ঠগবাজ
কেউ আপনাকে ঠকাচ্ছে জানলে আপনার খুব খারাপ লাগে। কিন্তু জানার পর যদি আপনি তাকে ঠকাবার সুযোগ দেন, তাহলে আপনি তাকে খেলাচ্ছেন। ঠগবাজকে খেলাতে পারলে আপনার ঠকার মূল্য কিছুটা উঠে যেতে পারে।
নির্ঘুম দিনলিপি
(৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ : রাত ২.৪৪ মিনিট)
১. দিন তারিখের কোন রুটিন নেই। যখন যা ঘটার তখন সেটা ঘটেই যাবে। কেউ ঠেকাতে পারবে না।
২. তেল চিনি পেঁয়াজ নুন আনাজ তরকারির পাশাপাশি বিল, ট্যাক্স, পাওনাদার, নির্বাচন, পরিবেশ দুষণ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভেজাল, চোর ডাকাত বদমাশ দুর্ঘটনা সবকিছুর বেড়াজাল থেকে মুক্তি। স্বস্তি।
৩. বাইরে হঠাৎ গোলাগুলি। নাকি বিয়ের বাজি। রাত পৌনে তিনটার সময় কিসের এত শব্দ?
......................................................
সময়-অসময়
অধিকাংশ মানুষ জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়টাকে উপভোগ করতে পারে না। সময়টা যে সুন্দর ছিল তা বুঝতে পারে সেটা অতীতকাল হয়ে যাবার পর। অতীতকাল উপভোগ করা যায় না। কেবল দীর্ঘশ্বাস ফেলা যায়। মানুষ আসলে একদিনই বাঁচে। গতকালও না, আগামীকালও না। মানুষ বাঁচে শুধু আজকে।
ইলন মাস্কের সাথে গনি মিয়ার পার্থক্য কতটুকু? ইলন মাস্ক দুশো বিলিয়ন ডলারের মালিক। গনিমিয়া দুটো গরুর মালিক। আগে একটা গরু ছিল। কিছুদিন আগে জমানো ৪ হাজার টাকা দিয়ে একটা বাছুর কিনে আনলো পাশের গ্রামের কুদ্দুসের কাছ থেকে। আগামী বছর বাছুরটা একটু বড় হলে কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবে কল্পনা করে সে খুব আনন্দিত। বাড়ি ফিরে আলু ভর্তার সাথে একটা বাড়তি ডিম ভাজি খেয়ে ভরপেট ঘুম দিল।
গনি মিয়া যেদিন ৪ হাজার টাকার বাছুরটা কিনলো, সেদিন ইলন মাস্ক ৪৪ বিলিয়ন ডলার দিয়ে টুইটার কিনলো। টুইটার কিনে ইলন মাস্কও খুব আনন্দিত। কয়েক মাসের মধ্যে টুইটারের শেয়ার আরো ১৪ বিলিয়ন ডলার বেড়ে যাবে সেই আনন্দে বান্ধবীকে নিয়ে নয় তারকা হোটেলে ডিনার সেরে ঘুমাতে গেল।
এখন গনি মিয়া এবং ইলন মাস্কের মধ্যে কার আনন্দ বেশি? ৪৪ বিলিয়ন বিনিয়োগ করে ইলন মাস্ক যে পরিমাণ আনন্দ পেয়েছে, ৪ হাজার টাকায় বাছুর কিনে গনি মিয়া তার চেয়ে কম আনন্দ পেয়েছে?
মানুষের শরীরের যে রসায়ন তাতে জীবনকে উপভোগ করার জন্য কম টাকা এবং বেশি টাকার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। টাকার পরিমান অনেক কম হলেও মাঝে মাঝে গনি মিয়া ইলন মাস্কের চেয়ে বেশি সুখী হতে পারে। জীবনকে উপভোগ করার ক্ষেত্রে অর্থ সম্পদের ভূমিকা থাকলেও সেটাই একমাত্র অনুঘটক নয়।
দশ বছর পর
ঠিক এই সময় থেকে দশ বছর আগে এবং দশ বছর পরের অবস্থা তুলনা করতে গেলে যে কল্পনা এসে দাঁড়ায় সেটা সুখকর নয়। ২০১৩ সাল ছিল আমার জীবনের সমৃদ্ধ বছর। বেঁচে থাকলে ২০৩৩ সাল খুব সংকটময় বছর হতে পারে। কারণ তখন কোন আয়ের উৎস থাকবে না। সংসার চালাতে শেষ সম্বল বিক্রি করার অবস্থা দাঁড়াতে পারে। গত দশ বছরে তেমন কোন সংকট হয়নি। বয়স ছিল, শক্তি ছিল, আয় ছিল, সুস্থতা ছিল। আগামী দশ বছর পর এসবের কিছুই থাকবে না। যদি আমার পুত্র ততদিনে নিজের পায়ে দাঁড়াবার উপযুক্ত না হয়, তাহলে আমাদের সমূহ সংকট।
অতদিন টিকে থাকাটা সম্ভব নাও হতে পারে। আমার হয়তো জানাও হবে না পরিবার কেমন আছে। আমার কিশোর পুত্রটি তখন যুবকে পরিণত হয়ে কোন সংকটের মুখোমুখি দাঁড়াবে, সেটা ভেবে আমি খুব দুশ্চিন্তায় ভুগি। আমার বাবা যে বয়সে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল, সে বয়সেও আমি নিজের পায়ে দাঁড়াইনি। তবু আমার পুত্রের চেয়ে আমি অনেক সাহসী ছিলাম। পুরো পরিবারকে আকড়ে ধরে রাখতে পেরেছিলাম। আমার ছেলেটা কী পারবে?
No comments:
Post a Comment