Monday, January 28, 2013
অতিপ্রাকৃত
-আমি নিশ্চিত
-এতটা নিশ্চিত কি করে হলেন?
-আমাকে কাপ্তাইয়ের সেই চাকমা বৈদ্য বলেছে
-এর আগেও তো আপনি প্রতারকের পাল্লায় পড়েছিলেন। কাগজ দিয়ে আপনাকে টাকা বানিয়ে দেবার যাদু দেখিয়েছিল এক রোহিঙ্গা প্রতারক
-করেছিল। এরপরে এটা নিয়েও আরেক রোহিঙ্গা অনেক টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে নকল মূর্তি ধরিয়ে দিয়েছে
-তারপরও আপনার বিশ্বাস, ওখানে কিছু আছে?
-আছে। তোমাকে বলি। ঘটনাটা আমি স্বপ্নেই পাই প্রথমবার। তারপরই বৈদ্যের সন্ধানে যাই। রোহিঙ্গা বৈদ্য এসে মেডিসিন কেনার নামে নানান টালবাহানা করে প্রায় পনের লাখ টাকার মতো নেয়
-এত টাকা!!
-হ্যাঁ। আমি লোভে পড়েছিলাম। আমাকে বলেছিল ওখানে যে গুপ্তধন আছে তার মূল্য পঞ্চাশ কোটি টাকার কম না।
-আর আপনি তা বিশ্বাস করলেন?
-করেছি কারণ ওই গুপ্তধনের অস্তিত্ব আমাকে জানান দেয় অদৃশ্য কিছু একটা।
-ঠিক কোন জায়গায় আছে গুপ্তধন?
-আমার বাগানবাড়িতে যে পুকুর আছে পুকুরের পাড়ে একটা মাটির ঘর আছে। সেই ঘরের নীচে আছে, ঘরের আশেপাশেও।
-যদি জানাজানি হয় তাহলে আর কেউ এসে খুড়ে নিয়ে যেতে পারে না?
-না, ওটা আর কেউ খুড়তে পারবে না। আমার উপস্থিতি ছাড়া কোন বৈদ্যও পারবে না
-বৈদ্য কি করে খুড়ে?
-বৈদ্য ওখানে কি একটা মেডিসিন দেয়। তারপর ওই জায়গায় একটা গোলাকার আলোর চাকতি দেখা যায়। সেই চাকতির নীচের মাটি কাঁপতে থাকে থরথর করে। তারপর মাটির নীচ থেকে পিতলের ডেকচি বা কলসী উঠে আসে আপনাআপনিই
-আপনি নিজের চোখে দেখেছেন?
-আমার সামনেই তো। কিন্তু যে মুর্তিগুলো ওখানে ছিল, সেগুলো কোন ফাঁকে বদলে নিয়েছে সেই বৈদ্য। আমাকে ধরিয়ে দিয়েছে নকল মুর্তি।
-এখানে এত মুর্তি কোত্থেকে আসবে
-এগুলো একসময় বড়ুয়াদের পাড়া ছিল। আরাকানীদের পূর্বপুরুষ বাস করতো। তাদের কারো রেখে যাওয়া সম্পদ হতে পারে।
-আপনি কি করে টের পান গুপ্তধনের অস্তিত্ব?
-আমি যখন বাগানবাড়িতে যাই, একটা সাপ আমার সাথে সাথে হাটে। সম্ভবত ওই সাপটা গুপ্তধন পাহারা দেয়। আমি চলে আসলে সাপটাও কোথায় চলে যায়। আমি যখন পুকুরপাড় দিয়ে হাটি, মাটির নীচ থেকে একরকমের সিগন্যাল আসে আমার কাছে। আমি টের পাই ওখানে আছে, এমনকি সাইজও টের পাই। যেমন পুকরপাড়ে ঘরটার বামদিকে যে গর্তমতো জায়গা আছে সেখানে একটা সিন্ধুক আছে। আমি নিশ্চিত খুড়লে পাওয়া যাবে।
-আপনি কুসংস্কারে ভুগছেন
-আরো অনেকে বলেছে। কিন্তু আমি জানি এটা কুসংস্কার না। এখানে যে কিছু আছে সেটা সত্যি। আমাকে সেই কাপ্তাইয়ের বৈদ্য বলেছে।
-বৈদ্য কি বললো"
-বৈদ্য বললো 'আমি আগে ভুল করেছি। এই কাজের জন্য কোন বৈদ্য টাকা নিতে পারে না। যারা টাকা মেরে চলে গেছে তারা প্রতারক চক্র। আমি এই কাজের জন্য কোন টাকা নেবো না। তবে এখন না। আরো পনের মাস অপেক্ষা করতে হবে। তারপর আমাকে ডাকবেন। আমি এসে তুলে দেবো। তবে একটা শর্ত। আমাকে একটা জিনিস দিতে হবে। আমি যে গর্ত খুড়বো সেখান থেকে আমার জন্য কিছু মাটি দিতে হবে। আমি ওই মাটির প্রকৃতি দেখে বুঝবো আর কোথায় কোথায় এরকম জিনিস আছে।'
-আপনি এই বৈদ্যকে বিশ্বাস করেন?
-অবশ্যই করি।
-আপনি মনে হয় অলৌকিক কোন প্রভাবে পড়েছেন
-আমি জানি না। কিন্তু গত দেড় বছরে আমি ফকির থেকে রাজা হয়ে গেছি।
-তোমাকে তো বললাম তখন। জমির ব্যবসা করে আমি কি অবস্থা করেছি।
-সেটা বাস্তবিকই আশ্চর্য ঘটনা। তিন বছর আগেও আপনার কিছু ছিল না। সব হারিয়ে বসেছিলেন। আবার কি করে এতসব
-আমি নিজেও বুঝি না। আমার পৈত্রিক সম্পদের বাইরে আর কিছুই ছিল না। কিন্তু গত দেড় বছরে আমি একের পর এক জমি কেনাবেচা করেছি। শেয়ারবাজার ইউনিপেটু আমার কাছে ফেল করেছে। আমার পুঁজি ছিল লাখ দুয়েক টাকা আর মানুষের বিশ্বাস।
-আপনি কি মানুষের বিশ্বাস নিয়ে খেলেছেন
-আমি কখনো বিশ্বাসভঙ্গ করিনি। আমি লোকের কাছ থেকে সস্তায় জমি কিনে দাম দিয়ে বিক্রি করেছি
-জমি বেচে এত লাভ?
-আমি খুব দ্রুত কেনাবেচা করেছি। মুড়ি মুড়কির মতো। দুলাখ টাকার জমি দশলাখ টাকা। দশলাখ টাকার জমি এক কোটি টাকা। একেরপর এক কিনেছি আর বিক্রি করেছি। প্রতিমাসে আমাকে কয়েকটা রেজিষ্ট্রি করতে হতো। আমার দলিল দেখেছো না? ওরকম আরো তিন বস্তা আছে। এখন আমি পনের বিশ কোটি টাকার মতো সম্পদ করেছি।
-মাত্র দেড় বছরে?
-আরো আছে। এই এলাকার অর্ধেক জমির দলিল আমার কাছে আছে। আমার শক্তি হলো টাকা। বাকী লোকের কাছে টাকা নাই। ব্যাংক লোন বন্ধ হবার পর কেউ জমিজমা কিনতে পারছে না। আমার কাছে নগদে যে টাকা আছে সেটা দিয়ে আমি একশো কানির একটা প্রজেক্টে হাত দিতে যাচ্ছি।
-আপনি দুঃসাহস করছেন
-আমি পারবো। আমার সাথে কাজ করার জন্য অনেকগুলো পার্টি তৈরী আছে
-এত জায়গা কেনেন, দখল নিতে সমস্যা হয় না? মাস্তান কিংবা অন্য উপদ্রপ
-হাসালে তুমি
-কেন
-আমার সাথে সব রকম লোকের যোগাযোগ আছে। এসব কাজ করতে গেলে সাধু থাকা চলে না
-যেমন
-আমার থানায় লোক ঠিক করা আছে। জমি কেনা হলে আমি থানায় জায়গার ঠিকানা আর নগদ কিছু দিয়ে আসি। আমার লোক গিয়ে জায়গা দখল নিয়ে নেয় পুলিশের উপস্থিতিতে।
-আপনাকে দেখে তো মনে হয় না আপনি এত কিছু করতে পারেন
-এখানকার সব রাজনৈতিক দলকে টাকা দেয়া আছে। কেউ ঝামেলা করে না। আমি ঘরে বসেই কাজ সারি। আমাকে রেজিষ্ট্রি অফিসেও যেতে হয় না।
-গুপ্তধন আর জমি নিয়ে আপনি তো এই এলাকায় জমিদারী কায়েম করতে পারেন।
-হাহাহাহা
-আপনার জন্য ভয়ের একটা খবর আছে
-কি?
-যে গাছ দ্রুত বাড়ে তার মাথা ভেঙ্গে যায় দ্রুত। আপনাকে কোথাও থামতে হবে
-আমি তো থামতে জানি না। আমাকে আরো কয়েক বছর এগিয়ে যেতে হবে। আর কেউ আমাকে পেছনে ফেলার আগে সবাইকে পেছনে ফেলতে হবে। আমার অনেক দিনের স্বপ্ন এটা।
-উন্মাদ স্বপ্ন
নিয়ামুল বশীরের সাক্ষাতকার এখানেই শেষ। সাদামাটা মানুষটিকে দেখে বোঝা যায়না তার ভেতরে এতকিছু। রীতিমত রহস্যময় ব্যাপার। আমি তার সম্পদের উৎসগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেছি। আমার অবিশ্বাস্য লেগেছে। তবে বৈদ্য যাদুকরের খেলার সময় উপস্থিত থাকার ইচ্ছে ছিল। সুযোগের অভাবে পারা যায়নি। পৃথিবীতে এখনো ব্যাপক রহস্যময় ঘটনা রয়ে গেছে। লোক চক্ষুর আড়ালেই ঘটে যাচ্ছে অদ্ভুতুড়ে অনেক ঘটনা। অতিপ্রাকৃতিক শক্তির উপস্থিতি স্পষ্ট। বশীর কি তাদেরই একজন?
Monday, January 14, 2013
সুরঞ্জনা, তোমার হৃদয় আজ ঘাস
-অনেক বছর আগে বিগত শতকের শেষ দশকে একবার তোমাকে দেখেছিলাম। দুপুর ঘুমের অতলে ডুব দিয়ে আমি জ্বরতপ্ত শরীরে তোমার অস্তিত্ব অনুভব করছিলাম অনিন্দ্য সুন্দর এক স্বপ্নে। চোখ মেলে দেখি তুমি ঠিক সেখানেই দাঁড়িয়ে একটি হেমন্ত বিকেল আলোয় রাঙিয়ে ........তারপর বহুযুগ কেটে গেছে তোমাকে দেখিনি আর কখনো। কাল রাতে আবারো তুমি। চেনা অচেনার আলো আঁধারিতে। এবার আরো ঘনিষ্ট নিঃশ্বাসে। আমাকে জড়িয়ে তুমি বুকের আশ্রয়ে। তোমার চুলের অরণ্যে আমি ডুবে আছি। তোমার নিঃশ্বাসের শব্দ আমার বুকের মাঝে। পৃথিবীকে উপেক্ষা করে আমি তোমাকে আগলে রেখেছি........জেগে ওঠার অনেকক্ষণ পরেও আমি তোমার চুলের অরণ্যে ডুবে থাকি, আমার হাতে এখনো সেই স্পর্শ, সেই উষ্ণতা, সেই সুখ। আমার বুকে এখনো তোমার নিঃশ্বাসের বেদনা, তোমার কান্নাভেজা চোখ। আমি আজ সারাদিন তোমার স্পর্শ বয়ে বেড়াবো।
-এটা কি সত্যি না চাপা?
-চাপা হবে কেন? বিশ্বাস হয় না?
-না হয় না
-কেন হয় না
-তুমি এমন করে কখনো দেখোনি
-দেখেছি, বলিনি
-কেন বলোনি?
-বলিনি অনিশ্চিত একটা বাধায়
-কিসের বাধা
-বাধা তোমার, বাধা আমার
-আমার কোন বাধা ছিল না
-তুমি ঠিক জানো?
-আমি জানি
-আমি ভেবেছি অন্য
-তুমি ভুল ভেবেছ
-ভুল?
-হ্যাঁ ভুল...তোমার ভুলের খেসারত দিয়েছি আমি, দিচ্ছ তুমি
-ভুল যদি জানতে তবে শুদ্ধ করতে এলে না কেন
-তুমি অভয় দাওনি বলে
-আমাকে দেখে অভয় পাওয়া যায় না
-যায় না
-কেন?
-তুমি একটা কাপুরুষ, নিজেকে প্রকাশে অক্ষম
-এতবড় অপবাদ দিলে?
-এটা অপবাদ নয় কমপ্লিমেন্ট ধরে নাও, তোমার আরো বড় শাস্তি পাওনা
-কেন বলছো?
-তুমি আমাকে আজীবন বয়ে বেড়াবার একটা ক্ষত উপহার দিয়েছো
-আমি জানতাম না
-তুমি কিছুই জানতে না। না জানার ভাণ করতে তুমি ওস্তাদ
-আবারো অভিযোগের আঙুল
-আবার নয়, বারবার, এটাই তোমার পাওনা
-বাকী জীবন এটাই পেয়ে যাবো?
-নয়তো কি?
-তাহলে সেই যে না বলা অনুভুতিগুলো?
-সেগুলো তো এখন ছাই
-ছাই?
-ঠিক তাই
-আর কিছুই অবশিষ্ট নাই?
-আর কিছুই নাই
-তাহলে কালরাতের স্বপ্নটা?
-সে তোমার একার
-সেই স্পর্শ?
-সে তোমার একার
-সেই চুল?
-সে তোমার একার
-সেই নিঃশ্বাসের উষ্ণতা?
-সেও তোমারই, কেবলই তোমার
-তুমি আর কখনো আসবে না?
-ছাই উড়িয়ে যদি দৃষ্টিশক্তিকে রূদ্ধ করতে চাও, তবে অন্ধকার হয়ে আসবো
-অন্ধকার হয় হোক, তবু এসো
-অন্ধকারে কিছুই পাবার নয়
-তবু অন্ধকারই আমাদের শেষ ঠাঁই, জগতের শেষ পর্যন্ত অন্ধকারই সত্যি
-সেই সত্যি তুমি বিশ্বাস করো?
-এটা সত্যের আগুন। এখানে আলো আঁধার সবকিছুই আপেক্ষিক। কেবল সত্যি সেই নিঃশ্বাসের উষ্ণতা, যা এখনো বুকের ভেতর বহন করে যাই আমি।
-তোমার শেষ ইচ্ছেটা বলো
-আমি কেবল তোমার চুলে দুর্বাঘাসের মায়া দিয়ে হাত বুলাতে চাই.....তোমার চুলের ঘ্রাণের মায়ায় শেষটুকু নিঃশ্বাস.....
[উনিশ শতক+]
Sunday, January 13, 2013
দিনের পর দিন
অনেক কিছু আগের মতো থাকবে না। সময়, জীবন, পৃথিবী। বদলে যাচ্ছে প্রতিদিন। একটু একটু করে। আগামী কালের কথা জানি না। আজকের দিনেই থাকি। আজকের সম্পূর্ণ দিনটাও হাতে নেই। আছে কেবল এই মুহুর্তটা। এখন ঘড়িতে সময় ১১টা বেজে ১৯ মিনিট। আমি যে টেবিলে কাজ করছি সেখানে একটা কম্পিউটার একটা টেলিফোন দুটো কলম, একটা ক্যালকুলেটার, একটা টেলিফোন, একটা মোবাইল, কিছু ফাইলপত্র, একটা কার্ডহোল্ডার, একটা ডেস্ক ক্যালেণ্ডার, একটা চশমার খাপ, একটা সিডি, দুটো ডায়েরী একটা পত্রিকা আছে। এদের প্রত্যেকে আমার বর্তমান সঙ্গী। নীরব সঙ্গী বলা চলে। কেননা আমার টেলিফোনটা দৈনিক মাত্র কয়েকবার বাজে। কোন কোনদিন একবারও বাজে না। বাইরের কোন ফোন আসে না তেমন। যা আসে সব অফিসেরই ভিন্ন ডিপার্টমেন্টের ইন্টারকম। আমার মোবাইল এই অফিসের সবচেয়ে নিষ্ক্রিয় যন্ত্র। এটা আমার কাছে সবসময় থাকে ঠিকই কিন্তু ব্যবহার সবচেয়ে কম। আমাকে খুব বেশী মানুষ ফোন করে না। আমিও করি না। খুব ঘনিষ্ট বন্ধু বা পরিবারের বাইরে কোথাও কল আসা যাওয়া করে না। আমি আগে হাতে ডায়েরী লিখতাম এখন লিখি কম্পিউটারে। বাংলা শিখেছিলাম বলে তৃপ্ত এখন। আমি আজকের দিনে এই মুহুর্তের কথা জানি। আমি বিকেলের কথা জানি না, দুপুরের কথা জানি না, মাঘ নিশীথের কথা জানি না। আমি এই মুহুর্তে বসে বসে লিখছি, আমার টেবিলের সামনের সাদা টাইলসে এক ঝলক শীতের রোদ্দুর, জানালা দিয়ে দূরের পাহাড়ের ধোঁয়াশা আর বন্দরে নোঙর করা বিদেশী জাহাজ দেখতে দেখতে ভাবি আজকেও প্রতিদিনের মতো একটা দিন। আমি একটু একটু করে মানবিক গুনাবলী হারিয়ে পথের ধুলোয় বসে পড়ার জন্য দিন গুনছি।
২.
প্রযুক্তির সাথে দৌড়ে পারা যায় না। বই ছাড়া অন্য সবকিছু প্রযুক্তির আওতায় চলে এসেছে। গান শোনা, ছবি তোলা, মুভি দেখা। শখের মধ্যে এই কটা। গান মোবাইলে চলে এসেছে, ছবিও। তবে মোবাইল ছবি পছন্দ না। পছন্দ না হলেও সুযোগটা দেয়া আছে মোবাইলে। কথা বলা ছাড়া মোবাইলে আমি শুধু গানই শুনি। আর মাঝে মাঝে গুগল ম্যাপ। ক্যামেরাও প্রযুক্তির চরমে। দশ বছর আগে যে ক্যামেরা কল্পনাতীত ছিল। অনেক দামী ক্যামেরায় যা ছিল না তা অনেক সস্তা ক্যামেরায় চলে এসেছে। ছবি তোলা নয় কেবল, ভিডিও করাও সম্ভব। এবং দেখা গেছে ভিডিও কোয়ালিটি সাধারণ হ্যাণ্ডিক্যামের চেয়ে অনেক ভালো। এবং সেটা ৩২ ইঞ্চির এলসিডি মনিটরে হাই ডেফিনিশানের ঝলকানিতে প্রকাশ করে। এলসিডিও পুরোনো প্রযুক্তি হয়ে যাচ্ছে এলইডি আসার পর। তবু দামের পার্থক্যের কারণে এলসিডির দিকেই গেলাম। আমার দরকার ছিল বড় পর্দায় মুভি দেখা। ল্যাপটপে মুভি দেখতে দেখতে চোখটা ঘষা কাঁচ হয়ে যাচ্ছিল। ইচ্ছে করছিল একটা প্রজেক্টর কেনার। কিন্তু প্রজেক্টরের দাম যতটা মাথাব্যথা দিচ্ছিল তার চেয়ে প্রজেক্টরের সুযোগহীনতা আরো বেশী। মানে আমি যেরকম চাইছিলাম সেরকম প্রজেক্টর বাজারে নেই। আমি চাইছিলাম ছোট্ট একটা প্রজেক্টর যেটায় পেন ড্রাইভ থাকবে, যেটায় স্পীকারও থাকবে। ফলে আমি সরাসরি পেনড্রাইভ থেকে মুভি দেখতে পাবো। আমার একটা ইউএসবি হার্ডড্রাইভ আছে যেখানে কয়েকশো মুভি জমা। অদেখা মুভিগুলো বড় পর্দায় দেখার জন্য জমিয়ে রেখেছিলাম। Sony Bravia আমাকে সব ঝামেলা থেকে মুক্তি দিল। এটায় সবকিছু আছে যা যা আমি এতদিন ধরে খুঁজছিলাম। এখন আর ডিভিডি, ল্যাপটপ কিছুই লাগে না। মুভি দেখার জন্য এর চেয়ে আরামদায়ক যন্ত্র আর হতেই পারে না। তবে ইউএসবি না থাকলে এই টিভি আমার কোন কাজেই আসতো না। এটাতে আমি টিভির কোন অনুষ্ঠান দেখি না। শুধুই মুভি। সেদিন একজন বললো, কিনলাম যখন ইন্টারনেট টিভি কিনলাম না কেন। একসাথে ইউটিউবও দেখার সুযোগ পেতাম। দরকার নাই অত সুযোগের। সরকার তো ইউটিউবে তালা লাগিয়ে রেখেছে। তার চেয়ে আমার হার্ড ড্রাইভের মুভিগুলোই চলুক। চলছেও তাই।
৩.
ফ্রেমে বাঁধা একেকটা দিন। ফ্রেমে বাঁধা একেকটা মানুষ। ফ্রেমে বাঁধা একেকটা জীবন। কেউ কেউ ফ্রেম বিচ্যুত হয়। আমার ফ্রেমে গিয়ে বসে। কেউ কেউ ফ্রেমে গিয়ে বসতে পারে না। নিজেকেই তখন অচেনা লাগে। ছাদের আকাশে কয়েকটা নক্ষত্রের সাথে একটা উপগ্রহ। ঘুমোবার আগে চোখ মেলে দেখে তারাগুলো পাহারা দিচ্ছে। একদিন উপগ্রহ চাঁদ খসে পড়লো আলগা হয়ে। সেদিন থেকে জ্যোৎস্নার বদলে মোমের আলো। মোমের আলোয় কবিতা পাঠ হয়, মোমের আলোয় মানুষ চেনা যায়। মোমের আলো জ্যোৎস্নার অভাব ঘোচাতে পারে না, ভুলিয়ে রাখতে পারে। ভোলাটাই দরকার। অন্ধকার দিখণ্ডিত হয় তখন।