Wednesday, October 17, 2012

সরি মিনিষ্টার, আমরা বরং ভেজাল খেয়েই বাঁচি

বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৪% এর মতো। কিন্তু ডাক্তারের চেম্বার বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে গেলে মনে হবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২০ শতাংশ বা তারো বেশী। পাঁচ বছর আগেও যেসব হাসপাতাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে বসার জায়গা পাওয়া যেত, এখন সেখানে দাঁড়াবার জায়গাও হয় না। যে ডাক্তারের কাছে দিনে ১০ জন রোগীও যেতো না, সেখানে এখন শতাধিক রোগী। রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রত্যেকটা ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং প্রত্যেকটা মোটামুটি মানের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এত রোগী হঠাৎ করে উদয় হলো কোত্থেকে? জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে তা বহুগুন বেশী। রাস্তাঘাটের জ্যামে যতগুলো গাড়ি দেখা যায়, তার বিরাট একটা অংশ ছোটাছুটি করছে হাসপাতাল ডাক্তার নিয়ে।


দেশের বিরাট সংখ্যক মানুষ কিডনী লিভার পাকস্থলী আর হৃদযন্ত্রের জটিল রোগে আক্রান্ত।  প্রায় প্রত্যেকটা রোগের জন্য দায়ী কোন না কোন খাবার। মানুষ বাঁচার জন্য খায়, আর বাংলাদেশের মানুষ মরার জন্য খায়। খাদ্যে ভেজাল অনৈতিকতার সর্বোচ্চ স্থান স্পর্শ করেছে। খাদ্যে ভেজালের জন্য কিছু গৌণ শাস্তি জেল জরিমানা থাকলেও তা ভেজালকরণের উপর কোন প্রভাব বিস্তার করে না। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা কিছু বেশী আয়ের লোভে মানুষের জীবনের উপর আঘাত করছে। আবার এমন নয় যে ভেজালকারী নিজে মুক্ত থাকছে। মাছের ফরমালিন কারিগর, সবজিতে ফরমালিন খাচ্ছে, সবজির ফরমালিন কারিগর খাচ্ছে মাছে। এভাবে একে অপরকে ভেজালের আওতায় এনে দেশের সব মানুষকে ভয়াল রোগাক্রান্ত করে ফেলা হয়েছে।


ভেজাল না করলে একজন ব্যবসায়ীর কতো টাকা ক্ষতি হয়? মাছ ফল কিংবা সবজি বিক্রেতা ছোট আয়ের মানুষ। ভেজাল না দিলে কি তাদের সংসার চলবে না? এই ভেজাল কি প্রাণের দায়ে নাকি টাকার লোভে?

সরকারের এক মন্ত্রী বলেছেন ভেজালকারীর বিরুদ্ধে মামলা করুন। কথাটা শুনে রেগে না গিয়ে হেসে দিলাম, রেগে গেলে আমার মস্তিষ্কের রগ ছিড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকলেও মন্ত্রীর  ইয়েও ছিড়বে না। তাই হেসে দিলাম। মাননীয় মন্ত্রী মহাশয়, আপনি কি ভেজাল খান না? আপনি ক'খানা মামলা করেছেন? দৈনিক ক'খানা মামলা করতে হবে আমাকে? আমি দৈনিক ১০ খানা ভেজাল খাই ১০ দোকান থেকে। বছরে কমসে কম ৩৫০০ মামলা করতে হবে আমাকে। একটা মামলা করে একজন মানুষ কতোবছর ঝুলে থাকে আপনার জানা আছে? আমার মামলার খরচ আর সময় যোগাবে আপনার সরকার?


সরি মি. মিনিষ্টার। আমরা বরং ভেজাল টেজাল খেয়ে যতদিন পারি ধুঁকে ধুঁকে বাঁচি। কোর্টকাচারিতে ধুঁকে ধুঁকে সর্বশান্ত হয়ে মরার চেয়ে বেছে বেছে ভেজালের মধ্য থেকে সহনীয় ভেজাল খুঁজে বেঁচে থাকি। শাহজাহানের ট্রাকের চাকা এড়িয়ে, কার্বাইড-ফরমালিনের বিষ পেরিয়ে, আততায়ীর ঘাতক বুলেট সরিয়ে, গামছা মলমপার্টির আদর মাড়িয়ে যতদিন পারি বেঁচে থাকতে চাই।

No comments: