সজিব ভুঁইয়া: ১৮ এপ্রিল ২০২৫
চিৎ-তৌৎ-গং
২০২৫ সালের বইমেলায় আরেকটা চমৎকার সুপাঠ্য ইতিহাস নির্ভর বই হলো “ চিৎ- তৌৎ- গং ” অর্থাৎ চেনা চট্রগ্রামের অচেনা ইতিহাস। বইয়ের নামের মতই বিস্মিত হবেন, বইটি শেষ করার পর। কথা প্রকাশ এর স্টলে এই বই নিয়ে মেলায় নাড়াচাড়া করেছি দাম আর বইয়ের যে অবস্হা করেছে তাতে সাহস হলো না বইটা সংগ্রহ করি। বইয়ের ফ্রন্ট্র আর চারদিকে যে মার্জিন করার স্পেস রেখেছে যা চোখে পড়ার মত, এই ব্যাপারটা দেখা উচিত। এতে করে বই আরো ছোট পরিসরে, স্বল্প মূল্যে বইটি কেনা সম্ভব হতো। যাই হোক আপুর কল্যাণে বইটি পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে, কৃতজ্ঞতা।
চিৎ- তোৎ- গং একটি আরকান শব্দ যার অর্থ আর যুদ্ধ নয়। চট্রগ্রামের ইতিহাস এতো পুরানো যে এর নাম বিশ্বব্যাপী ছিল এবং গুরত্বের জায়গা হিসাবে বেশ পরিচিত ছিল।আপনি যতই পড়বেন ততোই পুলকিত হবেন শুধু চট্টগ্রাম ভিতর নয়, এই বইতে আপনি চট্টগ্রামসহ সাথে দেশের বাহিরে বিভিন্ন স্হানে পরিভ্রমণ করে আসবেন। বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে মূলত চিৎ-তৌৎ-গং বইটি লেখা হয়েছে।ছোট ছোট বেশ কয়েকটা অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে চট্টগ্রামের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা নানা ইতিহাস। এমন সব ঘটনা বর্ণনা দেওয়া আছে, আপনি হতভম্ব হবেন। আমরা অনেকেই ধারণা করি এই চিটাগং নিয়ে হয়তো ইদানিং সমস্যা হচ্ছে, তা কিন্তু নয় ব্যাপারটা পূর্বে থেকে ঘটছে। কখনও রাঙামাটি গেলে দেখবে রাজবাড়ী সামনে ফতে খাঁ কামান রাখা, এটা চাকমাদের এক রাজা নাম ছিল! কি অবাক হচ্ছে, চাকমাদের নামের সাথে তাহলে ভিন্নতা কেন! চিটাগং ইতিহাসের সাথে চাকমারা ভাল ভাবেই জড়িত আছে। এই যে আরাকান রোহিঙ্গা ইস্যু এটাও নতুন কিছু নয়। তারা পূর্বেও বার্মিজদের অত্যাচারে চিটাগং সীমান্তে অবস্হান করেছিল।
আরে রহস্যময় ঘটনা ঘটে চট্টগ্রাম শহর থেকে ১৭ টি কামান চুরি, অথচ কেউ কিছু যেন ও জানে না! এই কামান পরবর্তী পলাতক আরাকান রাজা খিয়েবিয়েনেদর অধীনে যুদ্ধ হয় সে এক উদ্ভট কাহিনী। এই প্রভাব পড়ে শুধু চট্টগ্রাম শহরে পড়েনি বরং পাল্টাপাল্টি ফাইটিং হ। এর সাথে ভাল ভাবে জড়িয়ে পড়ে এক ইংরেজ এর নাম। যার নাম হিরাম বক্স, যার নামে মূলত কক্সবাজার জেলার নামকরণ করা হয়েছে।
'মুন্নি বেগম' ঘটনা শুনে নস্টালজিয়া হয়ে পড়েছি। মুন্নী বেগম কোন মহিলার নাম হয়, এটা চট্টগ্রামের এক বিখ্যাত গন্ডারের নাম।
যার অবস্হান ছিল রামুর জঙ্গলে কিন্তু তাদের শেষ গন্তব্য হয়েছিল লন্ডনের চিড়িয়াখানায়। এত দীর্ঘ পথ কিভাবে পাড়ি দিল সেটাও ইতিহাস রয়েছে। এইভাবে হারিয়ে গেল প্রাচীন গন্ডার এক জাতের!
এই রামু জঙ্গল নিয়ে বেশ স্মৃতি রয়েছে যেখানে হাতিও জড়িত আছে। রামু এই জঙ্গল থেকে সেনানিবাস তৈরী হয় যা একদম শুরু থেকে দেখেছি নিজেও কাজ করেছি সে কষ্টে দিন কথা নাই বলি। তবে হাতি, সাপ ও শুকুর এর সাথে প্রায় সময় মোলাকাত হতো। এক রাতে তিন হাতির কবলে পড়েছিলাম ঐ রাতটা ভয়ংকর ছিল! তবে মজার কিছু আম কুড়িয়ে খেয়েছিলাম, হাতি আসলে যখন স্টিল এর পেট কলসি বাজানো হত। এতে হাতি রেগে রাস্তা বদল করল চলে যেত।আর যাওয়ার সময় রাগে বহি প্রকাশ ঘটতো, আম গাছের উপর। হাতি ঝাক্কিতে আম পড়তো!
চট্রগ্রাম চা জন্য বিশ্ব বিখ্যাত, তবে এর গুড়ার ইতিহাস কি! আরো অবাক হবেন চা এর পাশাপাশি এখানে কফির চাষ হয়েছিলো! আর এই চায়ের উপর বৃত্তি করে এসেছি রেললাইন। আবার এই রেললাইন বাস্তবায়ন করে এক বাঙালির যার অবদান ছিল ব্যাপক, এই যে পাহাড় দেখতে চট্টগ্রাম যাওয়া।এই রেললাইনের পিছনেও ইতিহাস আসে! শুধু মাত্র চা নয় শক্তিমান সব জাহাজ নির্মাণ হতো চট্রগ্রামে। এই যে কোম্পানি নামে যে শাসকরা রাজত্ব করতো, সবাই কিন্তুু তা কার্যকাল মেনে নিতো না। তাই সবাই একত্রে রামদোলাই দিয়েছিল
যার পিছনেও কারণ ছিলো এক চাটগাঁইয়া যুবক আর বিদেশি নারীর। যাদের বন্ধুত্বের বন্ধন পাঠকেও মুগ্ধ করবে। মনে হবে চমৎকার কোন ডকু ফিকশন পড়ছি। ভিলেজ অব চিটাগং এই অধ্যায়টি বইয়ের সব থেলে চমকপ্রদ অধ্যায়।
রবীন্দ্রনাথের চট্টগ্রাম সফর, ইবনে বতুতা কিংবা ফ্রাঁসোয়া পাইরার্ডের চোখে দেখা চট্টগ্রাম , বারো আউলিয়ার শহর চট্রগ্রাম কিন্তুু কেন! কারণ অধীনে এই শাসক এখানে উপস্থিত হয়েছিল যাকে এখানকার অভিকাবক বলা হতো। এমন কি বার্মার রাজারা তাকে সম্মানের চোখে দেখতো!! কে সে...
লেখক Haroon Rashid যে ইতিহাস নিয়ে প্রচুর পড়াশুনা করেছেন এবং ওনার পরিশ্রম বইতে স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে। কতটা সহজ ভাবে তিনি উপস্থাপন করেছে জটিল শব্দচয়ন ব্যবহার না করে যা সত্যিকার অর্থে প্রশংসনীয় । কিছু কিছু অনুবাদব্ চোখে লেগেছে, তিনি চাইলে নিজের মত উপস্থাপন করতে পারতো। কিছু কিছু ব্যাপার রিপিট আসে বিরক্ত লেগেছো, আবার কিছু ব্যাপার এই বইতে না আনলেও চলতো।
আমি চট্টগ্রামের মানুষ নয় তবুও এই শহর আমার সেকেন্ড প্রিয় শহর। চট্টগ্রাম শহর জানা জন্য এই বইটি পুরোপুরি উপযুক্ত নয় তবে প্রাচীন সব ইতিহাস জানার জন্য বেশ সহায়ক হবে। তবে এই শহর যে সে প্রাচীনকাল থেকে তার আলাদা ঐতিহ্য বহন করছে সেটা পাঠক হারে হারে বুঝবে। লেখকের থাংলিয়ানা 'পড়ে মূলত এই বইয়ের প্রতি আগ্রহ, একদম নিরাশ করে নাই বরং বেশ উপভোগ্য ছিল
তবে শুরুতে বইয়ের জোচ্চুরি ব্যাপারটা বাদ দিলে এই সাথে চমৎকার সময় কাটবে।বাঁধাকরণ ও প্রোডাকশন ভাল। প্রচ্ছদ দারুণ প্রাচীন একটা ভাইব তুলে ধরেছে।
পরিশেষে এই বলবো যে , এই বইটা দারুণ, নিরাশ করবে না! হ্যাপি রিডিং।
তাহজিবা আদৃতা: ১৮ এপ্রিল ২০২৫(Goodreads)
'স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি'
নাহিন- ১৮ মার্চ ২০২৫(Goodreads)
'স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি'
শিরোনামের লেখাটি, The Scandal of the Century, একটি সত্য ঘটনার অনুসন্ধানী রিপোর্ট, যা পড়তে গিয়ে এক মুহূর্তের জন্যও মনে হবে না যে, এটি কোনো পত্রিকার সাধারণ প্রতিবেদন। বরং এটি যেন টানটান উত্তেজনায় ভরা একটি থ্রিলার, যেখানে প্রতিটি মোড় নতুন রহস্য উন্মোচন করে। এর সমাপ্তিও তেমনই শক্তিশালী—একবার পড়া শেষ করার পরও এর রেশ দীর্ঘক্ষণ মনে গেঁথে থাকবে।
বইটিতে শুধু ক্রাইম রিপোর্টিং-ই নয়, রয়েছে ব্যঙ্গাত্মক প্রবন্ধ, নোবেল কমিটিকে নিয়ে রসিকতা, কিংবা নিছক স্মৃতিচারণ। কখনো এটি আপনাকে হাসাবে, কখনো চমকে দেবে, আবার কখনো বিষণ্ণ করে তুলবে। সব মিলিয়ে, এটি এমন এক বই, যা শুধু তথ্য দেয় না, বরং অনুভূতিগুলো নাড়িয়ে দেয়।
আর বেশি কিছু বলার দরকার নেই— নির্দ্বিধায় পড়ে ফেলুন। কারণ, এই বইটি সময় নষ্ট করবে না। বরং ভাবাবে, আবিষ্ট করবে, এবং বারবার মনে করিয়ে দেবে, কেন মার্কেজ শুধু উপন্যাসের জাদুকর নন, একজন অসাধারণ গল্প-বলিয়ে সাংবাদিকও।
আর হ্যাঁ, অনুবাদ দারুণ ছিল। ভাষা সহজ, সাবলীল।
===============================
চিৎ-তৌৎ-গং : দিপু চন্দ্র দেব
১১ মার্চ ২০২৫
..................................................
বাণিজ্যবন্দর চট্টগ্রামের ইতিহাস অনেক পুরনো। এটি বাংলাদেশের একমাত্র বন্দর যেটি বহির্বিশ্বে সেই প্রাচীনকাল থেকে নিজ যোগ্যতায় পরিচিতি পেয়ে এসেছে। হারুন রশীদ-এর “চিৎ-তৌৎ-গং: চেনা চট্টগ্রামের অচেনা ইতিহাস” বইটি আমাদেরকে এই নগর ও বাণিজ্যবন্দর সম্পর্কিত এমনসব ঘটনার কথা বলছে যেগুলো এর সম্পর্কে ধারণাকে নতুন মাত্রা দিতে পারে। উল্লেখ্য, তিনি “উপনিবেশ চট্টগ্রাম” বইয়ের রচয়িতা ও এক ব্রিটিশ ক্যাপ্টেনের পার্বত্য চট্টগ্রাম অভিযান নিয়ে “থাংলিয়ানা” বইয়ের অনুবাদক। বন্দরনগরীর ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে তার জানাশোনার পরিধি ব্যাপক।
ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের কাছ থেকে আমরা জানতে পাই কফি নিয়ে অসন্তোষেও বিদেশি সরকার হটানোর সফল এক যুদ্ধ হয়েছিল ইউরোপের এক দেশে। সেখানে কামান তো কফির চেয়ে মর্যাদায় বড়, যুদ্ধ হওয়ারই কথা। কিন্তু এটি বিশেষ এই কারণে যে, যুদ্ধের অনুঘটক কামানগুলো বাংলাদেশের এক নগরে অবস্থিত ছিল।
প্রত্নতাত্ত্বিক খননের পর যেসব টুকরোটুকরো বস্তু উঠে আসে, সেগুলোর আলাদা কোনো মূল্য নেই, সমগ্রের অংশ হওয়া ছাড়া। তারা যখনই একটি সভ্যতার সাথে মেশে তখনই অর্থবহ হয়ে ওঠে। সেরকমই একটি নগরের সাথে সম্পর্কিত টুকরো-টুকরো ঘটনা এর মূল্যায়নে পরিবর্তন নিয়ে আসে, চট্টগ্রামের সেরকমই সব ঘটনা নিয়ে বইটি অবয়ব পেয়েছে। ভূমিকা অংশে তিনি জানাচ্ছেন, এই নগরের ইতিহাস দুইহাজার বছরের, কারণ এর প্রথম লিখিত উল্লেখ পাওয়া যায় এক গ্রীক নাবিকের বই “পেরিপ্লাস অব ইরিথ্রিয়ান সি”তে। যেমন আজ থেকে চারশ বছর আগে নগরটির একটি নৌবহর মালদ্বীপ আক্রমন করে এর রাজাকে হত্যা করেছিল, আর রাণী হয়েছিলেন বাঙালী এক নারী, যার কথা লিখেছিলেন ফরাশি নাবিক “ফ্রাঁসোয়া পাইরার্ড”। রবীন্দ্রনাথের বন্ধু কেদারনাথের কথাও এসেছে, যিনি চট্টগ্রামের ছিলেন।
আবার এই অঞ্চলে ১৮১১ সালে বৃটিশদের কারখানা থেকে ১৭টি কামান চুরির ঘটনা নিয়ে কীভাবে বিখ্যাত ইঙ্গ-বার্মা যুদ্ধ হয়েছিল তারও বিশদ বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন তিনি।
ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের কাছ থেকে আমরা জানতে পাই কফি নিয়ে অসন্তোষেও বিদেশি সরকার হটানোর সফল এক যুদ্ধ হয়েছিল ইউরোপের এক দেশে। সেখানে কামান তো কফির চেয়ে মর্যাদায় বড়, যুদ্ধ হওয়ারই কথা। কিন্তু এটি বিশেষ এই কারণে যে, যুদ্ধের অনুঘটক কামানগুলো বাংলাদেশের এক নগরে অবস্থিত ছিল।
চীনের সাথে ব্রিটিশদের “আফিম যুদ্ধ”-এর ফলে চায়ের প্রথম বাগান তৈরি হয়েছিল আসামে—সিলেট যার অংশ ছিল—তাও স্থানীয় জঙ্গল থেকে প্রাপ্ত চা গাছ নিয়ে। বইটিতে আমরা জানতে পারছি বাংলাদেশের প্রথম চা ও কফির বাণিজ্যিক বাগান গড়ে উঠেছিল চট্টগ্রামে, এটা এক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বৈকি।
এরকম অসংখ্য অশ্রুত ইতিহাসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তবে চিত্তাকর্ষক ঘটনার বিবরণ তুলে এনেছেন লেখক। শ্রমসাপেক্ষ গবেষণার দেখা পাই আমরা বইটিতে।
অচেনা ইতিহাস জানার পরিধিতে এলে ইতিহাসের অংশ হয়, বইটি চট্টগ্রামের গৌরবে আরো নতুন নতুন পালকের যোগান দেবে এরকমই প্রতীতি জাগিয়েছ।
“ ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অব সলিচ্যুড বা নিঃসঙ্গতা একশ বছর ” উপন্যাসের জন্য নোবেল বিজয়ী লেখক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ বেশ পরিচিত। লেখকের বাহিরেও তিনি আরেকটা পরিচয়ে বেশ পরিচিত-
“ আমি মানুষের স্মৃতিতে বেঁচে থাকতে চাই সাংবাদিক হিসেবেই, ওয়ান হ্যান্ড্রেড ইয়ারস অব সলিচ্যুড কিংবা নোবেল পুরস্কারের মাধ্যমে নয় ”
মার্কেজ সাংবাদিক হবার আগে দুটা গল্প লিখেও, সাংবাদিক হবার পর পুরোদমে লেখালেখি বা সাহিত্য মনোযোগী হন। ১৯৫৫ সালে উইলমা মনটেসি নামে একুশ বয়সী তরুনীর রহস্যময় মৃত্যু হয়। ঘটনার তদন্ত করার সময়ে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেড়িয়ে আসে। প্রভাবশালী মন্তীপুত্র এবং উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে ঘটনা দামাচাপা দেওয়া চেষ্টা করে। সেই বিষয় মার্কেজের দীঘ অনুসন্ধানী রিপোর্ট লিখেছিলেন যা “ স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি ” শিরোনামে প্রকাশিত হয়। সে রিপোর্ট যে কোনও থ্রিলার গল্পের সাথে তুলনীয়। তার সাহিত্যিক হয়ে ওঠার পথে এই রিপোর্টটিকে গুরত্বপূর্ণ একটি মাইফলক হিসবে দেখা হয়। তার মৃত্যু কয়েক বছর পর এই রিপোর্ট সহ তার লেখা ৫০টি বৈচিত্র্যময় কলামের একটা সংকলন প্রকাশিত হয় যা “ The Scandal of the century: and other writings ” শিরোনামে প্রকাশিত হয়। সেখান থেকে নির্বাচিত ১২ টি লেখার অনুবাদ নিয়ে এই গ্রন্থের পরিকল্পনা।
লেখক Haroon Rashid এর অনুবাদ এতোটাই ঝরঝরে যে পড়তে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছি। সহজগম্য করে অনুবাদ করেছে বেশ উপভোগ করলে তৃপ্তি মেটে নাই মনে হয় পুরো ৫০ টা কলাম কেনও অনুবাদ হলো না!!
বইতে উঠে এসেছে মার্কেজ বিভিন্ন দর্শন, জাদুবাস্তবতা, রাজনৈতিক প্রঙ্গাবিষয়ক চিন্তা, বিভিন্ন বিষয়ে রসবোধ। যেখানে নোবেল পুরস্কার ভূত এই শিরোনামে কলামে নোবলে পুরস্কার নিয়ে বেশ সমলোচনা করলেও কাকতালীয় ভাবে তিনি পরে বছরই নোবেল বিজয়ী হন। সে সাথে লেখক হবার দুর্গতি শিরোনামে লেখক দের দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথা বলেছেন। তাছাড়া অনুবাদক, সাহিত্য বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেম। যেখানে ওনার প্রিয় লেখক হেমিংওয়ে থেকে শুরু করে ফিদেল ক্যাস্ট্রো সমর্পক বলা আছে,প্যারিস ও মেক্সিকোর জীবন এবং এ্যারোপ্লেনের ঘুমন্ত সুন্দরী থেকে শুরু ব্যক্তিগত অনেক ঘটনা উঠে আসে। মার্কেজের ব্যক্তিগত জীবনে বেশ হাসিখুশি ধরনের মানুষ ছিল যে কারণে কলাম গুলা সে রকম হাস্যরোদ্ধ বা মজাদার ভাবে লিখেছে বেশ উপভোগ করেছি। তবে অনেক বিষয় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে!!
“স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি ” শিরোনামের কলাম ব্যতীত বলা যায় পুরো কলামগুলা নন-ফিকশনের আদলে লেখা তবে বেশ উপভোগ্য। নন-ফিকশন পড়তে যারা পছন্দ করেন, তারা দেখতে পারেন, আশা করি ভাল লাগবে।
চন্দ্রবিন্দুর বই চয়েজ দারুণ। এই বইয়ের প্রোডাকশন বেশ নড়বড়ে লেগেছে, মার্কেজ এর সাদাকালো ছবি তে প্রচ্ছদে আলাদা ভিন্টেজ একটা ভাইব এসেছে। খুব খেয়াল না করলে মার্কেজ এর ছবি চোখে পড়ে না। আমার বেশ ভাল লেগেছে। বানান ভুল চোখে পড়ে নাই তবে অভিযোগ একটাই পুরো বই পড়তে পাড়লে তৃপ্তি পেতাম। এই বইয়ের দাম তুলনামূলক বেশি মনে হয়েছে কারণ ১৫০ পৃষ্ঠা বইয়ের মলাট মূল্য ৪০০ টাকা আসেলই বেশি।
পরিশেষে এই বলবো, হারুন রশীদ ভাইয়ার বই চয়েজ দারুণ। থাংলিয়ানার মত, এই বই পড়েও মুগ্ধ হয়েছি অনুবাদের কারসাজি তে চমৎকার রুপান্তর হয়েছে। লেখকের নতুন বই
“ চিৎ- তৌৎ- গং ” সংগ্রহে নাই তবে পড়ার জন্য মুখিয়ে আছি। হ্যাপি রিডিং..
→বইয়ের নামঃ স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি
*****************
গবেষণালব্ধ বইয়ের লেখকদের আমি বেশ ঈর্ষা করি। কারণ শতাধিক নিবন্ধ লেখার পরও আমার নিকট গবেষণালব্ধ একটি বই প্রকাশ করা আজও খুব কষ্টের কাজ বলে মনে হয়। প্রথমতঃ বইয়ের মেরিট বিবেচনায় প্রকাশক না পাওয়া। দ্বিতীয়তঃ একটা বইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পুষ্টি (এ+বি+সি+ডি+বি কমপ্লেক্স+কে)-র যোগান না থাকলে সেটিকে পূর্ণাঙ্গ বইরূপে প্রকাশ করা অবিবেচনাপ্রসূত। যে কারণে লেখক জীবন প্রায় ৩০ বছরের বেশী হলেও অদ্যাবধি বহু সাধনায় প্রাণপন প্রচেষ্টায় আমার প্রকাশিত বইয়ের পরিমাণ মাত্র একটি, তাও মাত্র ৬৪ পৃষ্ঠা। সেকারণে কারো গবেষণালব্ধ বইয়ের পরিমাণ যদি একাধিক হয়, তবে তাকে সমীহ না করে পারা যায় না।
Haroon Rashid ভাইকে পেয়েছি ফেসবুকের খনি থেকে। ওনার মতো আরও অনেক গুণী মানুষের (ছড়াকার, কথা-সাহিত্যিক, কবি, রম্য লেখক...) সন্ধান পেয়েছি এই ফেসবুকেই। ভদ্রলোকের সাথে কখনো দেখা হয়নি, কথা হয়নি। উনি আমাকে বই কিনতে অনুরোধও করেননি। তারপরও নিজ তাগিদেই ‘থাংলিয়ানা’ ও ‘চিৎ-তৌৎ-গং চেনা চট্টগ্রামের অচেনা ইতিহাস’ বই দুটি কিনলাম। সক্ষমতা থাকলে ছয়টা বইই কিনে ফেলতাম। কবি, ছড়াকার, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার ও গবেষক আমরা প্রত্যেকেই স্ব-স্ব ক্ষেত্রের বই চিনতে ভুল হওয়ার কথা নয়। বইটি সম্পর্কে না জেনেও অবলীলায় তাই কেনা যায় বই, যদি তেমন বই হয়। এবার মেলা থেকে বেশ কিছু বই কিনেছি। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সহপাঠী-সহপাঠিনী বই বের করেছে। পাড়া-প্রতিবেশী, স্বজন এবং কর্মস্থল সংশ্লিষ্ট অনেক সিনিয়র-জুনিয়রের বই বেরিয়েছে এই মেলায়। পরিচিত অধিকাংশের বই-ই সংগ্রহ করেছি। তবে সবার আগে এই বই দুটি আমাকে আকৃষ্ট করেছে। কারণ গবেষণার ক্ষেত্রে যে ধরনটা আমার ব্যক্তিগত পছন্দের তালিকার শীর্ষে Haroon Rashid ভাইয়ের ছয়টি বইই সেই তালিকার। আমার মুখ পুস্তিকার তালিকার একটা বড় অংশ গবেষক শ্রেণির। আশা করছি, তাদের জন্যও এই পোস্টটি অনুপ্রেরণামূলক। Haroon Rashid ভাইয়ের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি, যাতে তিনি আমাদের গবেষণালব্ধ আরও নতুন নতুন বই উপহার দিতে পারেন।
*********

বাংলা ভাষায় সুলিখিত ইতিহাসের 'গল্প' লেখক খুব কমই আছেন। ইতিহাসের মত সিরিয়াস বিষয়কে 'গল্প' হিসেবে উল্লেখ করায় ইতিহাস নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞজনেরা হয়তো আমার উপর ক্ষুব্ধও হতে পারেন। তবে আমার কাছে ইতিহাসকে গল্প বলেই মনে হয়- অতীতের গল্প। ইতিহাসকে সাল তারিখের জটিল তথ্য সমাহারের ভীড় ঠেলে মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করতে হলে তার মধ্যে গল্প থাকা চাই। বাংলা ভাষায় প্রচুর ইতিহাস নিয়ে বিভিন্ন বইপত্র থাকলেও ইতিহাসের গল্প পাঠের সুযোগ আমাদের সীমিতই বলা চলে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জনাব হারুন রশীদ ব্যক্তিগত ভাবে আমার এই অভাবের জায়গাটা পূরণ করেছেন। গত বছর 'নিষিদ্ধ তিব্বতে প্রথম বাঙালি' এবং 'থাঙলিয়ানা' বই দুটো পড়ে তাই আমার এক ধরণের আবিষ্কারের আনন্দ হলো- নতুন গল্প আবিষ্কারের আনন্দ! তাই এ বছর লেখকের 'চিৎ তৌৎ গং' বইটি দেখে পাতা না উল্টিয়েই কিনে ফেললাম। কাঠখোট্টা ইতিহাসের বই হলে হয়তো অনেক সময় নিয়ে পড়তাম (যেমন নীহাররঞ্জন রায়ের 'বাঙ্গালির ইতিহাস' বইটা সাত বছরেও পড়ে শেষ করা হয়নি!) কিন্তু যেহেতু বইটা ইতিহাসের গল্পের, তাই গল্প পাঠের স্বাভাবিক গতিতে বইটা দ্রুত পড়ে শেষ করে ফেলা গেলো।
বইটি আক্ষরিক অর্থেই ইতিহাসের বিভিন্ন গল্প নিয়ে এবং নাম দেখেই অনুমেয় যে গল্প গুলো চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক। জনৈক ফরাসি নাবিক ফ্রাঁসোয়া পাইয়ার্ডের বরাত দিয়ে আমরা চলে যাই ১৬ শতকের চট্টগ্রামে। ঘটনাক্রমে (কিভাবে তিনি মালদ্বীপ থেকে চট্টগ্রামে এলেন সেটা জানার জন্য বইটা পড়তে হবে) চট্টগ্রামে আসা এক ভীনদেশী নাবিক কিভাবে দেখেছেন এ অঞ্চলের মানুষকে? আমি নেগেটিভ জিনিস নিয়ে সব সময় ফোকাসড থাকি (এটা আমার দুর্বলতা বটে) তাই কয়েকটা লাইন তুলে ধরার লোভ সামলাতে পারছিনা। কি বলছেন তিনি আমাদের নিয়ে-
" তাদের নারী পুরুষ উভয়ই ধূর্ত প্রকৃতির হয়ে থাকে। এখানকার পুরুষরা সুঠামদেহী এবং নারীরা বেশ সুন্দরী। তবে ভারতের অন্য যে-কোনো জায়গার তুলনায় এরা নির্লজ্জ। পুরুষেরা ব্যবসা বাণিজ্যের কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকে, যুদ্ধ কিংবা অস্ত্রবিদ্যায় এরা পারদর্শী নয়। এরা দুর্বল, ভদ্র, চালাক। তবে চরম মাত্রার প্রতারক, চোর এবং মিথ্যাবাদী।"
এতো গেলো পাইয়ার্ড মিয়ার গল্প। এই বই থেকে পরিচিত হলাম আরাকান বিদ্রোহী খিয়েনবিয়েনের সাথেও। জানা গেলো চা এর আগে কিভাবে কফির উৎপাদন শুরু হয়েছিল। পরিচিত হলাম 'মুন্নী বেগম' এর সাথে। মুন্নী বেগম আদতে এক প্রজাতির গণ্ডার, চট্টগ্রামে ধরা পরে যার শেষ গন্তব্য হয়েছিল লন্ডনের চিড়িয়াখানায়। তবে সব থেকে ভালো লেগেছে বইয়ের 'আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে- বাঁকবদলের ঐতিহাসিক স্মৃতি' অধ্যায়টি পড়ে।
বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য কবি নবীনচন্দ্র সেন ছিলেন ফেনীর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। তাঁর ইচ্ছা আর দৃঢ়তায় কিভাবে কুমিল্লা-চট্টগ্রামের মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপিত হয়েছিল সেই গল্প পড়ে অব্যক্ত এক ধরণের ভালো লাগা কাজ করলো। নিজে একজন সরকারি কর্মচারী বলেই হয়তো, একজন সরকারি কর্মচারী চাইলে কিভাবে একটি জনপদের উন্নতিতে আকাশ-পাতাল পার্থক্য গড়ে দিতে পারে সেটার উদাহরণ দেখে আমোদিত হলাম! উল্লেখ্য, আমার বর্তমান কর্মস্থল 'ডামুড্যা' নাম করণের পিছনেও নবীনচন্দ্র সেন মহোদয়ের ভূমিকা রয়েছে!
পরিশিষ্ট সহ এই বইটিতে মোট ১৬ টি অধ্যায় আছে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক বিভিন্ন ইতিহাসের গল্প নিয়ে। যারা গল্প পড়তে ভালোবাসেন, যারা ইতিহাস পড়তে ভালোবাসেন এবং যারা চট্টগ্রামকে আলাদা করে ভালোবাসেন- তাদের জন্য বইটি খুবই চমৎকার একটি উপহার হতে পারে। বইটি প্রকাশিত হয়েছে 'কথা প্রকাশ' থেকে, মুদ্রিত মূল্য ৬০০ টাকা।
বইটি নিয়ে, এর গল্প গুলো নিয়ে আরো কিছু লিখতে পারলে ভালো লাগতো। তবে আমার মনে হয় আমার বয়ানে না শুনে নিজেরা পড়ে নিতে পারলে সব থেকে ভালো হবে। পরিশেষে জনাব Haroon Rashid কে ধন্যবাদ এভাবে একের পর এক গল্প বলে যাওয়ার জন্য। সামনের দিন গুলোতে লেখকের আরো গল্পপাঠের প্রত্যাশায় রইলাম।
*********

"একটি উদাসীন দিনের তপ্ত নবজাত দুপুরের মধ্য প্রহরে ক্ষমতা শূন্য সিংহাসনে বসে ২০শ শতাব্দীর অন্যতম ক্ষমতাবান লেখকের সম্পর্কে জানতে গিয়ে দেখলাম ভাবনাহীন নিপুণ শিল্পছায়ার শূন্য কারুকাজের মতন তার জীবন। যার লেখনী ধাতুর শহরকেও শুকনো কাগজের মতো ভঙ্গুর করে দেয়। মনে হতে থাকে প্রাণের উত্তাপে তৃষ্ণার্ত হয়ে ডুবে যাওয়া শব গুলোও শূন্য শহরের রাতগুলোতে তার লেখা পড়ে পুনরায় প্রাণ ফিরে পায়।
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি’ একটি প্রবন্ধ সংকলন, যা ক্রিস্টোবাল পেরা-মার্কেজের সাংবাদিকতা জীবনের ১৯৫০-৮৪ সালের ভেতর লেখা নিবন্ধ ও কলামের মধ্যে থেকে মোট ৫০টি প্রবন্ধ নিয়ে তৈরি করেছেন। যেখানে মার্কেজের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা থেকে শুরু করে সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা অন্তর্ভুক্ত। আর সেখান থেকে ১১/১২ টার অনুবাদ নিয়ে এই বই।
গ্রন্থটির শিরোনাম প্রবন্ধ ‘স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি’ ১৯৫৫ সালে ‘এল এসপেকটেডর’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। এতে তিনি উইলমা মনটেসি নামের এক তরুণীর রহস্যময় মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে গভীর অনুসন্ধানী রিপোর্ট উপস্থাপন করেন, যা যে কোনো থ্রিলার গল্পের মতোই চমকপ্রদ এবং বহুস্তরবিশিষ্ট। এই প্রবন্ধকে মার্কেজের সাংবাদিকতা জীবন থেকে সাহিত্যিক জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।
বইয়ের অন্যান্য প্রবন্ধে মার্কেজের রসবোধ, অন্তর্দৃষ্টি এবং সাহিত্যিক দক্ষতা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি নোবেল পুরস্কার ভূত, অনুবাদ সাহিত্য, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, মেক্সিকো, প্লেনের ঘুমন্ত সুন্দরী এবং নিজের লেখা নিয়ে অকপট ও সহজ ভাষায় আলোচনা করেছেন। এই লেখাগুলো পাঠকদেরকে মার্কেজের চিন্তাধারা ও দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে নতুনভাবে পরিচয় করায়। আর লেখকের অনুবাদও একদম ঝরঝরে। পড়েও আনন্দ পাওয়া যায়। মাস্ট রিড বলব আমি যারা মার্কেজ সম্পর্কে আরো জানতে চান তাদের জন্য।"
....................................
[লেখা ও ছবি: নিহাব ]
১১ মার্চ ২০২৫
..................................................
বাণিজ্যবন্দর চট্টগ্রামের ইতিহাস অনেক পুরনো। এটি বাংলাদেশের একমাত্র বন্দর যেটি বহির্বিশ্বে সেই প্রাচীনকাল থেকে নিজ যোগ্যতায় পরিচিতি পেয়ে এসেছে। হারুন রশীদ-এর “চিৎ-তৌৎ-গং: চেনা চট্টগ্রামের অচেনা ইতিহাস” বইটি আমাদেরকে এই নগর ও বাণিজ্যবন্দর সম্পর্কিত এমনসব ঘটনার কথা বলছে যেগুলো এর সম্পর্কে ধারণাকে নতুন মাত্রা দিতে পারে। উল্লেখ্য, তিনি “উপনিবেশ চট্টগ্রাম” বইয়ের রচয়িতা ও এক ব্রিটিশ ক্যাপ্টেনের পার্বত্য চট্টগ্রাম অভিযান নিয়ে “থাংলিয়ানা” বইয়ের অনুবাদক। বন্দরনগরীর ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে তার জানাশোনার পরিধি ব্যাপক।
ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের কাছ থেকে আমরা জানতে পাই কফি নিয়ে অসন্তোষেও বিদেশি সরকার হটানোর সফল এক যুদ্ধ হয়েছিল ইউরোপের এক দেশে। সেখানে কামান তো কফির চেয়ে মর্যাদায় বড়, যুদ্ধ হওয়ারই কথা। কিন্তু এটি বিশেষ এই কারণে যে, যুদ্ধের অনুঘটক কামানগুলো বাংলাদেশের এক নগরে অবস্থিত ছিল।
প্রত্নতাত্ত্বিক খননের পর যেসব টুকরোটুকরো বস্তু উঠে আসে, সেগুলোর আলাদা কোনো মূল্য নেই, সমগ্রের অংশ হওয়া ছাড়া। তারা যখনই একটি সভ্যতার সাথে মেশে তখনই অর্থবহ হয়ে ওঠে। সেরকমই একটি নগরের সাথে সম্পর্কিত টুকরো-টুকরো ঘটনা এর মূল্যায়নে পরিবর্তন নিয়ে আসে, চট্টগ্রামের সেরকমই সব ঘটনা নিয়ে বইটি অবয়ব পেয়েছে। ভূমিকা অংশে তিনি জানাচ্ছেন, এই নগরের ইতিহাস দুইহাজার বছরের, কারণ এর প্রথম লিখিত উল্লেখ পাওয়া যায় এক গ্রীক নাবিকের বই “পেরিপ্লাস অব ইরিথ্রিয়ান সি”তে। যেমন আজ থেকে চারশ বছর আগে নগরটির একটি নৌবহর মালদ্বীপ আক্রমন করে এর রাজাকে হত্যা করেছিল, আর রাণী হয়েছিলেন বাঙালী এক নারী, যার কথা লিখেছিলেন ফরাশি নাবিক “ফ্রাঁসোয়া পাইরার্ড”। রবীন্দ্রনাথের বন্ধু কেদারনাথের কথাও এসেছে, যিনি চট্টগ্রামের ছিলেন।
আবার এই অঞ্চলে ১৮১১ সালে বৃটিশদের কারখানা থেকে ১৭টি কামান চুরির ঘটনা নিয়ে কীভাবে বিখ্যাত ইঙ্গ-বার্মা যুদ্ধ হয়েছিল তারও বিশদ বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন তিনি।
ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের কাছ থেকে আমরা জানতে পাই কফি নিয়ে অসন্তোষেও বিদেশি সরকার হটানোর সফল এক যুদ্ধ হয়েছিল ইউরোপের এক দেশে। সেখানে কামান তো কফির চেয়ে মর্যাদায় বড়, যুদ্ধ হওয়ারই কথা। কিন্তু এটি বিশেষ এই কারণে যে, যুদ্ধের অনুঘটক কামানগুলো বাংলাদেশের এক নগরে অবস্থিত ছিল।
চীনের সাথে ব্রিটিশদের “আফিম যুদ্ধ”-এর ফলে চায়ের প্রথম বাগান তৈরি হয়েছিল আসামে—সিলেট যার অংশ ছিল—তাও স্থানীয় জঙ্গল থেকে প্রাপ্ত চা গাছ নিয়ে। বইটিতে আমরা জানতে পারছি বাংলাদেশের প্রথম চা ও কফির বাণিজ্যিক বাগান গড়ে উঠেছিল চট্টগ্রামে, এটা এক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বৈকি।
এরকম অসংখ্য অশ্রুত ইতিহাসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তবে চিত্তাকর্ষক ঘটনার বিবরণ তুলে এনেছেন লেখক। শ্রমসাপেক্ষ গবেষণার দেখা পাই আমরা বইটিতে।
অচেনা ইতিহাস জানার পরিধিতে এলে ইতিহাসের অংশ হয়, বইটি চট্টগ্রামের গৌরবে আরো নতুন নতুন পালকের যোগান দেবে এরকমই প্রতীতি জাগিয়েছ।
সজীব ভুঁইয়া: ৩ মার্চ ২০২৫
স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি
“ ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অব সলিচ্যুড বা নিঃসঙ্গতা একশ বছর ” উপন্যাসের জন্য নোবেল বিজয়ী লেখক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ বেশ পরিচিত। লেখকের বাহিরেও তিনি আরেকটা পরিচয়ে বেশ পরিচিত-
“ আমি মানুষের স্মৃতিতে বেঁচে থাকতে চাই সাংবাদিক হিসেবেই, ওয়ান হ্যান্ড্রেড ইয়ারস অব সলিচ্যুড কিংবা নোবেল পুরস্কারের মাধ্যমে নয় ”
মার্কেজ সাংবাদিক হবার আগে দুটা গল্প লিখেও, সাংবাদিক হবার পর পুরোদমে লেখালেখি বা সাহিত্য মনোযোগী হন। ১৯৫৫ সালে উইলমা মনটেসি নামে একুশ বয়সী তরুনীর রহস্যময় মৃত্যু হয়। ঘটনার তদন্ত করার সময়ে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেড়িয়ে আসে। প্রভাবশালী মন্তীপুত্র এবং উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে ঘটনা দামাচাপা দেওয়া চেষ্টা করে। সেই বিষয় মার্কেজের দীঘ অনুসন্ধানী রিপোর্ট লিখেছিলেন যা “ স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি ” শিরোনামে প্রকাশিত হয়। সে রিপোর্ট যে কোনও থ্রিলার গল্পের সাথে তুলনীয়। তার সাহিত্যিক হয়ে ওঠার পথে এই রিপোর্টটিকে গুরত্বপূর্ণ একটি মাইফলক হিসবে দেখা হয়। তার মৃত্যু কয়েক বছর পর এই রিপোর্ট সহ তার লেখা ৫০টি বৈচিত্র্যময় কলামের একটা সংকলন প্রকাশিত হয় যা “ The Scandal of the century: and other writings ” শিরোনামে প্রকাশিত হয়। সেখান থেকে নির্বাচিত ১২ টি লেখার অনুবাদ নিয়ে এই গ্রন্থের পরিকল্পনা।
লেখক Haroon Rashid এর অনুবাদ এতোটাই ঝরঝরে যে পড়তে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছি। সহজগম্য করে অনুবাদ করেছে বেশ উপভোগ করলে তৃপ্তি মেটে নাই মনে হয় পুরো ৫০ টা কলাম কেনও অনুবাদ হলো না!!
বইতে উঠে এসেছে মার্কেজ বিভিন্ন দর্শন, জাদুবাস্তবতা, রাজনৈতিক প্রঙ্গাবিষয়ক চিন্তা, বিভিন্ন বিষয়ে রসবোধ। যেখানে নোবেল পুরস্কার ভূত এই শিরোনামে কলামে নোবলে পুরস্কার নিয়ে বেশ সমলোচনা করলেও কাকতালীয় ভাবে তিনি পরে বছরই নোবেল বিজয়ী হন। সে সাথে লেখক হবার দুর্গতি শিরোনামে লেখক দের দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথা বলেছেন। তাছাড়া অনুবাদক, সাহিত্য বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেম। যেখানে ওনার প্রিয় লেখক হেমিংওয়ে থেকে শুরু করে ফিদেল ক্যাস্ট্রো সমর্পক বলা আছে,প্যারিস ও মেক্সিকোর জীবন এবং এ্যারোপ্লেনের ঘুমন্ত সুন্দরী থেকে শুরু ব্যক্তিগত অনেক ঘটনা উঠে আসে। মার্কেজের ব্যক্তিগত জীবনে বেশ হাসিখুশি ধরনের মানুষ ছিল যে কারণে কলাম গুলা সে রকম হাস্যরোদ্ধ বা মজাদার ভাবে লিখেছে বেশ উপভোগ করেছি। তবে অনেক বিষয় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে!!
“স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি ” শিরোনামের কলাম ব্যতীত বলা যায় পুরো কলামগুলা নন-ফিকশনের আদলে লেখা তবে বেশ উপভোগ্য। নন-ফিকশন পড়তে যারা পছন্দ করেন, তারা দেখতে পারেন, আশা করি ভাল লাগবে।
চন্দ্রবিন্দুর বই চয়েজ দারুণ। এই বইয়ের প্রোডাকশন বেশ নড়বড়ে লেগেছে, মার্কেজ এর সাদাকালো ছবি তে প্রচ্ছদে আলাদা ভিন্টেজ একটা ভাইব এসেছে। খুব খেয়াল না করলে মার্কেজ এর ছবি চোখে পড়ে না। আমার বেশ ভাল লেগেছে। বানান ভুল চোখে পড়ে নাই তবে অভিযোগ একটাই পুরো বই পড়তে পাড়লে তৃপ্তি পেতাম। এই বইয়ের দাম তুলনামূলক বেশি মনে হয়েছে কারণ ১৫০ পৃষ্ঠা বইয়ের মলাট মূল্য ৪০০ টাকা আসেলই বেশি।
পরিশেষে এই বলবো, হারুন রশীদ ভাইয়ার বই চয়েজ দারুণ। থাংলিয়ানার মত, এই বই পড়েও মুগ্ধ হয়েছি অনুবাদের কারসাজি তে চমৎকার রুপান্তর হয়েছে। লেখকের নতুন বই
“ চিৎ- তৌৎ- গং ” সংগ্রহে নাই তবে পড়ার জন্য মুখিয়ে আছি। হ্যাপি রিডিং..
→বইয়ের নামঃ স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি
*****************
২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
মোহাম্মদ হোসাইন জাকি:
গবেষণালব্ধ বইয়ের লেখকদের আমি বেশ ঈর্ষা করি। কারণ শতাধিক নিবন্ধ লেখার পরও আমার নিকট গবেষণালব্ধ একটি বই প্রকাশ করা আজও খুব কষ্টের কাজ বলে মনে হয়। প্রথমতঃ বইয়ের মেরিট বিবেচনায় প্রকাশক না পাওয়া। দ্বিতীয়তঃ একটা বইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পুষ্টি (এ+বি+সি+ডি+বি কমপ্লেক্স+কে)-র যোগান না থাকলে সেটিকে পূর্ণাঙ্গ বইরূপে প্রকাশ করা অবিবেচনাপ্রসূত। যে কারণে লেখক জীবন প্রায় ৩০ বছরের বেশী হলেও অদ্যাবধি বহু সাধনায় প্রাণপন প্রচেষ্টায় আমার প্রকাশিত বইয়ের পরিমাণ মাত্র একটি, তাও মাত্র ৬৪ পৃষ্ঠা। সেকারণে কারো গবেষণালব্ধ বইয়ের পরিমাণ যদি একাধিক হয়, তবে তাকে সমীহ না করে পারা যায় না।
Haroon Rashid ভাইকে পেয়েছি ফেসবুকের খনি থেকে। ওনার মতো আরও অনেক গুণী মানুষের (ছড়াকার, কথা-সাহিত্যিক, কবি, রম্য লেখক...) সন্ধান পেয়েছি এই ফেসবুকেই। ভদ্রলোকের সাথে কখনো দেখা হয়নি, কথা হয়নি। উনি আমাকে বই কিনতে অনুরোধও করেননি। তারপরও নিজ তাগিদেই ‘থাংলিয়ানা’ ও ‘চিৎ-তৌৎ-গং চেনা চট্টগ্রামের অচেনা ইতিহাস’ বই দুটি কিনলাম। সক্ষমতা থাকলে ছয়টা বইই কিনে ফেলতাম। কবি, ছড়াকার, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার ও গবেষক আমরা প্রত্যেকেই স্ব-স্ব ক্ষেত্রের বই চিনতে ভুল হওয়ার কথা নয়। বইটি সম্পর্কে না জেনেও অবলীলায় তাই কেনা যায় বই, যদি তেমন বই হয়। এবার মেলা থেকে বেশ কিছু বই কিনেছি। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সহপাঠী-সহপাঠিনী বই বের করেছে। পাড়া-প্রতিবেশী, স্বজন এবং কর্মস্থল সংশ্লিষ্ট অনেক সিনিয়র-জুনিয়রের বই বেরিয়েছে এই মেলায়। পরিচিত অধিকাংশের বই-ই সংগ্রহ করেছি। তবে সবার আগে এই বই দুটি আমাকে আকৃষ্ট করেছে। কারণ গবেষণার ক্ষেত্রে যে ধরনটা আমার ব্যক্তিগত পছন্দের তালিকার শীর্ষে Haroon Rashid ভাইয়ের ছয়টি বইই সেই তালিকার। আমার মুখ পুস্তিকার তালিকার একটা বড় অংশ গবেষক শ্রেণির। আশা করছি, তাদের জন্যও এই পোস্টটি অনুপ্রেরণামূলক। Haroon Rashid ভাইয়ের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি, যাতে তিনি আমাদের গবেষণালব্ধ আরও নতুন নতুন বই উপহার দিতে পারেন।
*********
২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
রাফি শামস:
বাংলা ভাষায় সুলিখিত ইতিহাসের 'গল্প' লেখক খুব কমই আছেন। ইতিহাসের মত সিরিয়াস বিষয়কে 'গল্প' হিসেবে উল্লেখ করায় ইতিহাস নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞজনেরা হয়তো আমার উপর ক্ষুব্ধও হতে পারেন। তবে আমার কাছে ইতিহাসকে গল্প বলেই মনে হয়- অতীতের গল্প। ইতিহাসকে সাল তারিখের জটিল তথ্য সমাহারের ভীড় ঠেলে মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করতে হলে তার মধ্যে গল্প থাকা চাই। বাংলা ভাষায় প্রচুর ইতিহাস নিয়ে বিভিন্ন বইপত্র থাকলেও ইতিহাসের গল্প পাঠের সুযোগ আমাদের সীমিতই বলা চলে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জনাব হারুন রশীদ ব্যক্তিগত ভাবে আমার এই অভাবের জায়গাটা পূরণ করেছেন। গত বছর 'নিষিদ্ধ তিব্বতে প্রথম বাঙালি' এবং 'থাঙলিয়ানা' বই দুটো পড়ে তাই আমার এক ধরণের আবিষ্কারের আনন্দ হলো- নতুন গল্প আবিষ্কারের আনন্দ! তাই এ বছর লেখকের 'চিৎ তৌৎ গং' বইটি দেখে পাতা না উল্টিয়েই কিনে ফেললাম। কাঠখোট্টা ইতিহাসের বই হলে হয়তো অনেক সময় নিয়ে পড়তাম (যেমন নীহাররঞ্জন রায়ের 'বাঙ্গালির ইতিহাস' বইটা সাত বছরেও পড়ে শেষ করা হয়নি!) কিন্তু যেহেতু বইটা ইতিহাসের গল্পের, তাই গল্প পাঠের স্বাভাবিক গতিতে বইটা দ্রুত পড়ে শেষ করে ফেলা গেলো।
বইটি আক্ষরিক অর্থেই ইতিহাসের বিভিন্ন গল্প নিয়ে এবং নাম দেখেই অনুমেয় যে গল্প গুলো চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক। জনৈক ফরাসি নাবিক ফ্রাঁসোয়া পাইয়ার্ডের বরাত দিয়ে আমরা চলে যাই ১৬ শতকের চট্টগ্রামে। ঘটনাক্রমে (কিভাবে তিনি মালদ্বীপ থেকে চট্টগ্রামে এলেন সেটা জানার জন্য বইটা পড়তে হবে) চট্টগ্রামে আসা এক ভীনদেশী নাবিক কিভাবে দেখেছেন এ অঞ্চলের মানুষকে? আমি নেগেটিভ জিনিস নিয়ে সব সময় ফোকাসড থাকি (এটা আমার দুর্বলতা বটে) তাই কয়েকটা লাইন তুলে ধরার লোভ সামলাতে পারছিনা। কি বলছেন তিনি আমাদের নিয়ে-
" তাদের নারী পুরুষ উভয়ই ধূর্ত প্রকৃতির হয়ে থাকে। এখানকার পুরুষরা সুঠামদেহী এবং নারীরা বেশ সুন্দরী। তবে ভারতের অন্য যে-কোনো জায়গার তুলনায় এরা নির্লজ্জ। পুরুষেরা ব্যবসা বাণিজ্যের কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকে, যুদ্ধ কিংবা অস্ত্রবিদ্যায় এরা পারদর্শী নয়। এরা দুর্বল, ভদ্র, চালাক। তবে চরম মাত্রার প্রতারক, চোর এবং মিথ্যাবাদী।"
এতো গেলো পাইয়ার্ড মিয়ার গল্প। এই বই থেকে পরিচিত হলাম আরাকান বিদ্রোহী খিয়েনবিয়েনের সাথেও। জানা গেলো চা এর আগে কিভাবে কফির উৎপাদন শুরু হয়েছিল। পরিচিত হলাম 'মুন্নী বেগম' এর সাথে। মুন্নী বেগম আদতে এক প্রজাতির গণ্ডার, চট্টগ্রামে ধরা পরে যার শেষ গন্তব্য হয়েছিল লন্ডনের চিড়িয়াখানায়। তবে সব থেকে ভালো লেগেছে বইয়ের 'আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে- বাঁকবদলের ঐতিহাসিক স্মৃতি' অধ্যায়টি পড়ে।
বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য কবি নবীনচন্দ্র সেন ছিলেন ফেনীর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। তাঁর ইচ্ছা আর দৃঢ়তায় কিভাবে কুমিল্লা-চট্টগ্রামের মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপিত হয়েছিল সেই গল্প পড়ে অব্যক্ত এক ধরণের ভালো লাগা কাজ করলো। নিজে একজন সরকারি কর্মচারী বলেই হয়তো, একজন সরকারি কর্মচারী চাইলে কিভাবে একটি জনপদের উন্নতিতে আকাশ-পাতাল পার্থক্য গড়ে দিতে পারে সেটার উদাহরণ দেখে আমোদিত হলাম! উল্লেখ্য, আমার বর্তমান কর্মস্থল 'ডামুড্যা' নাম করণের পিছনেও নবীনচন্দ্র সেন মহোদয়ের ভূমিকা রয়েছে!
পরিশিষ্ট সহ এই বইটিতে মোট ১৬ টি অধ্যায় আছে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক বিভিন্ন ইতিহাসের গল্প নিয়ে। যারা গল্প পড়তে ভালোবাসেন, যারা ইতিহাস পড়তে ভালোবাসেন এবং যারা চট্টগ্রামকে আলাদা করে ভালোবাসেন- তাদের জন্য বইটি খুবই চমৎকার একটি উপহার হতে পারে। বইটি প্রকাশিত হয়েছে 'কথা প্রকাশ' থেকে, মুদ্রিত মূল্য ৬০০ টাকা।
বইটি নিয়ে, এর গল্প গুলো নিয়ে আরো কিছু লিখতে পারলে ভালো লাগতো। তবে আমার মনে হয় আমার বয়ানে না শুনে নিজেরা পড়ে নিতে পারলে সব থেকে ভালো হবে। পরিশেষে জনাব Haroon Rashid কে ধন্যবাদ এভাবে একের পর এক গল্প বলে যাওয়ার জন্য। সামনের দিন গুলোতে লেখকের আরো গল্পপাঠের প্রত্যাশায় রইলাম।
*********
অন্বয় আকিব:
চিৎ-তৌৎ-গং।
বাংলায় যার মানে দাঁড়ায় আর যুদ্ধ নয়। প্রাচীন আরাকানি শব্দ। চট্টগ্রাম শব্দের সাথে প্রচুর মিল দেখা যাচ্ছে না? চট্টগ্রামের নামকরণের সাথে প্রাচীন যে কয়েকটি সূত্রের কথা ধারণা করা হয়, চিৎ-তৌৎ-গং তার মধ্যে অন্যতম।
চট্রগ্রামের ইতিহাস দু একশো বছরের পুরনো নয়। কমপক্ষে হাজার দুয়েক বছর ধরেই চট্টগ্রামের নাম জড়িয়ে আছে পৃথিবীর বাণিজ্যিক এবং সামরিক পরিসরে। সুজলা সুফলা বাংলার অন্যতম প্রধান এই জায়গার গুরুত্ব সারা বিশ্বেই ছিল। সেই চট্টগ্রামের খন্ড বিখন্ড কিছু চাঞ্চল্যকর ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে লেখা চিৎ-তৌৎ-গং।
চিৎ-তৌৎ-গং শুধু চট্টগ্রামেই আটকে থাকেনি। চট্টগ্রামের সঙ্গে এক টিকেটে ঘুরে আসা যাবে মালদ্বীপ, বার্মা, আরাকান, এমনকী সেই সূদুর জার্মানেও। বিভিন্ন স্থানের ঘটনা এখানে উল্লেখ হলেও সমস্ত ঘটনার চাবিকাঠি খুঁজে পাওয়া যাবে এই চট্টগ্রামেই। যেমন ধরুন বাঙালি এক তরুণী ঘটনাক্রমে মালদ্বীপের রাণির আসনে বসেছিলেন, জানতেন? যারা মনে করেন ফোন, ওয়াইফাই, ইন্টারনেট এসে পুরুষ মানুষের স্বভাব চরিত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাদের জন্যে দুঃসংবাদ আছে এই অধ্যায়ে। ঠিক তেমনি সুন্দরী হলে সাতখুন যে মাফ পাওয়া যায়, সেই আদিকাল থেকে বর্তমানেও এই নিয়ম প্রচলিত আছে সেটাও জানা যাবে। থাক, মজা করে কাজ নাই। চলেন কফি খেয়ে আসি। চট্টগ্রামে একসময় কফি চাষ হত, সেই ইতিহাস জেনে ভালোও লাগল দুঃখও লাগল। এখন এই অধমদের কফি খেতে হলে কিডনী খুলে দেয়া লাগে। চট্টগ্রামের সঙ্গে আবার জড়িয়ে আছে জার্মান নৌবাহিনী গঠিত হওয়ার ইতিহাস। জার্মান নৌবহরের প্রধান জাহাজই ছিল চট্টগ্রামে তৈরী। পড়তে পড়তেই জানা যাবে, সেই চট্টগ্রাম ক্লাব যার দরজায় লেখা ছিল ‘Dogs and Indians are not allowed' সেই ক্লাব সৃষ্টির ইতিহাস।
ছোট ছোট বেশ কয়েকটা অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে চট্টগ্রামের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা নানা ইতিহাস। কোনোটা হয়ত আমরা জানি, কোনোটা জানা ছিল না। ঝরঝরে লেখার ফলে জানা থাক বা না থাক পড়তে একেবারেই বিরক্তি আসে না। নন ফিকশন মানেই যে ভীষণ কঠিন কঠিন সব শব্দ বা খটমটে বাক্যের আধিক্য থাকতে হবে এমন একটা ধারণা প্রচলিত হয়ে আছে লেখক সেই রাস্তায় না হেঁটে যথেষ্ঠ সহজ সরল প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ণনা করে গিয়েছেন। এই জন্যে আমি লেখককে সাধুবাদ জানাব। তবে দুয়েক জায়গায় সরাসরি অনুবাদ করার ফলেই কিছুটা কাঠিন্য চলে এসেছে। সরাসরি অনুবাদ না করে নিজের ভাষায় লিখলেই সম্ভবত এরকম মনে হত না। সেটাও ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। সালের এদিক ওদিক হয়েছে এক আধ জায়গায়। আশা করি পরের মুদ্রণে শুধরে নেয়া হবে।
ভদ্রলোকের অনূদিত থাংলিয়ানা পড়ে ভীষণ ভালো লেগেছিল। চিৎ-তৌৎ-গং পড়েও ভালো লাগার একটা রেশ রয়ে গেল। যারা ইতিহাসের বই পড়তে পছন্দ করেন এই বইটাও তাদের ভালো লাগার কথা।
এই বইটা আমি গতকাল সন্ধ্যায় হাতে পেয়েছি। একদিনেই পড়ে শেষ করে ফেলা গেল। বইটা উপহার পাঠিয়েছিল Nasrin আপু। চমৎকার একটা বই উপহার দেয়ার জন্যে আপুকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
********
বাংলায় যার মানে দাঁড়ায় আর যুদ্ধ নয়। প্রাচীন আরাকানি শব্দ। চট্টগ্রাম শব্দের সাথে প্রচুর মিল দেখা যাচ্ছে না? চট্টগ্রামের নামকরণের সাথে প্রাচীন যে কয়েকটি সূত্রের কথা ধারণা করা হয়, চিৎ-তৌৎ-গং তার মধ্যে অন্যতম।
চট্রগ্রামের ইতিহাস দু একশো বছরের পুরনো নয়। কমপক্ষে হাজার দুয়েক বছর ধরেই চট্টগ্রামের নাম জড়িয়ে আছে পৃথিবীর বাণিজ্যিক এবং সামরিক পরিসরে। সুজলা সুফলা বাংলার অন্যতম প্রধান এই জায়গার গুরুত্ব সারা বিশ্বেই ছিল। সেই চট্টগ্রামের খন্ড বিখন্ড কিছু চাঞ্চল্যকর ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে লেখা চিৎ-তৌৎ-গং।
চিৎ-তৌৎ-গং শুধু চট্টগ্রামেই আটকে থাকেনি। চট্টগ্রামের সঙ্গে এক টিকেটে ঘুরে আসা যাবে মালদ্বীপ, বার্মা, আরাকান, এমনকী সেই সূদুর জার্মানেও। বিভিন্ন স্থানের ঘটনা এখানে উল্লেখ হলেও সমস্ত ঘটনার চাবিকাঠি খুঁজে পাওয়া যাবে এই চট্টগ্রামেই। যেমন ধরুন বাঙালি এক তরুণী ঘটনাক্রমে মালদ্বীপের রাণির আসনে বসেছিলেন, জানতেন? যারা মনে করেন ফোন, ওয়াইফাই, ইন্টারনেট এসে পুরুষ মানুষের স্বভাব চরিত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাদের জন্যে দুঃসংবাদ আছে এই অধ্যায়ে। ঠিক তেমনি সুন্দরী হলে সাতখুন যে মাফ পাওয়া যায়, সেই আদিকাল থেকে বর্তমানেও এই নিয়ম প্রচলিত আছে সেটাও জানা যাবে। থাক, মজা করে কাজ নাই। চলেন কফি খেয়ে আসি। চট্টগ্রামে একসময় কফি চাষ হত, সেই ইতিহাস জেনে ভালোও লাগল দুঃখও লাগল। এখন এই অধমদের কফি খেতে হলে কিডনী খুলে দেয়া লাগে। চট্টগ্রামের সঙ্গে আবার জড়িয়ে আছে জার্মান নৌবাহিনী গঠিত হওয়ার ইতিহাস। জার্মান নৌবহরের প্রধান জাহাজই ছিল চট্টগ্রামে তৈরী। পড়তে পড়তেই জানা যাবে, সেই চট্টগ্রাম ক্লাব যার দরজায় লেখা ছিল ‘Dogs and Indians are not allowed' সেই ক্লাব সৃষ্টির ইতিহাস।
ছোট ছোট বেশ কয়েকটা অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে চট্টগ্রামের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা নানা ইতিহাস। কোনোটা হয়ত আমরা জানি, কোনোটা জানা ছিল না। ঝরঝরে লেখার ফলে জানা থাক বা না থাক পড়তে একেবারেই বিরক্তি আসে না। নন ফিকশন মানেই যে ভীষণ কঠিন কঠিন সব শব্দ বা খটমটে বাক্যের আধিক্য থাকতে হবে এমন একটা ধারণা প্রচলিত হয়ে আছে লেখক সেই রাস্তায় না হেঁটে যথেষ্ঠ সহজ সরল প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ণনা করে গিয়েছেন। এই জন্যে আমি লেখককে সাধুবাদ জানাব। তবে দুয়েক জায়গায় সরাসরি অনুবাদ করার ফলেই কিছুটা কাঠিন্য চলে এসেছে। সরাসরি অনুবাদ না করে নিজের ভাষায় লিখলেই সম্ভবত এরকম মনে হত না। সেটাও ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। সালের এদিক ওদিক হয়েছে এক আধ জায়গায়। আশা করি পরের মুদ্রণে শুধরে নেয়া হবে।
ভদ্রলোকের অনূদিত থাংলিয়ানা পড়ে ভীষণ ভালো লেগেছিল। চিৎ-তৌৎ-গং পড়েও ভালো লাগার একটা রেশ রয়ে গেল। যারা ইতিহাসের বই পড়তে পছন্দ করেন এই বইটাও তাদের ভালো লাগার কথা।
এই বইটা আমি গতকাল সন্ধ্যায় হাতে পেয়েছি। একদিনেই পড়ে শেষ করে ফেলা গেল। বইটা উপহার পাঠিয়েছিল Nasrin আপু। চমৎকার একটা বই উপহার দেয়ার জন্যে আপুকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
********
নিহাব:
২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
"একটি উদাসীন দিনের তপ্ত নবজাত দুপুরের মধ্য প্রহরে ক্ষমতা শূন্য সিংহাসনে বসে ২০শ শতাব্দীর অন্যতম ক্ষমতাবান লেখকের সম্পর্কে জানতে গিয়ে দেখলাম ভাবনাহীন নিপুণ শিল্পছায়ার শূন্য কারুকাজের মতন তার জীবন। যার লেখনী ধাতুর শহরকেও শুকনো কাগজের মতো ভঙ্গুর করে দেয়। মনে হতে থাকে প্রাণের উত্তাপে তৃষ্ণার্ত হয়ে ডুবে যাওয়া শব গুলোও শূন্য শহরের রাতগুলোতে তার লেখা পড়ে পুনরায় প্রাণ ফিরে পায়।
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি’ একটি প্রবন্ধ সংকলন, যা ক্রিস্টোবাল পেরা-মার্কেজের সাংবাদিকতা জীবনের ১৯৫০-৮৪ সালের ভেতর লেখা নিবন্ধ ও কলামের মধ্যে থেকে মোট ৫০টি প্রবন্ধ নিয়ে তৈরি করেছেন। যেখানে মার্কেজের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা থেকে শুরু করে সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা অন্তর্ভুক্ত। আর সেখান থেকে ১১/১২ টার অনুবাদ নিয়ে এই বই।
গ্রন্থটির শিরোনাম প্রবন্ধ ‘স্ক্যান্ডাল অব দ্য সেঞ্চুরি’ ১৯৫৫ সালে ‘এল এসপেকটেডর’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। এতে তিনি উইলমা মনটেসি নামের এক তরুণীর রহস্যময় মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে গভীর অনুসন্ধানী রিপোর্ট উপস্থাপন করেন, যা যে কোনো থ্রিলার গল্পের মতোই চমকপ্রদ এবং বহুস্তরবিশিষ্ট। এই প্রবন্ধকে মার্কেজের সাংবাদিকতা জীবন থেকে সাহিত্যিক জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে ধরা হয়ে থাকে।
বইয়ের অন্যান্য প্রবন্ধে মার্কেজের রসবোধ, অন্তর্দৃষ্টি এবং সাহিত্যিক দক্ষতা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি নোবেল পুরস্কার ভূত, অনুবাদ সাহিত্য, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, মেক্সিকো, প্লেনের ঘুমন্ত সুন্দরী এবং নিজের লেখা নিয়ে অকপট ও সহজ ভাষায় আলোচনা করেছেন। এই লেখাগুলো পাঠকদেরকে মার্কেজের চিন্তাধারা ও দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে নতুনভাবে পরিচয় করায়। আর লেখকের অনুবাদও একদম ঝরঝরে। পড়েও আনন্দ পাওয়া যায়। মাস্ট রিড বলব আমি যারা মার্কেজ সম্পর্কে আরো জানতে চান তাদের জন্য।"
....................................
[লেখা ও ছবি: নিহাব ]
No comments:
Post a Comment