পৃথিবী জুড়ে বিদ্যমান সমস্যার অধিকাংশই মিটে যেতো। আবুল হোসেনের জীবনের অন্যতম সাফল্য ছিল তিনি দীর্ঘ আড়াই দশক সর্বাঙ্গীনভাবে সুখী জীবন কাটাতে পেরেছিলেন। শুধু প্রয়োজনের ভেতর চাহিদাকে সীমাবদ্ধ রেখেছিলাম বলেই এই সাফল্য এসেছিল।
No comments:
Post a Comment