Thursday, June 17, 2021

সাহিত্যিক দলাদলি: পাষণ্ড পীড়ন ১৮৪৬

সাহিত্যিক দলাদলির এই বেরসিক ঘটনাটি ঘটেছিল বাংলা পত্রিকা প্রকাশনার আদিযুগে- উনিশ শতকের মাঝামাঝিতে। কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত শিক্ষিত সমাজের বিনোদনের জন্য একটা পত্রিকা চালাতেন। সাথে ছিলেন সাহিত্যিক বন্ধু গৌরীশঙ্কর তর্কবাগীশ।
১৮৪৬ সালে প্রকাশিত ‘পাষণ্ড পীড়ন’ নামের মাসিক পত্রিকাটি সমাজের পাষণ্ডদের কতটা পীড়া দিতে পেরেছিল তা জানা না গেলেও কারো কারো বুদ্ধিতে আগুন ধরাতে পেরেছিল নিঃসন্দেহে। সেই আগুনের তাপে দুই বন্ধুর মধ্যে দড়ি টানাটানি শুরু হয়। দুজনে কুৎসাপূর্ণ কবিতার মাধ্যমে পরস্পরকে আক্রমণ শুরু করেন। দেশের লোক সেই লড়াই দেখে আমোদিত হতো।
.
প্রকাশক সীতানাথ ঘোষ তখন একটা অদ্ভুত কাণ্ড করলেন। এক রাতে সম্পাদককে কিছু না জানিয়ে ছাপাখানার মূল যন্ত্রটা নিয়ে ভেগে গেলেন তিনি। পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু তিনি ভেগে গিয়ে হারিয়ে যাননি। তিনি মূলত দলত্যাগ করেছিলেন। পত্রিকা প্রকাশের সেই যন্ত্রটা তাঁর প্রতিপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।
.
সুরসিক ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত কয়েক বছর পর 'পাষণ্ডপীড়ন' বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে মনের দুঃখে লিখেছিলেন-
"১২৫৩ সালের আষাঢ় মাসের সপ্তম দিবসে প্রভাকর যন্ত্রে পাষণ্ডপীড়নের জন্ম হইল। ইহাতে পূর্ব্বে কেবল সর্ব্বজন-মনোরঞ্জন প্রকৃষ্ট প্রবন্ধপুঞ্জ প্রকটিত হইত। পরে ৫৪ সালে কোন বিশেষ হেতুতে পাষণ্ডপীড়ন, পাষণ্ডপীড়ন করিয়া, আপনিই পাষণ্ড হস্তে পীড়িত হইলেন। অর্থাৎ সীতানাথ ঘোষ নামক জনেক কৃতঘ্ন ব্যক্তি যাহার নামে এই পত্র প্রচারিত হয়, সেই অধার্মিক ঘোষ বিপক্ষের সহিত যোগ দান করতঃ ঐ সালের ভাদ্র মাসে পাষণ্ডপীড়নের হেড চুরি করিয়া পলায়ন করিল। সুতরাং আমাদিগের বন্ধুগন তৎপ্রকাশে বঞ্চিত হইলেন। উক্ত ঘোষ পত্র ভাস্করের করে দিয়া পাতরে আছড়াইয়া নষ্ট করিল।"**
.
আদিযুগের এই বাংলা বুঝতে অনেকের অসুবিধা হলেও এ যুগের সাহিত্যিক দলাদলির সাথে ঐতিহাসিক মিল খুঁজে পেতে অসুবিধা হবার কথা নয়।
.
[**সূত্র: সংবাদ প্রভাকর, ১ বৈশাখ ১২৫৯]

No comments: