Sunday, June 4, 2017

ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের 'বাংলাদেশ' আপত্তি

ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের সুলিখিত গ্রন্থ  'বাংলা দেশের ইতিহাস'  এই বইটি বাংলার অন্যতর ইতিহাস গ্রন্থের মধ্যে একটু ব্যতিক্রম। এখানে তিনি রাজনৈতিক ইতিহাসের পাশাপাশি ধর্ম, সংস্কৃতি, সাহিত্যের ঐতিহাসিক উপাদানগুলো নিয়েও আলোচনা করেছেন। সেই কারণে বইটি অতুলনীয় এবং অতীত খু‌ঁড়তে ইচ্ছুক পাঠকদের জন্য অবশ্যপাঠ্য।

কিন্তু  তিনি বইটির দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকায় নামকরণ বিষয়ে যে মন্তব্য করেছেন সেটা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ থেকে যায়। এই বিষয়ে ইতিপূর্বে কোথাও আলোচনা হয়েছে কিনা জানা নেই। কিন্তু দুই বাংলার সাধারণ মানুষের এই অংশ নিয়ে কিছু বলার থাকতে পারে। তাই সেই অংশটুকু এখানে তুলে ধরা হলো আলোচনার স্বার্থে।  এই দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার কয়েক বছর পরে।




এই অংশে আমার আপত্তি হলো ইতিহাসের দিক থেকে পূরবঙ্গের 'বাংলাদেশ' নাম গ্রহনের কোন সমর্থন নেই। এই মন্তব্যটির সপক্ষে তিনি যে যুক্তি দিয়েছেন তা হলো




Bengal শব্দটির প্রতিশব্দ হলো 'বাংলা'। এটা কখনোই 'বাংলাদেশ' বোঝায়নি। এটার অনুবাদেও কেউ কখনো 'বাংলাদেশ' লেখেননি। অতীতে শত শত বছর ধরে বাংলা বলতে অবিভক্ত বঙ্গকেই বোঝাতো। রাজ্য হিসেবে অবিভক্ত একটি দেশ ছিল বাংলা। কিন্তু বাংলাদেশ নামের কোন রাজ্য কোথাও ছিল না। কবি সাহিত্যিকগণ বাংলাদেশ শব্দটি বহুদিন ধরে ব্যবহার করে আসলেও রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ শব্দটির ব্যবহার হয়নি ১৯৭১ সালের আগে।

পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা বাঙালী পরিচয় দিতে পারবে না এ দাবী কেউ করেছে বলে জানা নেই। আবার স্বাধীন পূর্ববঙ্গকে বাংলাদেশ বললে কেন হাস্যকর শোনাবে সেটাও বোধগম্য নয়।

তবে সবচেয়ে গুরুতর মনে হয়েছে নীচের অংশটুকু-


'বাংলাদেশ' নামটি গ্রহন করার ব্যাপারে কারো আপত্তি থাকতে পারে, কারো অনুমতি নিতে হতে পারে এমন বিষয় এই প্রথম চোখে পড়েছে। মনে হচ্ছে রমেশচন্দ্র মজুমদার দেশভাগ মেনে নিতে পারলেও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নিয়ে বিব্রত ছিলেন।

সাধারণ লোকে বাংলাদেশ নামের অর্থ পরিবর্তনকে গ্রহন করতে পারেনি- এই ব্যাপারটা কিভাবে নিশ্চিত হলেন তিনি?


No comments: