(ছবি কৃতজ্ঞতা : রায়হান সাঈদ. স্থান : মানিকগঞ্জ)
ছবিটার দিকে তাকালে চোখ ফেরানো যায়
না। আটকে থাকে তার মোহনীয় মাধুর্যে। এই ফ্রেমটার ভেতরে এমন কিছু উপকরণ আছে যা
মুহূর্তের দৃশ্য হলেও চিরন্তন কোন অনুভব যেন ভেসে আছে। ওই নীলাভ কুয়াশা রঙের নরম
নরম নদী, ওপারে হলুদ সরষে ক্ষেতের হলুদ রেখা। নদীর মাঝে
চার পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা নিঃসঙ্গ কুঁড়ে ও তার প্রতিচ্ছায়া। শুকনো গাছের ডালে বসা কাক
বা চিল। অভিভূত হয়ে থাকার মতো একটি মুহূর্ত এখানে স্থির হয়ে আছে। বুঝি এমনসব
দৃশ্যই জীবনানন্দের কাব্যে ভেসে থাকে। এই গোটা ছবিটাই যেন একটি কবিতা। বছর আসে বছর
চলে যায় কিন্তু বাংলার বুকে এই দৃশ্যগুলো পরমায়ু নিয়ে যুগ যুগ টিকে থাকে।
ছবিটা দেখে জীবনানন্দের 'কুড়ি বছর পর' কবিতাটির কথা মনে পড়ে যায়। ছবিটা
দেখার সাথে সাথে যে লাইনটি মাথায় চলে এসেছিল - তখন
হলুদ নদী নরম নরম হয়........এখানে নদী হলুদ নয়,
সরষে ক্ষেতের হলুদই নদীতে ভেসে এসেছে যেন।
আবার বছর কুড়ি পরে
তার সাথে দেখা হয় যদি!
আবার বছর কুড়ি
পরে-
হয়তো ধানের ছড়ার
পাশে
কার্তিকের মাসে-
তখন সন্ধ্যার কাক
ঘরে ফেরে-তখন হলুদ নদী
নরম নরম হয় শর কাশ
হোগলায়-মাঠের ভিতরে!
অথবা নাইকো ধান
ক্ষেতে আর,
ব্যস্ততা নাইকো আর,
হাঁসের নীড়ের থেকে
খড়
পাখির নীড়ের থেকে
খড়
ছড়াতেছে; মনিয়ার ঘরে রাত, শীত আর শিশিরের জল!
জীবন গিয়েছে চলে
আমাদের কুড়ি কুড়ি বছরের পার-
তখন হঠাৎ যদি মেঠো
পথে পাই আমি তোমারে আবার!
হয়তো এসেছে চাঁদ
মাঝরাতে একরাশ পাতার পিছনে
সরু সরু কালো কালো
ডালপালা মুখে নিয়ে তার,
শিরীষের অথবা
জামের,
ঝাউয়ের-আমের;
কুড়ি বছরের পরে
তখন তোমারে নাই মনে!
জীবন গিয়েছে চলে
আমাদের কুড়ি কুড়ি বছরের পার-
তখন আবার যদি দেখা
হয় তোমার আমার!
তখন হয়তো মাঠে
হামাগুড়ি দিয়ে পেঁচা নামে
বাবলার গলির অন্ধকারে
অশথের জানালার ফাঁকে
কোথায় লুকায় আপনাকে!
চোখের পাতার মতো
নেমে চুপি চিলের ডানা থামে-
সোনালি সোনালি
চিল-শিশির শিকার করে নিয়ে গেছে তারে-
কুড়ি বছরের পরে
সেই কুয়াশায় পাই যদি হঠাৎ তোমারে !
[আবার কুড়ি বছর পরে -
জীবনানন্দ দাশ]