সময়কে চিনতে না পারা মানুষের অন্যতম বড় ব্যর্থতা। বাংলার মানুষ প্রধানত দুই শ্রেণীতে বিভক্ত। একদল অতিবড় ধূর্ত, অন্যদল অতি মহাসরল। এর মাঝামাঝি কিছু আছে যারা দুই নৌকাতে পা রাখতে পারদর্শী। তারা বিচক্ষণ বুদ্ধিজীবি ও রাজনৈতিক তোষক। ধূর্তদের সংখ্যা যদি ৫ জন হয়, সরল মানুষের সংখ্যা হবে ৮০ জন। বাকী ১৫ জনের মধ্যে আছে মধ্যবিত্ত শ্রেণী, বিচক্ষণ বুদ্ধিজীবি ও রাজনৈতিক তোষক যারা সময়মতো পল্টি দিতে পারে। যারা ধূর্ত তারা দেশ শাসন করে। ধূর্তরা শক্তিশালী হয়। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠের সামনে মুলা ঝুলিয়ে দিনের পর দিন ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। এরাও জানে পতন অনিবার্য। কিন্তু সেই অনিবার্য পতন ঠেকিয়ে রাখার জন্য দিনের পর দিন নতুন নতুন ফন্দী ফিকির করে। ভারতবর্ষ কিংবা বঙ্গদেশের অধিকাংশ ইতিহাস ধূর্ততার ইতিহাস। ষড়যন্ত্রের ইতিহাস। যুগ যুগ ধরে এর মধ্য দিয়ে টিকে আছে ওই ৮০ জন বোকা মানুষ।
সাধারণ মানুষের অংশ হিসেবে আমার দায়িত্ব কী? আমি যাদের সমর্থন করি তাদের সকল অন্যায়কেও সমর্থন করে যাওয়া? সেটা তো নির্বোধের কাজ। আমার বাবা মা ভাই বোন কিংবা আমার সন্তানেরা আমার খুব আপনজন। কিন্তু তাদের যে কোনও অন্যায় আচরণকে আমি সমর্থন করে যাবো? আপনজনের স্বার্থ রাখতে গিয়ে আমরা গোটা জাতির ক্ষতি করি। এই অঞ্চলে শত শত বছর ধরে এমন অন্যায় কাণ্ড চলে আসছে বলে পৃথিবীর সবচেয়ে পশ্চাদপদ একটা রাষ্ট্র হিসেবে বেড়ে উঠেছে দেশটা। এখানে আমরা প্রিয়জনের অন্যায়কে প্রশ্রয়ের চোখে দেখি। আমাদের চশমাটা প্রায়ই ভুল থাকে। ভুল চশমা পরে আমরা ন্যায় অন্যায় পক্ষপাতিত্ব বিচার করি। অন্ধতার ভিত্তিতে রায় দেই। ফলে একটা অন্যায় যুগ শেষ হবার পর আরেকটা অন্যায় যুগ আসে। আমরা যুগ যুগ ধরে অন্যায় রাজত্বে বসবাস করতে করতে কখনো শিখতে পারিনি, কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ। যদি আমি ক্ষমতাবান হই, তখন ভালোমন্দ বিচার করতে পারে এমন লোকদের আমরা কোণঠাসা করে রাখার দায়িত্বও পালন করি।
এখন একটা অন্যায় চলছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি। ক্ষমতার চাপে আমাদের অনেকে সত্য বলছে না। কিন্তু যখন ক্ষমতার বাটি উল্টে যাবে তখন আমরা বলবো, আমি আগেই জানতাম এরা ভুল করেছে। এখন যারা ক্ষমতার স্বার্থে জিব নাড়ছে, তখন তাদের জিব অসাড় হয়ে যাবে। অন্যদলের অন্যায় নিয়ে তখন সরব হবে এরাই। যে অন্যায়কে একসময় সমর্থন করেছিল, সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রূখে দাঁড়ানোর আন্দোলন করবে। এদেশে যুগ যুগ ধরে এই দুষ্টচক্রটা টিকে আছে। টিকে থাকবে ওই ১৫ জনের নির্বুদ্ধিতার জন্য। চালাকির জন্য। ধূর্ততার জন্য। মূর্খতার জন্য।
আধুনিক পৃথিবীতে রাজনীতির স্বার্থ রক্ষা করার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান হলো নিরীহ মানুষের লাশ। কোন পক্ষ না হয়েও বিনা কারণে, নিজের অজান্তে মরে যাওয়া মানুষের লাশ রাজনৈতিক ক্ষমতায় ওঠা নামার কাঁচামাল হিসেবে জনপ্রিয়। এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, বাংলাদেশ কোথাও ব্যতিক্রম নেই।
আমরা সময়কে চিনতে পারছি না। আমরা অচেনা সময়ের মুখোমুখি হবো শিগগির।
[আপডেট: ১৫.৭.২৪]
No comments:
Post a Comment