Sunday, September 21, 2025

অদ্ভুত উটের পিঠে বাংলাদেশ.......

একজন সিনিয়র সচিব লিখেছেন ফেসবুকে। প্রকাশ্যে পাবলিক পোস্ট। পোস্টে উপস্থিত আছেন বর্তমান ও সাবেক অনেক সচিব, আমলা। তাদের মন্তব্য থেকেও বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এতদিন যা গুজব বলে উড়িয়ে দিতাম, এখন বোধকরি আর সম্ভব নয়। গভীর অন্ধকারে পতিত বাংলাদেশের ভবিষ্যত। চোরের বদলে ডাকাতই বাংলাদেশের ভাগ্য। সাক্ষ্য হিসেবে তুলে রাখলাম দুর্নীতির ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকুক।



কোটি কোটি টাকার সচিব!!!
লিখেছেন শামসুল আলম, সিনিয়র সচিব
---------------------------------------------

বর্তমান সরকারের সময়ে নগদ টাকায় সচিব হয়, এটা কোনো বাজে কথা নয়। চ্যালেঞ্জ করবেন না। এর প্রমাণ আমি নিজেই জানি। ছোট ছোট করে কয়েকটা ঘটনা বলি:
ঘটনা-এক
আমাকে যখন কেবিনেটে বসা আটকে দেয়া হলো, (গত ডিসেম্বরে ড. রশিদের দুদক চেয়ারম্যান, এবং আমার কেবিনেট সচিব হওয়া নির্ধারিত ছিল, প্রধান উপদেষ্টা আমার একটি নথিও সাক্ষর করেছেন), তখন একটা গ্রুপ আমাকে ফোন করেছিল, "স্যার আপনাকে কেবিনেটে বসিয়ে দেই, আমরা শত কোটি টাকা খরচা করবো, আপনি শুধু হ্যাঁ বলুন"। আমি বলেছি, “না। আমি ওই লাইনের লোক না। কিছু না হলেও আমি দুর্নীতির সাথে আপোষ করবো না!"
ঘটনা-দুই
আমি একদিন বসে আছি এক অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি রুমে, তিনি আমার ৬ ব্যাচ জুনিয়র। কথা বলছি। হঠাৎ করে আমাকে বলেই উঠে গেলেন। কোথায় গেল বুঝতে পারিনি। তবে পরে বুঝলাম আমার পেছন দিকে সোফায় বসে কথা বলে এসেছেন খুব নিরবে। আমি শুনতে পাইনি কিছুই। সিটে এসে আমাকে বললেন, "স্যার, ক্ষমা করবেন। দু’জন সমন্বয়ক এসেছিলেন, তাই কথা বললাম।" আরও বলল, "আমার সাথে চুক্তি করতে এসেছিল, আমাকে জ্বালানি সচিব করতে চায় মোটা টাকার অফারে। আমার একটা কালার পিডিএস দিতে হবে, একটা চুক্তিপত্রে সই করতে হবে, আর আমার ন্যাশনাল আইডি কার্ডের কপি দিতে হবে।" আমি জিজ্ঞাসা করলাম, "তুমি দিয়েছো?" বলল, “না স্যার, আমি দেইনি।” এরপর তার ফোন থেকে আরেকজনের স্যাম্পল দলিলের কপি দেখালো। “স্যার, এই যে দেখেন, একজনকে তারা ওইভাবে চুক্তি করে এক মন্ত্রনালয়ে সচিব করেছে। এইরকম চুক্তি করতে হতো। আমার চাকরি অনেক দিন আছে, আমি এই কাজে যাব না, স্যার”। আমি তাকে সাবাসি দিলাম। এখনও ওই অফিসারটি সচিব হতে পারে নি।
ঘটনা-তিন
মে মাসের ৩০ তারিখে আমার এক নির্ভরযোগ্য লোক একটা দলিল পাঠায়, সেটা বর্তমান বানিজ্য সচিব মাহবুবের ৩৫ কোটি টাকার চুক্তির দলিল। এতদিন এটা থামিয়ে রেখেছিলাম, দেখি ভেরিফিকেশন হোক। ভেরিফাই হয়ে এখন নিউজে পরিণত হয়েছে, তারপর আরো কিছু আসছে এগুলো নিউজ পেপারে।
ঘটনা-চার
১৩ ব্যাচের একজন অফিসার মাত্র তিন মাস সচিবগিরি করে উইড্র হয়ে ওএসডি অবস্থায় আছেন। বছরখানেক চাকরিও আছে। ওকে নিয়ে দুটি আলাদা সোর্স জানতে চায়, এই অফিসারটা কেমন। একটা প্রস্তাবে ৩০ কোটি, আরেকটা প্রস্তাবে ৩৬ কোটি- সচিব করার অফার আছে।
ঘটনা-পাঁচ
এর মাঝখানে, এক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফোন করলেন আমাকে সকাল সাড়ে ন’টার দিকে। তিনি আমাকে জানতে চাইলেন তার সচিব সম্পর্কে। কাস্টমস ক্যাডারের অফিসার, নতুন প্রমোশন পেয়ে সচিব হয়েছেন বিস্ময়কর ভাবে। তিনি জানতে পেরেছেন, এই সচিব ৩৫ কোটি টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে এখানে এসেছেন। একজন চরম দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, ঢাকায় পাঁচটা বাড়ি আছে, ওনার অস্ট্রেলিয়ান সিটিজেনশিপ আছে, পরিবার থাকে সেখানে। উনি আসলে যাবেন এনবিআরে, এবং সেখানকার জন্য কয়েক’শো কোটি টাকার ডিল রেডি আছে।
ঘটনা-ছয়
একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিদপ্তরের ডিজি হিসেবে নিযুক্ত আছেন এরকম পনেরো ব্যাচের এক অফিসারের জন্য ৩০ কোটি টাকার অফার আছে। দুর্যোগ সচিব করা হবে। ওই অধিদপ্তরের এডভাইজার মহোদয়কে আমি আজকে জানিয়েছি যে, আপনার ডিজি সচিব হয়ে চলে যাচ্ছে।
ঘটনা-সাত
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব করা হয়েছে ১০০ কোটি টাকার চুক্তিতে এবং আড়াই কোটি টাকা ক্যাশ দিয়ে। তারপরও চার মাসের বেশি থাকতে পারেনি, এটা এখন সচিবালয়ের সবাই জানে।
ঘটনা-আট
গেলো বছর শেষের দিকে শিপিং মিনিস্ট্রির সচিব বানাতে একজন অফিসারকে অফার দিয়েছিল একজন রিটায়ার্ড লেফটেনেন্ট জেনারেল এবং আলাদাভাবে এডিশনাল সেক্রেটারি এপিডি। ১২ কোটি টাকার ডিল। যারা টাকা খর্চা করবে, তারা পরে তুলে নিবে। কেবল সহযোগিতা করলেই চলবে। অফিসারটি রাজী হননি। পরে অবশ্য তিনি টাকা ছাড়াই সচিব হয়েছেন, এখনও আছেন দুর্বল জায়গায়। সংশ্লিষ্ট অফিসার নিজেই আমাকে ঘটনাটি জানিয়েছিলেন।
আর কয়টা বলব? কাজেই এই সরকারের সময়ে টাকা দিয়ে, অর্থাৎ কোটি কোটি টাকা দিয়ে সচিব হয়, এটা কোনো মিথ্যা কথা নয়। সত্য কথা। সম্পূর্ণ সত্য কথা।
এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না॥
----------------------------------------------------------------------------------
পোস্টের লিংক:
https://www.facebook.com/alampmobd/posts/pfbid0Ygso3kkiaL8LtJ8DEvbPvbG7Werqryvgqv9RcpBjELaNsPKgH4Sq9UpFiA8HXmmCl

পোস্টের স্ক্রিনশট:




দুটো গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য:

১. Inbox comment: স্যার, আপনার ফেসবুক পোস্ট দেখে কথা বলছি: আওয়ামী সরকারের চরম বঞ্চনার শিকার আমি ...তম ব্যাচের কর্মকর্তা উপসচিব হিসেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের খুবই অগুরুত্বপূর্ণ একটি কর্মসূচিতে ৮ বছরের বেশি পড়ে থাকতে বাধ্য হয়েছিলাম। বঞ্চনাকালে নীরবে বুৎপত্তি অর্জন করে বাংলাদেশের সেরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ পরিচিতি পাই (খোঁজ নিয়ে জানতে পারবেন)। এ সরকারের সময় অতিরিক্ত সচিব হই। আমার উপদেষ্টা আমাকে জানতেন, আমার জন্য হয়তো চেষ্টাও করেছেন দুর্যোগ সচিব করার জন্য। কিন্তু এখানে কী যেন কারিকুরিতে এ সরকারের সময়েই ওএসডি হওয়া আওয়ামী সচিব আবারও পদায়ন পায় দুর্যোগ সচিব হিসেবে। পুরো মন্ত্রণালয়ের কাজ ঝুলিয়ে দেয় সে। আমার সুনামকে হুমকি মনে করে উপদেষ্টাকে বুঝিয়ে আমাকে বিদায় করে দেয় মন্ত্রণালয় থেকে। আমাদের মুখ বন্ধ! কোথাও বলতেও পারি না। ২. Mahbub Kabir Milon একজন উপদেষ্টা তার দপ্তরের ডিজি নিয়োগ করবেন ফিট লিস্ট এর কয়েকজনের ভাইবা নিয়ে। তিনি দেশে ফেরেশতা হিসেবে খ্যাত। তিনি তার দপ্তরের ভাইবা নিচ্ছেন। সামনে বসা তিন সচিবসহ আরও কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্কর্তা। প্রার্থি ৩/৪ জন। দশ মিনিট করে পরীক্ষা চলছে। সবাইকে একই প্রশ্ন। শেষের জনকে যখন বলা হল, তোমার চাকুরী জীবনের বড় এচিভমেন্ট বল। এটা আগের সবাইকেই জিজ্ঞাস করা হয়েছে। শেষের জন ছিলেন চরম দুর্নীতিবাজ। তিনি হাসিনার আমলের লক্ষ কোটি টাকার এক প্রকল্পের কথা বললেন। তিনি পিডি ছিলেন সেখানে। যে প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির খবর দেশের সবাই জানে। এই প্রকল্পের নাম শোনার সাথে সাথেই উপদেষ্টা প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়ে বললেন, তুমি তো একটা চোর। মুখ দেখাও কেমন করে!! এত বড় দুর্নীতিবাজ হয়ে এসেছ ডিজি হবার জন্য!! রাগে গজড়াতে গজড়াতে উপদেষ্টা আর একটা কথাও না বলে টেবিল থেকে উঠে গেলেন। পরদিন সকালে শেষেরজনের ডিজি হিসেবে অর্ডার হল। স্বাক্ষী ৩ সচিবসহ আরও কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। এই হল ফেরেশতাদের কাহিনী স্যার।





No comments: