শহরে জনসংখ্যার চাপ বেড়ে গেছে হঠাৎ। চট্টগ্রাম নিরিবিলি শহর ছিল আশির দশকে। এমনকি নব্বই দশকেও। একুশ শতকে এসে চাপটা বাড়তে শুরু করে। একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে এসে চাপটা ঢাকার মতো হয়ে যাচ্ছে। জ্যাম না থাকলে অফিস থেকে বাসায় পৌঁছাতে আধঘন্টাও লাগে না। খালি রাস্তায় পনের মিনিটেই কাজির দেউড়ি চলে যেতে পারি। মাত্র ৯ কিলোমিটার রাস্তা। গতকাল সেই রাস্তা পেরোতে দুই ঘন্টা লাগলো। সারাটা রাস্তা জ্যাম। অর্ধেক রাস্তা জুড়ে ট্রাক আর কার্ভার্ডভ্যানের জট। ধোঁয়া ধুলায় আচ্ছন্ন চারপাশ। ছিমছাম শহর হিসেবে চট্টগ্রামের সুনাম ঘুচে গেছে।
.
শহরের কোথাও উন্মুক্ত ময়দান অবশিষ্ট নেই। স্কুলের মাঠগুলো বাদ দিলে বাকী সবগুলো জায়গায় দালানকোঠা উঠে গেছে। পরিবার নিয়ে কোথাও গিয়ে দম ফেলার একটা জায়গা নেই। কয়েকটা এন্টারটেইনমেন্ট পার্ক আছে তাতে প্রকৃতিকে যতটা সম্ভব বিসর্জন দিয়ে কংক্রিটের সাম্রাজ্য বানানো হয়েছে। সেগুলোও গিজগিজ করছে মানুষ। কোথাও গিয়ে শান্তি নেই। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শহরে একটা গাছপালায় ভরপুর সবুজ পার্ক থাকতে পারতো না?
.
আমাদের ছেলেবেলা কেটেছে আগ্রাবাদে। সিজিএস কলোনীর সবুজ মাঠে হেসে খেলে কেটেছে আমাদের শৈশবের আনন্দময় দিনগুলো। এত সুন্দর শৈশব খুব বেশী মানুষ পায় না। যে কোন শিশুর শৈশব এরকম একটা সবুজ কলোনীতে হওয়া উচিত। বুক ভরে শ্বাস নিতে পারবে তেমন একটা জায়গা। এ যুগের বাচ্চাদের বন্দী থাকতে হয় কংক্রিটের খাঁচায়। বড় জোর ছাদের কংক্রিটে গিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে। তার সীমানা আটকে গেছে সেখানেই। টেলিভিশন, কার্টুন, আর কম্পিউটার গেমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ শৈশবের আনন্দ। আমি আমার শৈশবের দিনগুলো খুব মিস করি।
.
মিস করি বেপারীপাড়ার বাড়িটাকেও। বাড়ির চারপাশ উন্মুক্ত ছিল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ। প্রথম কয়েক বছর সেই সৌন্দর্য নিয়েই আমাদের দিন কেটেছে। শহরের মধ্যে জানালা খুলে বিস্তৃর্ণ ধানক্ষেত দেখার সৌভাগ্য খুব বেশী মানুষের হয় না। মগজের ভিডিওতে সব রেকর্ড করা আছে। প্রযুক্তি কখনো সেই ভিডিওকে কনভার্ট করার সুযোগ দিলে দেখাবো কী অসাধারণ সব দৃশ্য রক্ষিত আছে করোটির ভেতরে।
.
স্মৃতিতে আটকে আছি আমি। কাহলিল জিবরান বলেছিলেন, Remembrance is a form of meeting. Forgetfulness is a form of freedom.
.
আমি মুক্তি পেতে চাই না। তাই আমি ভুলি না। আমার শহর নিয়ে একটা স্মৃতিকথা লিখবো। ততদিন যেন মগজগুলো অক্ষত থাকে।
.
এই শহর জানে আমার প্রথম সব কিছু.....................
No comments:
Post a Comment