Saturday, December 20, 2008

ঢাকা নিয়ে কচকচানি

ঢাকার বাইরের লোক হয়েও ঢাকা আমার খুব প্রিয় শহর ছিল একসময়। আকাশ ছোঁয়া দালানের দিকে তাকিয়ে মতিঝিলের ফুটপাত ধরে হাটতে হাঁটতে নিজেকে খুব গুরুত্বপূর্ন কেউকেটা মনে হতো। সেই কৈশোরে আমার ধারনা ছিল ঢাকায় যাদের যেতে হয় তারা সাধারন কেউ না। ঢাকা যাওয়ার আগের আর পরের ক'টা দিন মুখিয়ে থাকতাম এরকম কয়েকটা রেডী উত্তর নিয়ে -"এই একটু ঢাকা যেতে হবে কাল", "আর বলিস না, ঢাকা যেতে হয়েছিল গত সপ্তাহে"। সবসময় কোন না কোন ছুতায় ঢাকা যাবার উপায় খুঁজতাম। কোন কাজ না থাকলেও শ্রেফ বইমেলায় যাবার অজুহাতে ঢাকা চলে যেতাম। বেমক্কা ঘুরতাম রাস্তায় রাস্তায়। মানুষ, গাড়ী, দালান সবকিছু কেমন স্বপ্নময় মনে হতো। যা দেখি তাই ভালো লাগে, যা খাই তাই তৃপ্তিময়। ঢাকার সবকিছুই সুন্দর মনে হতো। এমনকি সদরঘাট-রামপুরা রোডের লক্কর-ঝক্কর বাসগুলো পর্যন্ত। সদ্য কৈশোরোত্তীর্ন তরুনের রোমান্টিকতার জগতে ঢাকা শহরের ব্যাপক ভুমিকা ছিল।

বিশ-বাইশ বছর আগে ঢাকা শহর এত যানজটপূর্ন ছিল না। শহরের যে কোন জায়গায় স্বচ্ছন্দেই যাওয়া যেতো। মালিবাগে খালার বাসায় থাকা-খাওয়া চলতো, বাকী সময় ঘুরতাম ফিরতাম এদিক সেদিক। বাসে বা রিক্সায় করে যেখানে খুশী যাওয়া যায়। রমনা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টিএসসি এলাকায় বেহুদা ঘুরাঘুরির নেশা ছিল। পাবলিক লাইব্রেরী, আজিজ মার্কেটে বইয়ের দোকানেও গুজগুজ করতাম। নতুন বইয়ের গন্ধ শুঁকে দাম দেখে অর্ধভোজনের অতৃপ্তি নিয়ে ফিরে যেতাম গুলিস্তান, নয়াপল্টন, কাকরাইল কিংবা বায়তুল মোকাররমের সামনের ফুটপাতে পুরোনো বইয়ের টালে। হকারের সাথে খাপ-খুপ খাতির জমানোর চেষ্টা করতাম সস্তায় বই পত্তর মেলানোর আশায়। সুকান্ত, জীবননান্দ থেকে পিয়ার্স এনসাইক্লোপেডিয়া পর্যন্ত বিশ পঞ্চাশ টাকায় মিলে যেত কখনো কখনো। চাটগাঁ ফিরে যাবার গাড়ী ভাড়া বাদে সব টাকা ফুটপাতে বিলিয়ে ফিরে আসতাম মালিবাগের বাসায়।

যদিও ঢাকার নির্দিষ্ট গন্ডির বাইরে কিছু চিনতাম না, তবু রাস্তায় হারিয়ে যাবার কোন ভয় ছিলনা। এমনকি মীরপুর পাইকপাড়ার ভেতর গলির খালাতো বোন জলি আপার বাসাটা খুঁজে বের করতেও মোটে বেগ পেতে হতো না। যদিও প্রতিবার রাস্তা হারিয়ে ফেলতাম নতুন নতুন দালানের ভীড়ে, তবু কোন অনিশ্চয়তায় ভুগতাম না।

সেই ঢাকা শহর আমার কাছে অচেনা লাগে। ভীষন অচেনা। যেন কখনো আসিনি এই শহরে। সবকিছুই নতুন লাগে। এত ভীড়, এত যানজট, কেবল রাস্তা হারিয়ে ফেলার ভয় কাজ করে। যে আমি একসময় যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুর পর্যন্ত অবাধে ঘুরে বেড়াতাম, সেই আমি এখন আরামবাগ থেকে রাজারবাগ একা যেতে ভরসা পাইনা সন্ধ্যা সাতটায়। গুলশানে যেতে হলে অবশ্যই সাথে নিই ঢাকা অফিসের আলীকে। নাহলে কোথায় কোন বিপাকে পড়ি। এমনকি ব্যক্তিগত কাজে গেলেও ঢাকা পৌছার আগেই ফোন করি আলীকে, আলী ফোন পেলেই বোঝে কী করতে হবে, "কোথায় আসতে হবে স্যার, আরামবাগ না কলাবাগান?" হাসিখুশী লোকটা এসে আমাকে বনানীর রেষ্টহাউজে কিংবা হোটেলে নিয়ে যাবে। রেষ্টহাউজে সে একা থাকে। নিজেই রান্নাবান্না করে খায়। আমাকে পেলে বন্ধুর মতো গল্প করবে। হোটেলে বুকিং না থাকলে বলি, "আজ রাতে তোমার হাতের টেংরা মাছের ঝোল খাবো।"

আরেকবার বাস থেকে আরামবাগে নেমে ওর জন্য অপেক্ষা করছি, কিন্তু সে গাড়ী নিয়ে মালিবাগ রেলগেটের জ্যামে আটকে আছে ঘন্টাখানেক। রাত নটা বাজে প্রায়, আমি যাবো রাজারবাগের হোটেল আশরাফীতে, ঢাকায় গেলে মাঝে মাঝে ওখানেই থাকি। কাছাকাছি জায়গা। কিন্তু গত কয় বছরে আমি এমনই পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েছি যে এই সামান্য পথটাও একা যেতে ভরসা পাচ্ছিলাম না। এমকি রাস্তাটা কোথা দিয়ে রাজারবাগ পৌছেছে তাও মনে পড়ছিল না অন্ধকারে। তবু এদিক ওদিক তাকিয়ে নিরাপদ চেহারার একটা বুড়া রিকশাওয়ালা দেখে উঠে পড়লাম। দুরুদুরু বুকে কোন অঘটন ছাড়াই কিছুক্ষনের মধ্যেই হোটেলে পৌছালাম। এই যে 'দুরুদুরু বুকে' ঢাকা শহরে চলাচল, এটা আমার বয়সের পরিবর্তন নাকি ঢাকা শহরের পরিবর্তন, বুঝি না।

ঢাকা এখন আর ভালো লাগে না। একদমই না। যখনই ঢাকা যেতে হয় কখন কাজ শেষ করে পালিয়ে আসবো সে চিন্তায় থাকি। এত মানুষের ভীড়, এত গাড়ী, এত ধুলা, এত ধোঁয়া, দমবন্ধ হয়ে আসে। যে রাস্তা, যে ফুটপাত দিয়ে বিশ-বাইশ বছর আগে স্বচ্ছন্দে হেঁটে বেড়িয়েছি সেখানে এখন পা রাখারও জো নেই। কোটি মানুষের শহর ঢাকা। ব্যস্ততম শহর ঢাকা। স্বার্থপর শহর ঢাকা। ঢাকার মানুষের স্বার্থপরতা নিয়ে খুব গল্প শুনতাম। আসলেই কী স্বার্থপরতা, নাকি নিরুপায়তা। জীবন যাপনের জন্য যখন এই স্বার্থপরতা অপরিহার্য, তখন তাকে আমি দোষ দেই না। আরেকটু কম স্বার্থপর হতে হলে যেটুকু সামর্থ্য থাকা দরকার সেটা সবার নেই, কিংবা বেশীরভাগের নেই। আমার বেশ কিছু কাছের বন্ধু ঢাকায় আস্তানা গেড়েছে অনেক বছর ধরে। এই স্বার্থপরতা কিংবা ব্যস্ততার পাতা জালে সবাই এমন আষ্টেপৃষ্টে আটকে গেছে কেউ কারো নিয়মিত খোজ খবর নেয়ার সুযোগ পায় না। অথচ একটা সময় ছিল দিনে অন্ততঃ একবার দুই বন্ধু মিলে ঘন্টাখানেক গেজাতো কোথাও বসে। ফকিরাপুলে রুপুদের বাসায় আমাদের সেই আড্ডাটার কথা মনে পড়লো। দিনরাত কেউ না কেউ আড্ডা দিচ্ছে ওখানে। পুরো ঘরে কার্পেট পাতা, বিরাট দুটো রুম। কেউ ঘুমোচ্ছে, কেউ সিগারেট টানছে, কেউ ডাইলের বোতল নিয়ে এসেছে সন্ধ্যা হতে না হতেই, কেউবা তাশ পেটাচ্ছে। বাজার রান্না সব করে দিচ্ছে অসাধারন রাধুনী রাশিদার মা। রাশিদার মা এখন কোথায় আছে কে জানে। এত ভালো বুয়া এমন ভালো রান্নার হাত আমি আর দ্বিতীয়টি দেখিনি। ঢাকার বন্ধুতো বটেই, চট্টগ্রাম থেকে আমরা সবকটা ওখানেই উঠতাম আড্ডার লোভে। প্রত্যেকেই এমন হুজুগে ছিল যে পরিকল্পনা ছাড়াই একবার সবাই মিলে হুট করে লালমনিরহাটের বাসে উঠে চলে গিয়েছিলাম বুড়িমারী সীমান্তে। থাকার জায়গা নাই বলে বাস কোম্পানীর এক স্টাফকে ধরে তার পেছনের একটা রুমে গাদাগাদি রাত্রিযাপন। কে একজন নিয়ে এল রূহ আফজা কালারের ভুটানী মদ। ভরপেট টাল মাতাল তরুনের দল পাশের ভারতীয় সীমানার কাছে গিয়ে পেশাব করে দিয়ে বিএসএফ এর হুংকারে হৈ হৈ ছুটে আসা। সেই জোৎস্না রাতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত রোডে নো ম্যানস ল্যান্ডের কাছে সেই মাতালীয় ছোটাছুটির স্মৃতি, আহ্ কী সুধাময়।

ঢাকার রাস্তার ব্যস্ততা সম্পর্কের মধ্যেও কেমন দুরত্ব সৃষ্টি করে একটা উদাহরন দেই। বছর তিনেক আগে আমি কারওয়ান বাজারের অ্যাংকর টাওয়ারে গেলাম একটা কাজে। ওই কাজ সেরে আগারগাঁও যেতে হবে, যাবার পথে জাহাঙ্গীর টাওয়ারে বন্ধু মামুনের সাথে দেখা করবো। অনেকদিন দেখা হয়না ওর সাথে। অ্যাংকর টাওয়ার থেকে বেরিয়েই জ্যামে পড়লাম। জাহাঙ্গীর টাওয়ার যেতে হলে গাড়ীকে বাঁয়ে অনেকদুর ঘুরে আসতে হবে বিপরীত রাস্তায়। সরাসরি যাবার উপায় নেই। কিন্তু মোড়ের কাছাকাছিই আটকে থাকলাম অনেকক্ষন। মামুন ফোন করছে বারবার। আমি তাকিয়ে দেখছি ওর অফিস বিল্ডিংটা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আমি ওখানে পৌছাতে পারছি না সহজে। অনেক সময় লাগবে ঘুরে আসতে। হেটে গেলে পাচ মিনিট লাগবে বড়জোর। কিন্তু গাড়ীকে জ্যামে রেখে কীভাবে হেটে যাবো। মুশকিলে পড়লাম। ওদিকে সময়ও কম। আগারগাঁওএর কাজ সেরে বাস ধরতে ছুটতে হবে আরামবাগে। হিসেব মেলাতে পারলাম না। অবশেষে এত টাইট শিডিউলের চাপে পড়ে মাত্র ২০০ গজ দুরে থাকা প্রিয় বন্ধুকে দেখার সাধ বিসর্জন দিতে হলো। ওকে ফোন দিয়ে বললাম, "দোস্ত মাফ করে দে, তোর অফিসের সামনেই আছি, কিন্তু উল্টাদিকে। রাস্তার যা অবস্থা তোর সাথে দশ মিনিট আড্ডা দেবার লোভ করতে গেলে আজকে যাওয়াটাই বাতিল করতে হবে, পরেরবার নিশ্চয়ই সময় করতে পারবো।"

তুই এখন কেমন আছিস জাহাঙ্গীর টাওয়ারের পাঁচতলায়? বন্ধু কী খবর বল, কতদিন দেখা হয় না!

একজন 'বাঘা মমিন'

পকেটে ঘাটতি বাজেটের মানিব্যাগ নিয়ে কোরবানীর গরু কেনার জন্য সাগরিকার রোডের সিডিএ মার্কেটের কাছাকাছি যেতেই একটা হৈ চৈ কানে এলো বাজারের গেটের দিক থেকে। লোকজন দিশেহারা হয়ে কিছু একটা থেকে বাঁচার জন্য বাজারের ভেতর থেকে পরি কি মরি করে ছুটে বেরিয়ে এসে রাস্তার চলন্ত-থামন্ত বাস-ট্রাকের সামনে গিয়ে পড়ছে। আরেকটু পেছনে চোখ পড়তেই যা দেখলাম তাতে আমিও তিন লাফে চলে গেলাম পাশ্ববর্তী দোকানের পেছনে। কারন ধাবমান জনতার পিছু পিছু ছুটে আসছে দড়ি ছেঁড়া কালো রঙের বিশাল এক পাগলা ষাঁড়। পরিস্থিতি ঠান্ডা হয়ে এলেও বাজারে ঢুকতে ভরসা পেলাম না। এমনিতে কোরবানীর হাটে যাওয়া আমার পছন্দ না, কুরবানি করতে গিয়ে খামাকা পাগলা গরুর হাতে শহীদ হওয়ার কোন ইচ্ছে নেই আমার। তবু পরিবারের একমাত্র পুরুষ হওয়াতে নিতান্ত বাধ্য হয়েই যেতে হয়। যাই ঠিকই কিন্তু বাজারে ঢুকিনা। এবারও যথারীতি সাথে আসা গরু ধরতে অতি উৎসাহী কাজের ছেলেটাকে বলি, যা ভেতর থেকে তোর পছন্দমতো কোন একটা গরু নিয়ে আয়, কিন্তু ত্রিশ হাজারের বেশী যাবি না।

আমি বাজারের বাইরে একটা বন্ধ দোকানের সামনের ভাঙ্গা দেয়ালের উপর পা ঝুলিয়ে বসে আয়েশ করে একটা সিগারেট ধরালাম। রাস্তায় গাড়ী-মানুষের হাড্ডাহাড্ডি ভীড়, গ্রামমুখী মানুষের অসহনীয় দুর্ভোগ দেখতে দেখতে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হলো গ্রামে যেতে হয়নি বলে। পাশে একটা গরু পেটানো বেত হাতে চুপচাপ বসে থাকা দীন-হীন মলিন পোষাকের বুড়ো লোকটাকে দেখে কথা বলতে ইচ্ছে হলো। মানুষকে জানা আমার একটা শখ। প্রথম পর্বের কথোপকথন এরকম।

-আপনার গরু আছে?
-না
-ওহ্........গরু ছিল?
-ছিল
-এখন নাই?
-নাই
-সব শেষ?
-শেষ

কথা জমলো না। নিরাসক্ত বুড়ো মুখ ফিরিয়ে রাস্তার মানুষ গননায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। একটু পরে ফস করে বিড়ি ধরালো একটা। খেয়াল করলাম তার দুপায়ের মাঝখানে একটা মশার কয়েল জ্বলছে। আবার চেষ্টা করলাম।
-খুব মশা, তাই না?
-খুব
-গরু কোথা থেকে আনছেন?
-দুর থেইকা
-কোন দুর
-ফরিদপুর
-অনেকদুর...কয়টা আনছেন?
-৩০/৩২টা
-লাভ কেমুন?
-হইছে...
-কয়দিন আগে আসছেন
-৭দিন
-কখন শেষ হইছে?
-আইজ
-এখানে আছিলেন কই?
-বোডিং-এ
আবার চুপ। আমার ছেলেটাও গরু নিয়ে ফিরছে না। কতক্ষন আর বসে থাকা যায়। আবার খাজুরে আলাপ জুড়াবার চেষ্টা। বুড়া আমাকে ছিনতাইকারী ভাবছে কিনা কে জানে। ফুসলিয়ে গরু বিক্রির টাকাগুলো হাতিয়ে নেবো ভাবছে হয়তো। তাই সাবধানে কথা বলছে। কিছুক্ষন নীরবতার পর বুড়ো আপনমনে কথা বলে উঠলো-
-আমার শেষ গরু দুইটা পাশের এক বেপারী কিনে নিছে। কদিনে খাতির হয়ে গেছিল তার সাথে। সকালে সে এসে বললোঃ
=কাহা, আমি এই গরু দুইটা নিবাম
=নেও, অসুবিধা কি
=দাম চাইবার পারবেন না কিন্তুক
=আইচ্ছা
=আমি যা দিমু নিতে হইবো
=ঠিক আছে নিমু
=কোন দরাদরি করতে পারবেন না
=কইলামতো, তুমি যা খুশী দাও
=এই লন, গুনতে পারবেন না।
=আইচ্ছা
-টাকার বান্ডিল পকেটে দিয়া চলে গেল। গুনে দেখি সত্তর হাজার আছে। অথচ আমি ভাবছিলাম পঞ্চাশ হবে। তারে আবার ডাক দিলাম।
=ওই মিয়া শোনো
=কাহা, আমি কিন্তুক আগেই কইছি আপনি কিছু কইবার পারবেন না। লেনদেন কিন্তুক শেষ।
=ঠিকাছে, কিন্তু গরুতো নিলা। কত বেচবা? মানে কত লাভ করবা এই দুইটা বেইচ্যা?
=দশ-পনের হাজার তো করবোই
=একটাতে না দুইটা মিল্লা?
=দুইটা মিল্লা
=তারপর কী করবা?
=বৌ-পোলাপান নিয়া মৌজে ঈদ করবাম।
=তুমি এই পাঁচ হাজার রাখো, আমারে বেশী লাভ দিছিলা। আমার লাভের কিছু অংশ তোমারে দিলাম।
=কী বলেন কাহা, আপনি আজব মানুষ!!
-তারপর সে খুশী হয়ে চলে গেল। আমার খুব ভালো লাগলো দেখে।
-আপনি তো মহান মানুষ চাচা
-আমি সামান্য মানুষ বাবা। একসময় ছোট চাকরী করতাম। রিটায়ার করার পর থেইক্যা গত ১৮ বছর গরুর কারবার করি। এইখান থেকে গিয়ে দশ বারোদিন আরাম করবো। তারপর গরুর হাটে গিয়ে ৪০টার মতো গরুবাছুর কিন্যা খামারে ঢুকায়া দিব। আগামী কোরবান পর্যন্ত ওগুলা বাইরে আসবে না। খইল-ভুষি আর যত রকম ভালো খাবার আছে সব খাওয়ামু। তারপর কোরবানীর একসপ্তাহ আগে বাইর কইরা সোজা হাটে। আমি কোন গরু ৫ হাজার টাকার উপরে কিনি না। ২ থেকে ৫ হাজারের মধ্যে সবগুলা।
-আপনি তো অনেক বড়লোক চাচা।
-নারে বাবা, ৬৫টাকা বেতনে সার্ভিসে যোগ দিছিলাম ৫০০০ টাকায় রিটায়ার করছি। রিটায়ার করার সময় ৬ লাখ টাকা নগদে পাইছি। সেই টাকায় এই গরুর কারবার করতাছি।
-কোন সার্ভিসে আছিলেন?
-এই আছিলাম ছোটখাট একটাতে। এহন কইতে চাইনা।
-গরু ব্যবসায় আপনার তো অনেক লাভ তাইলে?
-লাভ আছে, হিসাব করি না, সংসার ভালোই চলে আল্লার রহমতে
-ছেলে মেয়ে আছে?
-আছে
-কয়জন
-১১জন, ৭ ছেলে ৩ মেয়ে
-খাওয়ার লোক তো অনেক।
-তা আছে। নাতিপুতি মিলে ৫৪ জন
-বলেন কি? এতো বিরাট মিছিল।
-তা ঠিক, প্রতিদিন আমার ঘরে চাল লাগে ২৫-৩০ কেজি, তার উপর মেহমানতো আছেই।
-দিনে ২৫-৩০ কেজি? (আমি ভিড়মি খাই মনে মনে, আমার সারা মাসের বাজেট)
-অবাক হইলেন? আমার একার কত চাল লাগে আন্দাজ করেন তো?
-পারলাম না
-আমি দেড় কেজি চালের ভাত খাই এক বেলায়, রাতের বেলা রুটি খাই এক কেজি আটার
-বলেন কী? (আমি মনে মনে হিসেব করতে গিয়ে হোচট খাই)
-আমরা যা খাইছি আজকালকার পোলাপানরে তার কিছুই তো দিতে পারি না। সবকিছুতে ভেজাল।
-আপনার ছেলেমেয়েরা কী করে
-কেউ বিদেশে থাকে, কেউ দেশে কাজ কারবার করে
-গরুর কারবার আপনি একা করেন?
-একাই করি, আমার বাড়ীর সাথেই গরুর ঘর। দেড় বিঘার উপর বাড়ীটা।
-বিরাট ব্যাপার, দুধের গরু নাই?
-আছে দুইটা, বিশ কেজির মতো দুধ পাই, ঘরের খাওয়া চলে, আর একটা রামছাগল আছে, শখের পালা। ওইটাও দেড় কেজি দুধ দেয়। তবে রামছাগলের খরচ অনেক তিনবেলাই ভাত খায়, ছাগলের পিছনে ডেইলী খরচ লাগে ১০০ টাকার মতো। তবু শখের কারবার।
-আপনার শখ দেখে আমার লোভ লাগতেছে, আমিও আপনার সাথে গরুর কারবার করবো
-হে হে হে
-আপনার নাম কী? আপনার সাথে যোগাযোগ রাখবো
-আমার নাম আবদুল মমিন খান, তবে বাঘা মমিন বললে লোকে চিনে বেশী, ফরিদপুর সদরে বাস।
-বাঘা মমিন মানে?
-আমার দাদায় আমারে আদর কইরা ডাকতো, আমার নাকি সাহস বেশী
-৭১ সালে আপনি কোথায় ছিলেন? যুদ্ধ করছেন?
-যুদ্ধের সময় জান বাচায়া লুকায় আছিলাম
-পুলিশের অনেকে তো যুদ্ধ করেছে। আপনি পুলিশে ছিলেন, তাই না?
-জী। কিন্তু যুদ্ধের ঝামেলায় না গিয়ে পরিবারকে রক্ষা করছি
-আপনারে কোথায় পাবো ফরিদপুরে
-ফরিদপুর সদরে বাঘা মমিন বললে লোকে দেখিয়ে দেবে
-আপনি তো বিখ্যাত লোক
-আমার একটা কুকুর আছে, নাম ভুলু, সে আমার চেয়ে বিখ্যাত
-বলেন কী?
-ভুলু আমার সব কাজ করে দেয়, এমনকি বাজারটা পর্যন্ত।
-আরে, মজার ব্যাপার তো?
- আমি যদি ভুলুকে বলি, ভুলু যা বাজারটা নিয়ে আয়। ভুলু ঘেউ ঘেউ করে ছুট লাগাবে বাজারের নির্দিষ্ট দোকানে। ভুলুর গলার বেল্টে ছোট একটা ব্যাগে কাগজের স্লিপে বাজারের লিষ্টি দেয়া থাকে। ভুলু দোকানের সামনে গিয়ে দাড়ালে চেনা দোকানদার ভুলুর গলার ব্যাগ থেকে কাগজটা নিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ব্যাগে ভরে ভুলুর গলায় ঝুলিয়ে দেবে। কিন্তু ভুলু নড়বে না। দুবার ঘেউ ঘেউ করবে। তখন দোকানদার ছোট একটা আধপাউন্ডের পাউরুটি সামনে দিলে ভুলু গপগপ করে খেয়ে দুবার ঘেউ ঘেউ করে ধন্যবাদ দেবে। তারপর বাজারের থলেটা কামড়ে ধরে ছুট লাগাবে। রাত দশটার সময় বাড়ীর চারপাশে ছেড়ে দেই ওকে। সারারাত পাহারা দেয়।
-বাহ, আপনার কুকুরতো বড় আশ্চর্য? সরাইলের নাকি?
-জী, সরাইল থেকে আনছি

এমন সময় মোবাইলটা বেজে উঠলো আমার, গরু কেনার সংবাদ এলো। আমি বিদায় নিলাম বাঘা মমিনের কাছ থেকে। মানুষের জীবনের বিচিত্র কাহিনীর কথা ভাবতে ভাবতে বেরিয়ে এলাম বাজারের ভিড় থেকে।

Thursday, December 4, 2008

সাতকানিয়ায় এক স্বাধীনতা দিবসে

সময়টা ২০০২ সাল। জোট সরকার সদ্য ক্ষমতায় আসীন। সাতকানিয়া উপজেলার ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসের সরকারী অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেলাম। পরিবারের একজন সদস্য উপজেলার সরকারী কর্মকর্তা হবার সুবাদে এই দাওয়াত। উপজেলার একটা স্কুল মিলনায়তনে বিকেল ৫টায় অনুষ্ঠান শুরু হবে। একে একে অতিথিবৃন্দ আসছেন। আমাকে দর্শকদের প্রথম সারিতে নিয়ে বসানো হলো। এই প্রথম মফস্বলের এধরনের একটা অনুষ্ঠানে এসেছি। এই এলাকাটা জামাতের শক্ত ঘাটি, সেকারনে আমার আগ্রহটা একটু বেশী। অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষন এলাকার সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহনে আলোচনা সভা এবং আমন্ত্রিত সব মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সনদ ও পুরস্কার বিতরন।

অনুষ্ঠান শুরু হলো। অতিথিদের নাম ঘোষিত হচ্ছে। সভাপতি স্বয়ং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তাছাড়া অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে গন্যমান্য ব্যক্তিদের নাম ঘোষনা হচ্ছে। সবশেষে ঘোষিত হলো প্রধান অতিথির নাম। প্রধান অতিথি হিসেবে যার নাম ঘোষিত হলো, তিনি সাতকানিয়ার জামায়াতে ইসলামীর আমীর। প্রধান অতিথির নামটা শুনে আমি একটু চমকে গেলাম। এই লোক একাত্তরের চিহ্নিত রাজাকার এবং পাকিস্তানীদের প্রিয় দোসরদের একজন। এই রাজাকার আজ স্বাধীন দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের কে স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের জন্য সনদ ও পুরস্কার দেবেন!! হায় স্বাধীনতা, হায় বাংলাদেশ, হায় লক্ষ শহীদের আত্মা!!! পরে জেনেছি ওটা ছিল জোট সরকারের অবিস্মরনীয় বিজয়ের ফসল। এলাকায় আর কারো প্রধান অতিথি হবার জো নেই। ওই আমীরের আঙ্গুলি হেলন ছাড়া কারো সাধ্য নেই এখানে কিছু করার। আমার তক্ষুনি ছুটে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল অনুষ্ঠান থেকে। তবু থাকলাম কৌতুহলবশতঃ।

রাজাকার বেষ্টিত অনুষ্ঠানে স্বাভাবিকভাবেই একাত্তর নিয়ে স্মৃতিচারনে রাজাকারদের ভুমিকা নিয়ে কেউ কোন কথা বললো না। প্রধান অতিথি জামাত আমীর তার ভাষনে বললেন, "একাত্তরের যুদ্ধ খুব দুঃখজনক ঘটনা। আমরা যুদ্ধের সময় একেকজন একেকভাবে দেশের জন্য কাজ করেছি। প্রত্যেকের অবদান স্মরনীয়। আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে যুদ্ধের শুরুতে আমরা কীভাবে পাকিস্তানী হামলা থেকে আমাদের এলাকাকে রক্ষা করেছি, শান্তি কমিটি করেছি, বাহিনী করেছি। পাকিস্তানীদেরকে দেখাতে হয়েছে এলাকায় কোন মুক্তিযোদ্ধা নেই। এখানে সবাই পাকিস্তানের সমর্থক। ওদের সাথে হাত মিলিয়ে এলাকার জনগনের জানমাল রক্ষা করেছি। ব্যাপক ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছি সাতকানিয়াকে। আমি জানি কিছু মানুষ আমাদের ভুমিকা নিয়ে বিভ্রান্ত হয়েছে, আমাদর কার্যক্রমকে ভুলভাবে নিয়েছে। কিন্তু আসলে তো আমরা দেশের স্বাধীনতার জন্যই কাজ করেছিলাম। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ স্বাধীন হয়েছে। আজকে তাই আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করবো তাদের আত্মত্যাগের জন্য।" ইত্যাদি ইত্যাদি।

এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ধরে ধরে মঞ্চে ডাকা হলো পুরস্কার ও সনদের জন্য। খুব কষ্ট হলো হতভাগ্য মুক্তিযোদ্ধাদের করুন অসহায় নির্বাক চেহারা দেখে। যে দেশের জন্য এরা নিজের জীবনটাকে আজরাইলের হাতে তুলে দিয়েছিল বিনা দ্বিধায়, সেই দেশ কী দিয়েছে এদের? স্বাধীন দেশের ফসল খাচ্ছে আজ পাকিস্তানী দালালেরা। মুক্তিযোদ্ধাদের একজনকেও দেখলাম না সোজা হয়ে দাড়ানোর শক্তি আছে, এত অভাবী মানুষ এরা। প্রত্যেককে শাড়ি লুঙ্গি আর ভাতের থালা প্রদান করা হলো। একজন করুন স্বরে আবেদন করলেন লুঙ্গির বদলে একটা শাড়ী দিতে, কারন নিজের লুঙ্গির চেয়ে বউয়ের শাড়ীটা বেশী দরকার। আয়োজকদের কটুদৃষ্টির সম্মুখীন হয়েও অধিকার আদায়ে নাছোড়বান্দা তিনি। পরে প্রধান অতিথি রাজাকারের বদান্যতায় লুঙ্গির বদলে শাড়ী পেলেন তিনি!

পুরস্কার প্রদান পর্ব শেষ হলে প্রধান অতিথি মঞ্চ থেকে নেমে আসলেন। বসলেন আমার পাশে। বসে জামাতী কায়দায় হাত মেলালেন। আমার শরীর ঘিনঘিন করে উঠলো। ভাবলাম, এই হাতে কত মানুষ প্রান হারিয়েছে, কত মুক্তিযোদ্ধা পঙ্গু হয়েছে। হয়তো তাদের স্বজনেরা এই হলরূমেই আছে। আমি যেন একটা সিনেমা দেখছিলাম। এসব দৃশ্য আগে সিনেমার পর্দায়ই দেখতাম কেবল। আমার সাথে খুচরা আলাপ জমানোর চেষ্টা করলেন জামাত আমীর, বললেন আমাকে বোধহয় তিনি চেনেন, কোথাও দেখেছে ইত্যাদি। আমি তেমন জবাব দিলাম না। পাত্তা দিচ্ছি না বুঝতে পেরে তফাত রইলেন।

অনুষ্ঠানের শেষদিকে একজন হাড় জিরজিরে মুক্তিযোদ্ধা দর্শক গ্যালারী থেকে উঠে দাঁড়ালেন। চরম দারিদ্র আর বয়সের ভারে ন্যুজ, কিন্তু চোখটা এখনো ঈগলের মতো তীক্ষ্ণ। দেখে বোঝা যায় এ বান্দা মাথা নোয়াবার নয়। জানালেন মঞ্চে গিয়ে কিছু বলতে চান। সভাপতি অনুমতি দিলেন।

মঞ্চে উঠে জ্বালাময়ী কন্ঠ গমগম করে উঠলো হলরুমে, "আমাদের কী সৌভাগ্য!! আপনারা লুঙ্গি-থালা-বাসন দিয়ে আমাদের পুরস্কৃত করলেন। প্রতি বছরই করেন। কিন্তু আমরা কী বছরে একবার শাড়ি-লুঙ্গি-বাসন-কোসন পাবার জন্য যুদ্ধ করেছি, এইদেশ স্বাধীন করেছি? আমাদের জীবনটা কী এতই তুচ্ছ? কারা এদেশকে স্বাধীন করেছিল, আর কারা স্বাধীনতা চায় নি, আমরা কী তাদের চিনি না? যারা এদেশের স্বাধীনতা চায়নি তাদের কাছ থেকে পুরস্কার নিয়ে আমরা কী আজ লক্ষ শহীদকে সম্মান দিলাম? এটা সরকারের কাছে আমার প্রশ্ন। আমাদের আর কত অপমান করবেন এভাবে? চাইনা আপনাদের লুঙ্গি শাড়ী, চাইনা আপনাদের সার্টিফিকেট। আমরা শুধু মিনতি করছি, জীবনের তো বেশী বাকী নেই আমাদের, যেটুকু আছে তা অন্ততঃ আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে দিন।" চোখে পানি নিয়ে বক্তৃতা শেষ করলেন প্রৌড় মুক্তিযোদ্ধা।

পুরো হলরুমে পিনপতন নিস্তব্ধতা। রাজাকার এলাকায় এতটা সাহস কেউ আশা করেনি। শরীরে রোগা হলেও চেতনায় উজ্জীবিত এই মুক্তিযোদ্ধা। এই চেতনাই তো আমাদের শক্তি। এই শক্তির জোরেই আমরা বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলাম একাত্তরে। সবাই উঠে দাড়িয়ে সম্মান জানালাম সেই সাহসী মুক্তিযোদ্ধাকে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতের আঁধার নেমেছে তখন সাতকানিয়ায়। আমি অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করলাম অন্যরকম এক আবিষ্ট মন নিয়ে। আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি এখনো। এই চেতনা মরতে পারে না

Monday, December 1, 2008

VIVACE বাংলাদেশে বিপ্লব ঘটাতে পারে

এটি একটি স্বপ্নও হতে পারে, আবার বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সুত্রপাতও হতে পারে। ভাইবেক (VIVACE- Vortex Induced Vibrations Aquatic Clean Energy) নামের সদ্য আবিষ্কৃত এক প্রযুক্তি পুরো বিশ্বে বিদ্যুত আর জ্বালানী শক্তির হিসেব নিকেশ পাল্টে দিতে পারে। বন্যাপ্রবন নদীমাতৃক বাংলাদেশের জন্য এ হতে পারে বিশাল আশীর্বাদ। সাধামাটা বহমান নদী যোগাবে বিদ্যুত। জোয়ার ভাটার গতিকে বিদ্যুত শক্তিতে রূপান্তরিত করে গ্রাম গন্জের ঘরে ঘরে পৌছে দেয়া সম্ভব হবে। এছাড়াও বিদ্যুত ঘাটতিতে জর্জরিত বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে বিদ্যুত উদ্ধৃত্ত দেশ এমনকি পরিনত হতে পারে বিদ্যুত রপ্তানীকারক দেশে। খুব বেশী দুরের স্বপ্ন কী?


পরিবেশবান্ধব এই যুগান্তকারী প্রযুক্তির উদ্ভাবক যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাভাল আর্কিটেকচার ও ম্যারিন ইন্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর Dr. Michael M. Bernitsas। নদী বা সমুদ্রের বহমান স্বল্পগতির জলরাশির গতিকে কাজে লাগিয়ে ঘুর্নায়মান টারবাইনের সাহায্যে বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব। মিশিগান ইউনিভার্সিটির ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সফল হবার পর বর্তমানে ডেট্রয়েট নদীতে একটা প্রোটোটাইপ পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে


নীচে এই প্রযুক্তির সরল চিত্র দেয়া হয়েছে। চিত্রে স্রোতের সাথে টারবাইনের ঘুর্নন গতির সম্পর্ক দেখানো হয়েছে



বিস্তারিত সংজ্ঞা পড়ুন এখানে

A novel approach to extract energy from flowing water currents. It is unlike any other ocean energy or low-head hydropower concept. VIVACE is based on the extensively studied phenomenon of Vortex Induced Vibrations (VIV), which was first observed 500 years ago by Leonardo DaVinci in the form of “Aeolian Tones.” For decades, engineers have been trying to prevent VIV from damaging offshore equipment and structures. By maximizing and exploiting VIV rather than spoiling and preventing it, VIVACE takes this ‘problem’ and transforms it into a valuable resource for mankind.

Vortex Induced Vibrations (VIV) result from vortices forming and shedding on the downstream side of a bluff body in a current. Vortex shedding alternates from one side to the other, thereby creating a vibration or oscillation. The VIV phenomenon is non-linear, which means it can produce useful energy at high efficiency over a wide range of current speeds.

VIVACE devices have many potential advantages, which improve installation survivability in the hostile underwater environment and enable low-cost power production by decreasing capital cost and minimizing maintenance.

High energy density - permits low cost energy to be produced from relatively small installations - requiring up to 50 times less ocean acreage than wave power concepts.
Simple and rugged moving parts - allows for robust designs that can operate for long periods in the underwater environment with minimal maintenance.
Low dependence on ocean/river conditions - application of non-linear resonance permits useful energy to be extracted over a wide range of current speeds.
VIVACE and other renewable energy technologies also face regulatory hurdles. Again, VIVACE is advantaged by salient benefits over other technologies.

Non-obtrusiveness - installations can be positioned beneath the surface, thereby avoiding interference with other uses, such as fishing, shipping and tourism.
Compatibility with marine life - VIVACE utilizes vortex formation and shedding, which is the same mechanism fish use to propel themselves through the water.
Prototype, funded by the U.S. Department of Energy and the Office Naval Research, is currently operating in the Marine Hydrodynamics Laboratory at the University of Michigan. This device has met and often exceeded expectations; thereby, providing strong evidence to proceed to the next scale, a multi-kilowatt field demonstration.



প্রযুক্তির মূল ধারনা পাবেন উপরের চিত্র থেকে



প্রচলিত জালানীর সাথে তুলনামূলক চিত্র দেয়া হয়েছে এই চিত্রে


বাংলাদেশের ভাগ্য বদলের সম্ভাব্য এই প্রযুক্তি আমার নজর কেড়েছিল বলে ব্যক্তিগত আগ্রহে যোগাযোগ করেছিলাম প্রযুক্তির আবিষ্কারক Dr. Michael M. Bernitsas সাথে। বাংলাদেশে প্রয়োগের প্রাসঙ্গিকতা উল্লেখ করে আমার কিছু প্রশ্ন নিয়ে আমি ওনাকে একটা মেইল পাঠিয়েছিলাম গত ২৫শে নবেম্বর। উনি আমাকে নিন্মোক্ত জবাব দিয়েছেন-


Dear Mr Rashid:

The VIVACE generator is scalable and can work in rivers. The amount
of electricity depends on the available space and speed. We have
several models and we are building a prototype with the US Navy which
we expect to be tested by the end of 2009.

MMB

Michael M. Bernitsas, PhD
Professor of Naval Architecture and Marine Engineering
Professor of Mechanical Engineering
Director, Marine Renewable Energy Laboratory
University of Michigan
Fellow ASME, Fellow SNAME
http://www.engin.umich.edu/dept/name/faculty_staff/bernitsas/

CTO Vortex Hydro Energy
http://www.vortexhydroenergy.com/

W: (734) 764-9317
C: (734) 223-4223

======================================


আমি ২০০৯ সালের মধ্যে প্রোটোটাইপ পরীক্ষা শেষ হবার জন্য অপেক্ষায় আছি। তারপর বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করবো বিদ্যুত শক্তির বিকল্প সুত্র এই 'ভাইবেক' প্রযুক্তিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় আনার জন্য।


[সকল চিত্র এবং তথ্যসুত্রের কপিরাইট http://www.vortexhydroenergy.com]

জ্যোতির্ময় নন্দীর একটা আংশিক কবিতা

অই যে চশমাধারী, মারাত্মক সিরিয়াস
চেহারাসুরত, যেন সারা দীন-দুনিয়ার যাবতীয়
দায়ভার তারই বৃষ স্কন্ধে কেউ চাপিয়ে দিয়েছে;
যেন সে পটল তুললে দুনিয়া এতিম হয়ে যাবে।

কিন্তু অই চশমাধারী, মারাত্মক সিরিয়াস
চেহারাসুরত, জানে না যে ওর মতো কত শত
বালস্য বাল/ “হরিদাস পাল” পৃথিবীর-প্রকৃতির
প্রগাঢ় প্রস্রাবের ফেনায় ভেসে গেছে……..।”

[আংশিক]
.....................
জ্যোতির্ময় নন্দীর একটা কবিতা