Sunday, June 4, 2017

গাঙ্গেয় ভূগোলের বিবর্তন

পদ্মা মেঘনা যমুনার সমস্ত জল যে পথ দিয়ে বঙ্গোপসাগরে নামতো সে পথটি আমূল বদলে গেছে। যেখানে ছিল দুটি পথ সেখানে আছে আছে একটি পথ। কিভাবে এই পরিবর্তন হলো, কোন পথে যাত্রা করলো সেটা বোঝার জন্য কিছু মানচিত্র দেখা দরকার। একটা নদী আগাগোড়া মুছে গিয়ে সেখানে নতুন ভূখণ্ড জেগে উঠেছে ভাবতেই অবাক লাগে। কিন্তু সেটাই ঘটেছে। মুছে যাওয়া সেই নদীটি মেঘনা মোহনায় এসে যেখানে বঙ্গোপসাগরে মিশতো সেখানে এখন নোয়াখালীর বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চল।

প্রথমে এই গুগল মানচিত্রটি দেখা যাক। এই অঞ্চলের  ইতিহাস বোঝার জন্য এই মানচিত্রটি বোঝা দরকার। এই অঞ্চলের ৪০০ বছর আগের ইতিহাস পড়তে গিয়ে বর্তমান মানচিত্রের দিকে চোখ রাখতে গেলে বিভ্রান্ত হতে হয়। কেননা এই ৪০০ বছরে নদীর অনেক জল সমুদ্রে গড়াতে গিয়ে আমাদের ভূগোলে বিশাল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। আমরা অনেকেই খেয়াল করি না সেই পরিবর্তনটা কত ব্যাপক বিস্তৃত। গাঙ্গেয় মোহনায় সবচেয়ে বড় পরিবর্তনের অধিকারী মেঘনা। এই নদীটার গতিপথ আমূল বদলে গেছে। দুইশো বছর আগেও নদীটা চট্টগ্রাম সন্দ্বীপের মাঝখান দিয়ে বঙ্গোপসাগর স্পর্শ করতো। কিন্তু এখন সেটা পশ্চিমে সরে গিয়ে হাতিয়া বরাবর বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। বর্তমান নোয়াখালী জেলার মাঝখান দিয়ে যে মেঘনা বয়ে যেতো, সেটা অবিশ্বাস্যই ঠেকে। অথচ সেটাই সত্যি। ফেনী নদীর সাথে মেঘনার দেখা সাক্ষাতের কথা ভাবাই যায় না এখন। অথচ একসময় ফেনী নদীর মুখেই মেঘনা বঙ্গোপসাগরে মিলিত হতো। এই মানচিত্রে তার কিছুটা ছাপ আছে সে কারণে মানচিত্রটি দেখতে বলা।




স্যাটেলাইট মানচিত্রের উপর হলুদ রেখায় কিছু সীমানা রেখা আঁকা আছে। একসময় মনে হতো হলুদ রেখাগুলো ভুল সীমানা নির্দেশ করছে। হ্যাঁ বর্তমানের জন্য সীমানাগুলো ভুলই। কিন্তু অতীতের জন্য সেই সীমানা চিহ্নই সঠিক ছিল। এই মানচিত্রের হলুদ সীমানাগুলো  এই ভূখণ্ডের আদি অবস্থানের চেহারার। মানচিত্রের এই সীমানা রেখা নেয়া হয়েছে পুরোনো কোন এক মানচিত্র থেকে। বলা বাহুল্য, এই হলুদ রেখার মানচিত্রের বয়স ১০০ বছরেরও কম। এর মধ্যেই মেঘনা নদী তার গতিপথকে যেভাবে বদলে ফেলেছে, আগামী একশো বছর এই অঞ্চলের জন্য নতুন মানচিত্র আঁকতে হবে। কেননা সন্দ্বীপের উত্তরদিকে যেসব চর জাগছে তাতে সন্দ্বীপ পঞ্চাশ বছরের মধ্যে নোয়াখালীর সাথে অবিচ্ছিন্ন ভূখন্ড হয়ে মিশে গেলে আশ্চর্যের কিছু না।

গুগল মানচিত্রের হলুদ সীমান্তের সমর্থন পাওয়া যায় নীচের এই মানচিত্রটিতেও। এই মানচিত্রে বাংলাদেশের সমস্ত নদীগুলোকে গতিপথ সহকারে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই মানচিত্রটি খুব বেশী পুরোনো না। এই মানচিত্রেও দেখা যাচ্ছে মেঘনার মোহনা সন্দ্বীপের পূর্বদিকে বহমান ছিল। আমাদের দেশে খুঁজলে এখনো পাওয়া যাবে পুরোনো পাঠ্যপুস্তকে। যেখানে বাংলাদেশের মানচিত্র আছে সবগুলোতে মেঘনার মোহনাকে সন্দ্বীপের পূর্বদিকে দেখানো হয়েছে। এর কারণটা পরিষ্কার। বৃটিশরা যখন এই অঞ্চলের মানচিত্র তৈরী করতে শুরু করে তখন তার ভৌগলিক চেহারা এমনটিই ছিল। এই মানচিত্র ৬০ বছরের কম বয়সী। কেননা এখানে কাপ্তাই লেকের অস্তিত্ব আছে।



এবার দেখি উপনিবেশ আমলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত রেনেলের মানচিত্র। এই মানচিত্রটি আরো দুশো বছর আগের (১৭৮৬ সালের)। সেই মানচিত্রের ভৌগলিক চেহারা আরো অনেক বেশী ভিন্ন।


যে দ্বীপগুলো এখন সত্যের মতো বিদ্যমান একসময় সেগুলো সমুদ্রের অংশ ছিল। যে অংশ একসময় সমুদ্র ছিল, তা এখন ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত। ভৌগলিক এই বিবর্তনগুলো বোঝা দরকার ইতিহাসকে পরিষ্কার করে বোঝার জন্য।




1 comment:

MD Rakibul Hasan said...

আরো মজার একটি ব্যাপার লক্ষ করবেন ২০০ বছর আগে মানচিত্রে । দেখা যাচ্ছে পদ্মা নদী তখন সরাসরি বঙ্গোপসাগরে মিলিত হত। পদ্মা আর মেঘনার দেখাই হতো না!!! পদ্মা আর মেঘনার ছিলো সমপুর্ন ভিন্ন ২টি মোহনা যা বর্তমান মানচিত্রে কল্পনাই করা যায় না। কি অপার রহস্যে ঘেরা এই গাঙ্গেয় বদ্বীপ ...