স্কুল পর্যায়ে বাংলাদেশে কত রকম শিক্ষাপদ্ধতি চালু আছে? আমার জানা মতে সাধারণ বাংলা স্কুল, সাধারণ মাদ্রাসা, কওমি মাদ্রাসা, সাধারণ কিন্ডারগার্টেন, গ্রামার স্কুল ইত্যাদি নানান রকম শিক্ষাপদ্ধতি বিদ্যমান। শিশুর প্রথম বিদ্যাপীঠ হিসেবে শ্রেণীভেদে এর মাঝ থেকে যে-কোনো একটাকে বেছে নিতে হয় অভিভাবককে।
স্কুল পছন্দ করতে গিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে আর্থিক কারণ ছাড়াও পছন্দ অপছন্দের বিভিন্ন কারণ কাজ করে থাকে। অনেকে ব্যাপক ভুল ধারণার দ্বারা পরিচালিত হয়। ইংরেজি-স্কুল-পছন্দ অভিভাবক চায় বাচ্চাকে দ্রুত ইংরেজিবিদ্যায় পারদর্শী করে তুলতে, যাতে সহজে তার লন্ডন-আমেরিকা গমন ঘটে। মাদ্রাসা-পছন্দ অভিভাবক চায় বাচ্চাকে বেহেশতের চাবি হিসেবে তৈরি করতে, যাতে বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে সে বেহেশত দর্শনে যেতে পারে।
ইত্যাকার কারণে আমাদের পুরো শিক্ষাব্যবস্থায় একটা তোগলকি অবস্থা বিরাজ করছে। একেক স্কুল একেক পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করছে পূর্ণ গণতান্ত্রিক সুযোগ নিয়ে। কিন্তু একটা দেশের মূল শিক্ষাব্যবস্থায় এতটা ‘গনতন্ত্র’ কি সহনীয়?
ইংরেজি শিক্ষার নামে ৪ বছর বয়সি একটা বাচ্চার হাতে ৫ কেজি ওজনের বই তুলে দেবার যুক্তিটা কী? ৪ বছরের একটা বাচ্চাকে বিদ্যাসাগর বানিয়ে ফেলার প্রচেষ্টা কতটুকু যুক্তিযুক্ত?
মাদ্রাসা শিক্ষায় ধর্মের নামে একটা বাচ্চা ছেলেকে পৃথিবী যাবতীয় জ্ঞান থেকে বঞ্চিত করার মানে কী?
শিক্ষাকেই জাতির মেরুদণ্ড বলা হয়। অথচ সেই মেরুদণ্ডের যত্নের জন্য যা যা করা দরকার তা কি করেছে আমাদের কোনো সরকার? এদেশে ইংরেজি বা আরবি স্কুলের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? বিদ্যমান সরকারি প্রাইমারি বিদ্যালয়গুলোকে কতকাল অবহেলিত ফেলে রাখা হবে? যে-অঙ্কের টাকা ইংরেজি বা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যয় করা হয় তা দিয়ে সাধারণ বাংলা স্কুলগুলোর মান উন্নয়ন করা যায় না কি? সাধারণ বাংলা স্কুলে পড়লে সন্তান মানুষ হবে না, এই কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসার উপায়ই-বা কী?
বাংলাদেশের মানুষের জন্য আসলে কী রকম শিক্ষাপদ্ধিত প্রয়োজন?
No comments:
Post a Comment