Sunday, November 12, 2017
পাওয়া না পাওয়ার সুখ
আমি পাইলাম, ইহাকে পাইলাম। এটার অর্থ কী? পাওয়া বলতে ঠিক কী বোঝায়?
আমার পকেটে অনেক কাংখিত একটি টাকার নোট আসলো। ৫০০ টাকার একটা চকচকে নোট। এই নোট একান্ত আমার। আমি চাইলে এটাকে খরচ করতে পারি, চাইলে ভাঙ্গাতে পারি। চাইলে ভেঙ্গে ভেঙ্গে দশ বারে খরচ করতে পারি, চাইলে একবারেও করতে পারি অথবা এটাকে ভাঙিয়ে দশটা পঞ্চাশ কিংবা পাঁচটা একশো অথবা অন্য যে কোন রূপে ভাংতি করিয়ে পকেটে রেখে দিতে পারি। এই পাঁচশো টাকার নোটটাকে আমি রীতিমত ভালোবেসে ফেললাম। এত সুন্দর নোট কখনো আমার হয়ে আসেনি আগে। এত বড় নোট আগে কখনো দেখিনি আমি। আমার ভীষণ আনন্দ আজ এটাকে পেয়ে। আনন্দে আমার খিদে চলে গেছে। রাতের ঘুম উধাও। আমি নাওয়া খাওয়া ছেড়ে শুধু পাঁচশো টাকার নোটের দিকে তাকিয়ে দিন কাটিয়ে দিতে পারবো। এই হলো পাওয়ার আনন্দ। আমি পাইলাম, যাকে পাইলাম তাকে ইচ্ছেমত ভোগ করিব। কেউ কিছু বলবে না, কেউ আপত্তি করবে না। এ শুধুই আমার। হ্যাঁ এটাকেই বলে পাওয়া। কিন্তু এই টাকা যখন খরচ হয়ে যাবে তখন কী পাওয়ার আনন্দটা জেগে থাকবে? না। খরচ হয়ে যাবার পর আর কোন আনন্দ থাকে না। তখন বড়জোর টাকা পাওয়ার এবং খরচের স্মৃতির সুখ।
যখন কোন মানুষকে পাওয়ার কথা বোঝানো হয়, তখন ঠিক কিরকম দাঁড়ায় ব্যাপারটা? ভালোবাসার মানুষটিকে আমি পাইলাম। পেয়ে যাবার পর মানুষও কি এরকম খরচ হয়ে যেতে পারে? টুকরো টুকরো করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে মানুষটির দর্শনসুখ, সঙ্গসুখ, স্পর্শসুখ উপভোগ করতে একসময় ফুরিয়ে যাওয়া? ইন্দ্রিয়ের ভেতর এই তিনটি সুখই মানুষ পেতে পারে প্রিয় মানুষ থেকে। তারপর একদিন সেই সুখের উপর মরিচা পড়ে, আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যেতে থাকে ঐন্দ্রিক আকর্ষণ। পাশে থাকলেও সেই মানুষকে আগের মতো ভালো লাগে না। বিরক্ত লাগে কখনো কখনো। যার উপস্থিতি একসময় প্রবল রকমের কামনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল, তার অনুপস্থিতিই তখন কামনা হয়ে দাঁড়ায়। বলা হয় সম্পর্ক ঝুলে গেছে। আসলে এখানেও টাকার মতো খরচ হয়ে গেছে মানুষটি। তখন বড়জোর স্মৃতিটুকু বেঁচে থাকে। কিন্তু খরচ হয়ে যাওয়া জীবিত মানুষের স্মৃতিও বিরক্তির আধার হয়। এমন সময়গুলো মানুষের দুঃসময়।
আসলে পাওয়া জিনিসটা একটা মুহূর্তসুখ মাত্র। পাওয়া মানে কাছে পাওয়া কিংবা দর্শন পাওয়া কিংবা স্পর্শ পাওয়া। তিনটি পাওয়াই একান্ত অনুভবের ব্যাপার। সব রকম পাওয়াই আসলে একেকটি আপেক্ষিক অনুভব। যে অনুভবের ঘটনা ঘটতে পারে বাস্তবের কোন সঙ্গস্পর্শ ছাড়াই। শুধু চোখে দেখে, কানে শুনেও মানুষ পাওয়ার সুখ অনুভব করতে পারে। যদি অনুভবের শক্তি তেমন হয়। এটা মোটেও অলৌকিক নয়, নিতান্তই মানবিক বোধের গভীরতা। যার ছবি দেখে আমার ভালো লাগলো, যার চিঠি পড়ে আমার ভালো লাগলো, তাকে শব্দ এবং দৃশ্যের মাধ্যমেই স্পর্শসুখ অনুভব করতে সক্ষম মানুষের মন। একটা বাস্তব মানুষকে স্পর্শ করে যে সুখ, যে রাসায়নিক বিক্রিয়া আমাদের মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করে, আনন্দ ও পুলক জাগায় শরীরে, সেই ঘটনা ঘটতে পারে শুধুমাত্র ছবি দেখে কিংবা কল্পনা করেও। তাহলে কাছে না পেয়েও, স্পর্শ না করেও পাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। সত্যিকারের পাওয়া যেমন ঘটনা ঘটার পর স্মৃতিতে ঠাঁই নেয়, কল্পনায় ঘটা ঘটনাটিও একইভাবে স্মৃতিভুক্ত হয়। যখন স্মৃতিভুক্ত হয় তখন দুই ঘটনার মধ্যে পার্থক্য খুব বেশী থাকে না।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment