Monday, October 22, 2012
মধ্যবিত্ত সংকট ভাবনা
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সংকটগুলো প্রায় একই। এরা একটা চক্রের মধ্যে আবদ্ধ থেকে যায় সারাজীবন। সেই একই ফর্ম, একই ফরমূলা। জীবনটা যেন একটা আগাম তৈরী করে রাখা টেমপ্লেট। নির্ধারিত ছকের বাইরে কেউ যেতে চায় না, কিংবা পারে না। কেউ কেউ, যারা এই আবর্ত ভেঙ্গে বেরিয়ে যেতে পারে, তারা জীবনের ভিন্নতার স্বাদ নিতে পারে। আমি নিজে কখনো কখনো ভেবেছি এই চক্র ভেঙ্গে বেরিয়ে পড়বো। পৃথিবী আমারে চায়.... রেখো না বেঁধে আমায়......।
না কেউ বেঁধে রাখেনি, ছাত্রজীবন শেষ হতে না হতেই নিজের শেকলে নিজেই আটকে পড়েছি। আর বেরুনো হয়নি চক্র ভেঙ্গে। জীবনের গতানুগতিক টেমপ্লেট ধরেই চলতে শুরু করেছি। একসময় আবিষ্কার করলাম আমি শেকল ছেড়ার স্বপ্ন ভুলে গিয়েছি। আমার আর কোন স্বপ্ন নেই। আমি সেই পুরোনো পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যে পথে আমার পূর্বপুরুষ গিয়েছে। এই পথে তারা জীবনের নানান সময়ে সংকটে পড়েছে। মধ্যবিত্ত সংকটের মধ্যে দুটো প্রধান সংকট পারিবারিক এবং আর্থিক। পারিবারিক সংকট হলো বন্ধনের টানাপোড়েন আর ভারসাম্যের ত্রিকোনোমিতি। আর্থিক সংকট হলো যৌবনে উদ্দাম সুদিন কাটিয়ে পড়ন্ত বয়সে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ। এই দুই সংকটের বাইরে আমি কোন মানুষকে যেতে দেখিনি।
আমি এখনো কোন সংকটের মুখোমুখি হইনি। কিন্তু আমি যে টেমপ্লেটের আওতায় আছি সেখান এই সংকটের আগমন অনিবার্য। আজ হোক কিংবা দশ বছর পর হোক। বেঁচে থাকলে সেই সংকটের মুখোমুখি হতেই হবে। তবু দুঃসাহস নিয়ে ভাবি, আগামী প্রজন্মকে এই সংকট থেকে মুক্ত করার জন্য কি করা উচিত? সেরকম কোন ক্ষমতা আমাকে দেয়া হয়েছে? এই সংকট থেকে বেরুতে হলে দেশ ছাড়তে হবে। দেশ বদল করতে হবে। কিন্তু দেশ বদল করার মতো মানসিক শক্তি এখনো গড়ে ওঠেনি আমার। সতীর্থদের কেউ কেউ বদল করেছে। তাদের দিগন্তরেখা পাল্টে গেছে। তারা কি এখন সুখী? এতদূর থেকে এত কঠিন প্রশ্ন করার কোন মানে হয় না। উত্তর কক্ষচ্যুত হতে পারে। আজকাল মধ্যবিত্ত জীবনের সংকটগুলো খুব বেশী ভাবাচ্ছে।
Thursday, October 18, 2012
এই শহর জানে........
.
শহরের কোথাও উন্মুক্ত ময়দান অবশিষ্ট নেই। স্কুলের মাঠগুলো বাদ দিলে বাকী সবগুলো জায়গায় দালানকোঠা উঠে গেছে। পরিবার নিয়ে কোথাও গিয়ে দম ফেলার একটা জায়গা নেই। কয়েকটা এন্টারটেইনমেন্ট পার্ক আছে তাতে প্রকৃতিকে যতটা সম্ভব বিসর্জন দিয়ে কংক্রিটের সাম্রাজ্য বানানো হয়েছে। সেগুলোও গিজগিজ করছে মানুষ। কোথাও গিয়ে শান্তি নেই। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শহরে একটা গাছপালায় ভরপুর সবুজ পার্ক থাকতে পারতো না?
.
আমাদের ছেলেবেলা কেটেছে আগ্রাবাদে। সিজিএস কলোনীর সবুজ মাঠে হেসে খেলে কেটেছে আমাদের শৈশবের আনন্দময় দিনগুলো। এত সুন্দর শৈশব খুব বেশী মানুষ পায় না। যে কোন শিশুর শৈশব এরকম একটা সবুজ কলোনীতে হওয়া উচিত। বুক ভরে শ্বাস নিতে পারবে তেমন একটা জায়গা। এ যুগের বাচ্চাদের বন্দী থাকতে হয় কংক্রিটের খাঁচায়। বড় জোর ছাদের কংক্রিটে গিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে। তার সীমানা আটকে গেছে সেখানেই। টেলিভিশন, কার্টুন, আর কম্পিউটার গেমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ শৈশবের আনন্দ। আমি আমার শৈশবের দিনগুলো খুব মিস করি।
.
মিস করি বেপারীপাড়ার বাড়িটাকেও। বাড়ির চারপাশ উন্মুক্ত ছিল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ। প্রথম কয়েক বছর সেই সৌন্দর্য নিয়েই আমাদের দিন কেটেছে। শহরের মধ্যে জানালা খুলে বিস্তৃর্ণ ধানক্ষেত দেখার সৌভাগ্য খুব বেশী মানুষের হয় না। মগজের ভিডিওতে সব রেকর্ড করা আছে। প্রযুক্তি কখনো সেই ভিডিওকে কনভার্ট করার সুযোগ দিলে দেখাবো কী অসাধারণ সব দৃশ্য রক্ষিত আছে করোটির ভেতরে।
.
স্মৃতিতে আটকে আছি আমি। কাহলিল জিবরান বলেছিলেন, Remembrance is a form of meeting. Forgetfulness is a form of freedom.
.
আমি মুক্তি পেতে চাই না। তাই আমি ভুলি না। আমার শহর নিয়ে একটা স্মৃতিকথা লিখবো। ততদিন যেন মগজগুলো অক্ষত থাকে।
.
এই শহর জানে আমার প্রথম সব কিছু.....................
Wednesday, October 17, 2012
সরি মিনিষ্টার, আমরা বরং ভেজাল খেয়েই বাঁচি
বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৪% এর মতো। কিন্তু ডাক্তারের চেম্বার বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে গেলে মনে হবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২০ শতাংশ বা তারো বেশী। পাঁচ বছর আগেও যেসব হাসপাতাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে বসার জায়গা পাওয়া যেত, এখন সেখানে দাঁড়াবার জায়গাও হয় না। যে ডাক্তারের কাছে দিনে ১০ জন রোগীও যেতো না, সেখানে এখন শতাধিক রোগী। রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রত্যেকটা ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং প্রত্যেকটা মোটামুটি মানের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এত রোগী হঠাৎ করে উদয় হলো কোত্থেকে? জনসংখ্যা বৃদ্ধির অনুপাতে তা বহুগুন বেশী। রাস্তাঘাটের জ্যামে যতগুলো গাড়ি দেখা যায়, তার বিরাট একটা অংশ ছোটাছুটি করছে হাসপাতাল ডাক্তার নিয়ে।
দেশের বিরাট সংখ্যক মানুষ কিডনী লিভার পাকস্থলী আর হৃদযন্ত্রের জটিল রোগে আক্রান্ত। প্রায় প্রত্যেকটা রোগের জন্য দায়ী কোন না কোন খাবার। মানুষ বাঁচার জন্য খায়, আর বাংলাদেশের মানুষ মরার জন্য খায়। খাদ্যে ভেজাল অনৈতিকতার সর্বোচ্চ স্থান স্পর্শ করেছে। খাদ্যে ভেজালের জন্য কিছু গৌণ শাস্তি জেল জরিমানা থাকলেও তা ভেজালকরণের উপর কোন প্রভাব বিস্তার করে না। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা কিছু বেশী আয়ের লোভে মানুষের জীবনের উপর আঘাত করছে। আবার এমন নয় যে ভেজালকারী নিজে মুক্ত থাকছে। মাছের ফরমালিন কারিগর, সবজিতে ফরমালিন খাচ্ছে, সবজির ফরমালিন কারিগর খাচ্ছে মাছে। এভাবে একে অপরকে ভেজালের আওতায় এনে দেশের সব মানুষকে ভয়াল রোগাক্রান্ত করে ফেলা হয়েছে।
ভেজাল না করলে একজন ব্যবসায়ীর কতো টাকা ক্ষতি হয়? মাছ ফল কিংবা সবজি বিক্রেতা ছোট আয়ের মানুষ। ভেজাল না দিলে কি তাদের সংসার চলবে না? এই ভেজাল কি প্রাণের দায়ে নাকি টাকার লোভে?
সরকারের এক মন্ত্রী বলেছেন ভেজালকারীর বিরুদ্ধে মামলা করুন। কথাটা শুনে রেগে না গিয়ে হেসে দিলাম, রেগে গেলে আমার মস্তিষ্কের রগ ছিড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকলেও মন্ত্রীর ইয়েও ছিড়বে না। তাই হেসে দিলাম। মাননীয় মন্ত্রী মহাশয়, আপনি কি ভেজাল খান না? আপনি ক'খানা মামলা করেছেন? দৈনিক ক'খানা মামলা করতে হবে আমাকে? আমি দৈনিক ১০ খানা ভেজাল খাই ১০ দোকান থেকে। বছরে কমসে কম ৩৫০০ মামলা করতে হবে আমাকে। একটা মামলা করে একজন মানুষ কতোবছর ঝুলে থাকে আপনার জানা আছে? আমার মামলার খরচ আর সময় যোগাবে আপনার সরকার?
সরি মি. মিনিষ্টার। আমরা বরং ভেজাল টেজাল খেয়ে যতদিন পারি ধুঁকে ধুঁকে বাঁচি। কোর্টকাচারিতে ধুঁকে ধুঁকে সর্বশান্ত হয়ে মরার চেয়ে বেছে বেছে ভেজালের মধ্য থেকে সহনীয় ভেজাল খুঁজে বেঁচে থাকি। শাহজাহানের ট্রাকের চাকা এড়িয়ে, কার্বাইড-ফরমালিনের বিষ পেরিয়ে, আততায়ীর ঘাতক বুলেট সরিয়ে, গামছা মলমপার্টির আদর মাড়িয়ে যতদিন পারি বেঁচে থাকতে চাই।