Thursday, December 1, 2011

চট্টগ্রাম: অতীতস্য অতীত

আমি এখন ঠিক যেখানে বসে কীবোর্ডে আঙুল চালাচ্ছি সেই জায়গাটা ১০০ বছর আগে কেমন ছিল? এই জায়গাটা তখন সমুদ্রের তীরভাগ। বঙ্গোপসাগরের ঢেউ এখানে এসে ভেঙ্গে পড়তো। ভাটার সময় হাঁটুপানি, জোয়ারে জলোচ্ছ্বাস প্রায়। এখান থেকে সোজা পূর্বদিকে তাকালে সবুজের পর সবুজ পেরিয়ে দিগন্তে দৃষ্টিটা যেখানে থেমে যাবে সেখানে পাহাড়ের আভাস। সেই পাহাড়ে শ্বেতাঙ্গ মানুষের বসতি আছে লাল ইটের দালানে। পাহাড়ের পাদদেশে যে সবুজ জঙ্গল দেখা যাচ্ছে তা কোন আদিম জঙ্গল নয়, মানুষের ঘরবসতির ফলমুলের গাছ বন। চট্টগ্রাম তখনো অবিভক্ত ভারতের একটা শহর। সূর্যসেনরা তখনো বালক। বৃটিশদের শোষনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে যাচ্ছে ভারতবাসী। ১০০ বছর আগের চট্টগ্রাম উপনিবেশ ছাড়া আর কিছু নয়।

কিন্তু ১০০০ বছর আগে এই জায়গায় কি ছিল? সেই ইতিহাস কোথাও লিখে যায়নি কেউ। এই জায়গার নাম তখনো চট্টগ্রাম হয়নি। এমনকি সাদকাওয়ানও না। চিৎউতগং তো আরো কয়েকশো বছর পরের ঘটনা। এই জায়গাটা তখন সমুদ্রের অংশ। দেশটা বঙ্গদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়নি তখনো। লক্ষণ সেনের প্রপিতামহের জন্মও হয়নি বঙ্গদেশে। অসভ্য জংলীদের বসবাস ছিল তাও বলা যায় না। চাকমা মার্মা কিংবা অন্য কোন আদিবাসী পার্বত্য অঞ্চলে বসতি গাড়েনি তখনো। কিন্তু আরব বণিকেরা এই দিকে চলে এসেছিল নতুন সম্ভাবনার সন্ধানে। কিছু বণিক সবুজ প্রকৃতিতে মুগ্ধ হয়ে বসতি গড়ে তুলেছিল স্থায়ীভাবেই। উষর মরুর উত্তাপ থেকে সবুজের স্নিগ্ধতা দান করে গেল তার উত্তরপুরুষকে। বখতিয়ার খিলজি এদেশে আসবে আরো দুশো বছর পরে। এবার প্রকৃতিটা কল্পনা করা যাক। পতেঙ্গা থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত সমতল এলাকা ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ন। নৌকা থেকে কেউ কর্নফুলী তীরে নামলে তাকে জঙ্গল কেটে এগোতে হবে পূর্ব দিকে। ঘটনাক্রমে পতেঙ্গা থেকে ভাটিয়ারী বেল্ট নিয়ে ভেতরের অংশটা আজ শহরের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। নিশ্চয়ই যে প্রথম নেমেছিল সে এই এলাকাকে বেছে নিয়েছিল। কারণ এখান থেকে সমুদ্র আর নদী দুটোই কাছাকাছি। যদি এখানে বসতি না করে কর্নফুলীর অন্য পাড়ে বসতি করা হতো, তাহলে আজকের সভ্য শহরের সুত্রপাত হতো আনোয়ারা পটিয়ায়। পতেঙ্গা হালিশহর পাচলাইশ নাসিরাবাদ একেকটা গ্রামের নাম হতো। ভুগোল পাল্টাতে হলে ইতিহাস পাল্টাতে হবে। ইতিহাসই ভুগোলের গতিপথ নির্ধারণ করে।

এবার কি ১০০০০ বছর আগের কথা ভেবে দেখা যায়? মানব সভ্যতা তখনো গুটিগুটি পায়ে মধ্য এশিয়ায় হামাগুড়ি দিচ্ছে। সমগ্র দক্ষিন এশিয়া খাঁ খাঁ সবুজের নির্জনতায় ডুবে আছে। আর কিছু কল্পনা করা যায়? কল্পনা থেমে যায়।

No comments: