Sunday, June 24, 2012

এমন ঘন ঘোর বরিষায়, কোনো কাজ করিতে মন নাহি চায়

এমন দিনে-১
সারারাত ধরে বৃষ্টির গান। একই তালে, একই লয়ে। এতটুকু বিরক্তি আসে না। রাতের নিশ্ছিদ্র ঘুমের জন্য বর্ষা সঙ্গীতের চেয়ে ভালো কিছু নেই। বর্ষার গানে কিছু একটা আছে, কী যেন এক অপার্থিব সুর বাজতে বাজতে প্রবল ঘুম ডেকে আনে, চোখ মুদে আসে বালিশে মাথা রাখামাত্রই। ঘুমের অতলে ডুবে যেতে যেতেও সেই সুরের রেশ কাটে না।

গত রাত থেকে অবিরাম ঝরছে, ঝরেই যাচ্ছে ক্লান্তিহীন। ভোরের পাতলা আলোতে চোখ মেলেও সেই রিমিঝিমি সঙ্গীতের সুর কানে বাজে। চোখটা আধেক খুলে আবারো চাদর জড়িয়ে গুটিশুটি ঘুম। আলস্য ঋতু বরষা, এমন দিনে কে সাত সকালে বিছানা ছাড়তে চায়? ছেলে বুড়ো ছাত্র চাকুরে ব্যবসায়ী রিকশাওয়ালা ফেরীঅলা সবাই যার যার আবাসে জড়োসড়ো হয়ে শেষদফা ঘুমের রাজ্যে। দিন কাটবে আজ জানালার পাশে বসে, সর্ষে তেল মাখানো, চানাচুর মোড়ানো, ঝালমুড়ির তেজে। পাশে রাখা ধোঁয়া ওঠা চায়ের মগ।

এমন দিনে-২
তুমুল বৃষ্টিতে শহর ভেসে যাচ্ছে। রাস্তায় পানি জমে গেছে। প্যান্ট গুটিয়ে, জুতো হাতে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে দৌঁড়ে বন্ধ দোকানের ছায়ায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে আধভেজা। সাথে ছাতা নেই। রাস্তায় জনমানব নেই, যানবাহন নেই। সমস্ত শহর ঘুমিয়ে। অফিসে যেতে হচ্ছে। বাধ্যতামূলক যাত্রা। চাকরী নয় শাস্তি। গত রাত থেকে অঝোরে ঝরছে। রিকশা নেই। টেক্সী নেই। বাস নেই। সবাই ঘুমে। নগরে যেন আমিই একা জেগে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে। দোকানের ফুটো টিনের ছায়ায়। আধভেজা শরীরে শীত। সিগারেটের তৃষ্ণা। দোকানপাট বন্ধ। ধারে কাছে হোটেল নেই। একটা দুটো পর্দাঘেরা রিকশা যায়। ভেতরে ভাগ্যবান যাত্রী। কতদূর হাঁটলে একটা রিকশা মিলবে। কতোটা ভিজলে অফিসে পৌঁছানো যাবে।

আজকের কাজটা জরুরী? তেমন না, কিন্তু চাকরীটাই জরুরী। এটা বাঁচলে জীবনে অনেক বর্ষা মিলবে। হে কপাল, একটা রিকশা যোগাড় করো।


এমন দিনে-৩

টিনের চালে বৃষ্টি ঝরে। সবচেয়ে কাংখিত বৃষ্টির সুর, যে সঙ্গীত কোন রেকর্ড যন্ত্রে হুবহু ধারণ করা যায় না। ছবি দেখে কল্পনায় শুনে নিন সেই বর্ষা সঙ্গীত নস্টালজিয়ার সালাদ মাখিয়ে

যারা এই পোষ্ট পড়েছেন তাদের মধ্যে এমন কেউ আছে যিনি জীবনে একবারও মনে মনে দাবী করেননি - "তুমুল বর্ষন দিবসে অফিস, ক্লাস, পরীক্ষা সবকিছু ফাঁকি দেবার অধিকার চাই?"

No comments: