অতীত একটা ফেলে আসা বাগান। সেই বাগানে মাঝে মাঝে বেড়াতে যাই। অতীতে আমার প্রিয় সময় আছে, অপ্রিয় সময়ও। অতীতে আছে হাত বাড়ালে পেয়ে যেতাম তেমন সুখ, অতীতে আছে মাথার উপর ভেঙ্গে পড়া আকাশ। অতীতের অনেক অপ্রিয় বাস্তবতা সত্ত্বেও অতীত আমার প্রিয় আশ্রয়। আমি বর্তমান নিয়ে সন্তুষ্ট হলেও অতীতের দুঃসময় ভ্রমণেও ক্লান্তি লাগে না। আমি অতীত ঘুরে ঘুরে বর্তমানের সুখ দুঃখ পরিমাপ করি। কখনো কখনো আমার সাজানো বর্তমানে অতীতকে স্থাপন করি, কখনো কখনো আমার বিশৃংখলকে এনে বর্তমানে বসিয়ে দেই।আমার বর্তমানের সাথে অতীতের দূরত্ব আছে দ্বন্দ্ব নেই। তবে আমার নিকট অতীতের সাথে সুদূর অতীতের পার্থক্য অনেক। তবু আমি দুটোতেই স্মৃতি ভ্রমণ করতে ভালোবাসি। স্মৃতি ভ্রমণে পৃথিবীর কোন বাহন লাগে না। সময় বাহনেই ঘুরে আসা যায় আস্ত একটা জীবন।
আমার একটা বাগান ছিল সেখানে কোনদিন গোলাপ ফোটেনি। আমার বাগানে আগাছারাই অধিক স্বচ্ছন্দ। আমি যখন পথে পথে হাটি, বনে বানাড়ে যাই, অবহেলিত বুনো ফুলেরা আমাকে হাতছানি দেয়। আমি সাজানো বাগানের চেয়ে অবহেলিত আগাছাদের মধ্যে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। ছেলেবেলায় একটা আগাছার বাগান ছিল আমার। দুটো আগাছা ফুলের ঝোপ ছিল আমার, আমি তাদের যত্ন করে রাখতাম। তাদের কোন নাম ছিল না বলে আমি দুটো নাম দিয়েছিলাম। অ্যালাবি চাইল্ড আর কেন্টাকি ফস্টার। একটায় হলুদ আরেকটায় বেগুনী ফুল ফুটতো। নামের কোন অর্থ ছিল না, কেবল বিদেশী নাম দিয়ে আগাছাদের সম্মান দিয়েছিলাম। ভেবেছি এই গাছ দক্ষিন আমেরিকার আমাজনে জন্মালে নিশ্চয়ই এরকম কোন নাম হতো। নামগুলো সেই বুনোফুলের মনমতো হয়েছিল কিনা কোনদিনও জানা যাবে না। তবু যে জীবন আগাছার, যে জীবন পরগাছার মানুষের সাথে তার কোন কোনদিন দেখা হয়েও যায়।
আমার একটা পোষা টিয়া ছিল। আমার সাথে তার ঝগড়া হতো খুব। আমাকে দেখলেই খাচার ভেতর থেকে আঙুল কামড়ে রক্তাক্ত করতে চাইতো। আমি তাকে কথা শেখাতে চেয়েছিলাম বলে সে হয়তো বিরক্ত। অথবা যে তাকে ধরে খাঁচায় পুড়েছে সে আমার স্বজাতি বলে। একদিন আমি তার খাঁচা খুলে মুক্ত করে দিলাম। কিন্তু ছাড়া পেয়েও সে কোথাও যায় না। খাঁচার বাইরে আসতে ভয় পায়। আমি তাকে জোর করে খাঁচা থেকে বের করে উড়িয়ে দিলাম। একটু উড়ে সে আবার খাঁচার ভেতরে ঢুকে যায় গুটিশুটি মেরে। সে ধরে নিয়েছে খাঁচার বাইরের জীবন নিরাপদ নয়, খাঁচার আশ্রয়েই তার গোটা জীবন।
No comments:
Post a Comment