শেষরাতের দিকে ঘুম ভেঙ্গে গেল। বাইরে কোথাও একদল কুকুর বিকট গলায় ঝগড়া করছে। এই শহরে এত কুকুর কোত্থেকে এলো। রাতে যখন বেরিয়েছিলাম তখন নেকড়ে চেহারার কুকুর দেখেছিলাম। এদেশের কুকুর মানুষের চেয়েও স্বাস্থ্যবান। অ্যালসেশিয়ানের মতো লেজটা মোটা। দেখে বলছিলাম মনে হয় চেঙ্গিজ খানের কুত্তা।
গলা শুকিয়ে কাঠ। বেডসাইড টেবিলে পানির বোতল আছে। ঢকঢক করে খেলাম বরফ গলা জল। এখনাকার পানি মাত্রেই বরফ গলা বোধহয়। বুক থেকে তলপেট পর্যন্ত আগুন জ্বলছে। রাতের ঝাল খাওয়ার পরিণতি। ঘড়ি দেখলাম সাড়ে তিনটা। রাত এত দীর্ঘ কেন এখানে। লেপ কম্বল চাদর এই তিনস্তরের নীচের উষ্ণতায় ঘুমোচ্ছিলাম, পায়ের দিকে হিটারও জ্বলছে। তবু রুমে শীতল আবহাওয়া। রাতের থিম্ফু অতীব শীতল। পেটের জ্বলুনিতে ঘুম আসছিল না। রিমোট নিয়ে টিভিটা ছাড়লাম। শুয়ে শুয়ে একের পর এক চ্যানেল ঘোরাচ্ছি। কোন চ্যানেলই পছন্দ হচ্ছে না। প্রায় সবগুলো চ্যানেল ভারতীয়। ভুটানী চ্যানেল দুতিনটা আছে, সব ঘুমাচ্ছে। বিরক্ত হয়ে টিভি বন্ধ করলাম। মটকা মেরে শুয়ে থাকলাম। এলোমেলো ভাবনায় মাথার ভেতর জিলিপির প্যাচ লেগে গেলো।
ঘুম আসে আসে না করতে করতে ঘন্টা দুই তিন কেটে গেল। তারপর জানালা দিয়ে সরু আলোর রেখা দেখা যেতে শুরু করলে বিছানায় উঠে বসলাম। আরেক দফা পানি খেলাম। জানালার পাশে গিয়ে পর্দা সরিয়ে বাইরে উঁকি দিলাম। রাস্তার ওপাশে আরেকটা হোটেল, তার পেছনে দেখা যাচ্ছে গতরাতের রহস্যময় আলো আধারী পর্বতটা এখন সবুজ পাইনে ছাওয়া। কিন্তু ওকি? পাহাড়ের মাথাটা মেঘের আড়ালে কেন? এত নীচে মেঘ নেমে আসে শহরে? তখন মনে পড়লো থিম্ফু শহরটিই তো সাত হাজার ফুট উপরে। আর সামনের ওই পর্বতের উচ্চতা হাজার পাঁচেকের কম হবে না। সুতরাং মেঘেরা এখানে এসে ঠায় দাড়িয়ে থাকবে তাতে অবাক হবার কি।
দেরী না করে জ্যাকেট প্যান্ট পরে, কাঁধে ক্যামেরা ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়লাম হোটেল থেকে। তখনো থিম্ফু শহরের অধিকাংশ মানুষ ঘুমিয়ে। কেবল রাস্তার ঝাড়ুদার, কয়েকটা কুকুর আর দুয়েকজন পথচারীকে এদিক যেদিক যেতে দেখা যাচ্ছে। হাটতে হাটতে ক্লকটাওয়ারের সামনে আসলাম। দারুন আরেকটা দৃশ্য এত ভোরে শত শত কবুতর কি করছে এখানে? আমাদের শহরে কাক বাদে কিছু দেখার কথা ভাবা যায় না এই সময়ে। ক্যামেরায় ক্লিক করতে করতে হাটছি। সামনের পাহাড়ে মেঘগুলো এখনো অন্ধকার করে রেখেছে।
কিন্তু ক্লক টাওয়ারের দিক থেকে বায়ে ঘুরতেই ভিন্ন একটা দৃশ্য। ওদিকে যে রাস্তাটা দিগন্তে মিলিয়ে গেছে সেদিকে আরেকটা পর্বত আছে। ওই পর্বতের চেহারা আর সামনের পর্বতের চেহারায় কোন মিল নেই। ওদিকে পরিষ্কার ঝলমলে রোদ হাসছে। পেছনে ফিরলাম, ওদিকের পর্বতেও কুয়াশা, ঝাপসা দেখাচ্ছে। আমাদের হোটেলের পেছন দিকে যে পাহাড়, ওদিকেও দেখি রোদের হাসি। খুব মজা লাগলো। থিম্ফু উপত্যকার একটা পয়েন্ট থেকেই চার রকমের দৃশ্য। এটাই এখানকার স্বাভাবিক দৃশ্য। বারো চোদ্দ হাজার ফুট উচু পর্বত বেয়ে সূর্যকে দেখা দিতে বেশ সময় লাগে, তাই এরকম ভিন্ন ভিন্ন চেহারা একেক পর্বতের।
ঘন্টা খানেক ঘুরে ফিরে হোটেলে ফিরলাম। তারপর গোসল নাস্তা ইত্যাদি সারতে সারতে উগেন এসে হাজির। বললো আজকে থিম্ফুর আশপাশ চষা হবে, তারপর কালকে দোচুলা পুনাখা ওয়াংডি। তবে এখন ইমিগ্রেশান অফিসে যেতে হবে পারমিশানের জন্য। ভুটানে কিছু জায়গায় যেতে সরকারের অনুমতি লাগে। ট্যুর অপারেটর সেই অনুমতিগুলো নিয়ে দেয়। কিন্তু আমাদের গাইড ভেতর থেকে ঘুরে এসে দুঃসংবাদ দিল। দোচুলা পুনাখা যাবার অনুমতি দিচ্ছে না সরকার। কারণ আগামী পরশু রাজার বিয়ে পুনাখায়। হ্যাঁ ভুটানের নতুন রাজা ৩১ বছর বয়সী জিগমে নামগিল বিয়ে করছে। সারা শহরে রাজা রানীর ছবিতে ছেয়ে আছে। সেই বিয়ে উপলক্ষে ট্যুরিষ্ট মুভমেন্ট সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত।
আমি হতাশায় মুষড়ে পড়লাম। আসার আগে সবাইকে বলে এসেছিলাম রাজার বিয়ে খেতে যাচ্ছি। ভেবেছিলাম অন্তত বিয়ের ঐতিহাসিক জায়গাটা ঘুরে আসবো। হলো না। পুনাখা যাবার রাস্তায়ই পড়ে দোচুলা পাস। যেখান থেকে পূর্ব হিমালয় রেঞ্জের বিরাট একটা অংশ দেখা যায় খালি চোখেই। সব ভেস্তে গেল। উগেনের চেহারাও বিমর্ষ। সে কাকে যেন ফোন করলো। খানিক পর এসে বললো, পুনাখা তো যেতে পারবা না, কিন্তু দোচুলা যাবার একটা ব্যবস্থা হয়েছে। অনুমতি ছাড়াই যাওয়া যাবে। উগেনের এক দোস্ত আছে ইমিগ্রেশানে যার ডিউটি দোচুলা যাবার চেকপোষ্টে। তার সেই বন্ধুটা আমাদেরকে দোচুলার চেকপোষ্ট পার করে দেবে। আপাতত সেই ব্যবস্থাতেই আমরা খুশী।
এখন শহর দেখার পালা। প্রথমে গেলাম একটা প্রাচীন মনেস্টারিতে। সিড়ি বেয়ে উঠতে হয় মন্দিরে। উঠে দেখি জরাজীর্ন প্রাচীন এক দালান। তার ভেতরে অনেকগুলো প্রেয়ারহুইল। নানান বয়সী মানুষেরা প্রেয়ারহুইল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এগোচ্ছে। ভেতরের একাংশে মাজারের মতো লাগলো। ওখানে জুতো খুলে ঢুকতে হয়। শতবর্ষী ভুটানী কয়েকজন নারীকে দেখলাম জপমালা হাতে বিড়বিড় করছে। আমি কিছু ছবি তুলে নেমে এলাম।
এরপর চললাম বিবিএস টাওয়ারের দিকে। ভুটানের টিভি টাওয়ার। এখানে সবগুলো রাস্তাই পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে বানানো। অতীব সুন্দর। খুব বেশী খাড়াই না। ৮০০ সিসির গাড়িও স্বচ্ছন্দে উঠে যায়। এখান থেকে থিম্ফু উপত্যকা আর শহরের সমস্তটা চমৎকার দেখা যায়। এখানে উঠার সময় শরীর থেকে গরম পোষাক খুলে ফেলতে হলো। রোদটা তেতে উঠছিল ক্রমশঃ। টাওয়ারের কাছাকাছি গিয়ে থেমে যেতে হলো। নেমে গেলাম গাড়ি থেকে। বাহ অপূর্ব এক দৃশ্য। যেদিকে তাকাই সবুজ আর নীলচে সবুজ পর্বতমালা। তার মধ্যখানে ছিমছাম গোছানো একটা শহর। যে শহরে কোন সমতল জায়গা নেই। তবু উপর থেকে দেখে মনে হচ্ছে সবগুলো বাড়ি একই সমতলে। আরো দূরে নদী। এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে উচ্ছল ঝরনার গতিতে বয়ে যাচ্ছে থিম্ফু উপত্যকার মাঝ দিয়ে। যেদিকে তাকাই অপরূপ রূপের পসরা।
হালকা কুয়াশার কারণে শহরের ছবিগুলো তেমন ভালো আসলো না। এরপর উগেন আমাদের নিয়ে গেল, পেইন্টিং স্কুলে। ভুটানের ঐতিহ্যবাহী চিত্রকর্মের শিক্ষা দেয়া হয় এখানে। পেইন্টিং কিনতে গিয়ে দাম শুনে ভিরমি খেলাম। আমেরিকা অস্ট্রেলীয় ট্যুরিষ্টরা কিনছে দেদারসে। আমি ক্যামেরায় তুলে নিলাম কয়েকটা চিত্রকর্ম। তারপর গেলাম ন্যাশনাল লাইব্রেরী। বহুপুরোনো বইপত্রের মিউজিয়াম বলা যায়। কিন্তু বইপত্রের প্রতি আগ্রহ কমে গেছে বলে ওখানে বেশীক্ষণ কাটালাম না। উগেন অবাক হলো, শিক্ষিত মানুষেরা তো এই জায়গায় সময় কাটাতে পছন্দ করে। ওকে নিরাশ করে বললাম, আমাদের শিক্ষাদীক্ষা নিতান্তই কম, আগ্রহও নেই বেশী কিছু শেখার। শেখার চেয়ে পাহাড় নদী ঘুরতেই পছন্দ বেশী আমাদের।
তারপর আমাদের নিয়ে গেল হেরিটেজ মিউজিয়াম বলে একটা জায়গায়। যেখানে ভুটানের আদিম জনপদের ব্যবহার্য সকল বস্তু রাখা আছে। কৃষি, শিকার, রান্না, শৈত্য দূরীকরণ, মদ্য সংরক্ষণ, ইত্যকার সকল প্রকার সরঞ্জাম আদিম অবস্থায় রেখে দেয়া হয়েছে একটা মাটির প্রাচীন ঘরে। সেই ঘরটিতে প্রবেশের আগে ক্যামেরা অফ করতে হলো। ছবি তোলা নিষেধ। মাটির তৈরী একটা ঘরে ঢুকলাম, পাশে মিউজিয়ামের পেশাদার গাইড বিড়বিড় করে মুখস্ত বলে যাচ্ছে একেকটি জিনিসের ব্যবহার ইত্যাদি। তার মুখ নড়া দেখে বুঝতে পারছি বেচারা সকাল থেকে এই মুখস্ত বিদ্যা ঝাড়তে ঝাড়তে ক্লান্ত। আমরা তাড়াতাড়ি দেখে বিদেয় হলেই বাঁচে। তাকে মুক্তি দেবার জন্য আমরা ঐতিহাসিক বস্তুসমূহের দিকে হালকা দৃষ্টি নিয়েই এঘর থেকে ওঘরে চলে যাচ্ছি। এই ঘরে ঢুকে প্রথমেই মনে হতে পারে এটি একটা গরুর ঘর। অন্ধকার করে রাখা হয়েছে ইচ্ছে করেই। গা ছম ছম নীরবতা। আসলেই ভেতরের একটা ঘরে গরুদের জন্য জায়গা আছে। যেখানে শীতকালে গরুদের জন্য উষ্ণতার ব্যবস্থা করা আছে। আমরা হেরিটেজ মিউজিয়াম দেখে কিছুটা ক্লান্ত। খিদে পেয়ে গেছে। ড্রাইভারকে বললাম, আর না, হোটেলে চল। খেয়ে আবার বেরুবো।
হোটেলে একটার সময়ই লাঞ্চ তৈরী করে বসে আছে। আমরা খেয়ে উঠে ভাবলাম একটু গড়িয়ে নেই। তারপর বেরুবো। দুপুরের পর প্রোগ্রাম হলো থিম্ফুর একটা পাহাড়ে নির্মানাধীন বুদ্ধমুর্তি পরিদর্শন। কিন্তু গড়িয়ে নিতে গিয়ে আমার ঘুম পেয়ে গেল। জেগে দেখি প্রায় তিনটা বাজে। তাড়াতাড়ি রেডী হয়ে নীচে নামলাম। উগেন গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে, মৃদু হাসি মুখে। ভুটানীদের কখনো গোমড়ামুখো দেখিনি। রাস্তাঘাটে সব সুখী মানুষের চেহারা যেন। পেটের মধ্যে দুঃখ লুকোনো থাকলে অবশ্য আমার জানার কথা না। কিন্তু বাইরের খোলসটা হাসিখুশী। এই যে উগেন, আমাদের ড্রাইভার। ওকে প্রথম দেখায় মনে হয়েছিল ভুটানী চাষা। কিন্তু সুখী চেহারা। কিছুতে না করে না। যখন যাই বলি, বলে হ্যাঁ। যদি বলি, উগেন পাহাড় খুব সুন্দর, তাই না? সে বলবে, হ্যাঁ। যদি বলি, নদী খুব সুন্দর। সে বলবে হ্যাঁ। যদি বলি পূবে যাওয়া ভালো হবে না, সে বলবে, ভালো হবে না। যদি বলি উত্তরে যাওয়াও ঠিক হবে না। সে বলবে, ঠিক হবে না। মানে তার সব কিছুতেই সায় আছে।
সে আমাদের আগেই বলেছিল থিম্ফুর গর্ব বুদ্ধমুর্তি দেখাতে নিয়ে যাবে। আমি গাড়িতে উঠে বললাম, উগেন, আজকে বুদ্ধমুর্তি দেখতে যাওয়া ঠিক হবে না। দেরী হয়ে গেছে। সে সায় দিয়ে বললো, জী হ্যাঁ দের হো গেয়ি। আমাদের বরং নদীর কাছে গিয়ে হাওয়া খেয়ে বিকেলটা পার করা উচিত। সে বললো, ঠিক হ্যায়।
আমি হিন্দি পারি না। আমার সঙ্গী পারে। আমি বাংলায় বলি আমার সঙ্গী হিন্দিতে বুঝিয়ে দেয় উগেনকে। ভুটানীরা হিন্দি ভালো বোঝে।
উগেনকে বললাম, চলো রাজার বাড়ি যাবো।
উগেন এই প্রথম বললো, নেহি।
ভুটানীরা রাজার বাড়ির দিকে তাকানোও বেয়াদবী মনে করে। এত ভক্তি শ্রদ্ধা রাজপরিবারের প্রতি।
আমি তারপর বললাম, বাড়ি না যাই, বাড়ির গেট থেকে ছবি তুলবো, তুমি কেবল গাড়িটা এক মিনিটের জন্য দাড় করাবা।
উগেন দ্বিতীয় বারের মতো বললো, নেহি।
আমি বুঝলাম কাজ হবে না। রাজার বিয়ে অথচ রাজবাড়ির ছবি তুলবো না, কেমনে হয়। তারপর বললাম, ঠিক আছে তোমার কিছু করতে হবে না, তুমি কেবল রাজবাড়ির সামনে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাবে। এবার রাজী হলো সে। রাজার বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে রয়েল তোরন দেখলাম। বিয়ের মাত্র একদিন বাকী। রাস্তায় কঠিন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ট্রাকে ট্রাকে জলপাই বাহিনী ঘোরাঘুরি করছে রাজপ্রসাদের রাস্তা দিয়ে। রাজবাড়ি আসার আগে আমি ক্যামেরার ভিডিও অন করলাম। ছবি তোলার চেয়ে ভিডিও ঢের ভালো ব্যবস্থা। গাড়ির চলন্ত অবস্থাতেই ধারণ করলাম কয়েক মিনিটের চলন্ত ভিডিও। বলাই বাহুল্য সেই ভিডিওতে ছোকরা পুলিশ আর রাজতোরনের ছবি আসলেও রাজপ্রাসাদকে ধরা যায়নি।
যাইহোক তারপর উগেন আমাদের নিয়ে চললো নদীর তীর ধরে। ডানে স্বচ্ছ নীলাভ জলের নদী, বায়ে সবুজ পাহাড়। হাতের ডান দিকে থিম্ফুর বাকী শহর। অদূরে স্টেডিয়াম দেখা যাচ্ছে। তার পাশে ভেজিটেবল মার্কেট, তারও বহুদূরে পাহাড়ের মাথায় জেগে আছে একটা মুর্তি। ওটাই বুদ্ধমুর্তি। ক্যামেরার জুম দিয়ে বুদ্ধমুর্তিকে ধরলাম।
উগেন আমাদের নিয়ে গেল সবজী বাজারে। এই বাজারটা সপ্তাহে তিনদিন বসে। গতকাল ছিল শেষদিন। আজকে সব সুনসান।
শাকসবজির বাজার বলতে আমরা বুঝি জঞ্জালময় বিশৃংখল একটা জায়গা। যেখানে ময়লা আবর্জনা স্তুপ হয়ে থাকে মাসের পর মাস। পুঁতিগন্ধময় একটা জায়গা। কাক আর কুকুরের গনতান্ত্রিক সহাবস্থান চরমভাবে বিরাজমান। কিন্তু থিম্ফুর এই বাজার আমাদের ভিন্ন জিনিস শেখালো। একটা বাজারও সুপারমার্কেটের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে বছরের পর বছর অক্ষত থাকতে পারে। বাজারের সামনে সাজিয়ে রাখা ডাস্টবিনের চেহারা দেখলেই বোঝা যায় পরিচ্ছন্নতা ভুটানীদের ঈমানের অঙ্গ, বাঙালীদের নয়।
বাজারের উল্টোদিকেই থিম্ফুর প্রধান নদীটা বয়ে যাচ্ছে। তার উপর চমৎকার একটা সেতু। পঞ্চাশ ফুটের বেশী হবে না ঝুলন্ত সেতুটা। একটা লম্বা টানা বারান্দার মতো সেতু। মাথার উপর কাঠের ছাদ দেয়া। সেতুর দুপাশে দুটি ঘর। ওই পাড়েও একটা বাজার। এই বাজারটিও শূণ্য। কেবল দোকানের বাঁশের তৈরী মাচানগুলো আছে। সেতুর উপর উঠে নদীর অসাধারণ রূপটা দেখা গেল। এখান থেকে নদীটা অনেক বেশী নীল, অনেক বেশী স্বচ্ছ। বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটা নদী এত পরিষ্কার হতে পারে তার কৃতিত্ব কি ভুটানী জনগনের, নাকি রাজার তা বুঝতে পারলাম না। আমাদের দেশে বাজার জাতীয় এলাকার আশপাশের কথা চিন্তা করলে শিউরে উঠতে হয়। অতি অবশ্যই্ একটা বিশাল দুর্গন্ধস্তুপ থাকবেই বাজারে প্রান্তে।
কিভাবে এত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখে ওরা? বাজারের উল্টোদিকে দেখলাম বেশ কটি ডাস্টবিন সারিবদ্ধভাবে রাখা আছে। কোন ময়লা বাইরে পড়ে নেই। বোঝা যায় ময়লার বাক্সকেও পরিষ্কার রাখার কায়দা জানে ভুটানীরা। এরপর এক পাহাড়ের উপর বেড়াতে গিয়েও দেখলাম ডাস্টবিন বসানো আছে, চেহারা অতিশয় ভদ্র। এই কায়দাগুলো কি খুব ব্যয়বহুল নাকি কষ্টসাধ্য? আমরা কেন পারিনা এই মনোকষ্ট চেপে দুটো ছবি তুলে নিলাম ডাস্টবিনের।
সন্ধ্যের আগে আগে ফিরলাম ওই ব্রিজের কাছ থেকে। ইচ্ছে করছিল রাতে একবার এসে ঘুরে যাই। কিন্তু হোটেলে ফিরে কফি খেতে খেতে দেখা হয়ে গেল কোলকাতা থেকে আসা অনিন্দ্য চক্রবর্তী আর কৃষানু ব্যানার্জীর সাথে। যে দুজন আমাদের এই অনাত্মীয় প্রবাসে দারুণ আত্মীয় হয়ে আবির্ভূত হয়ে গিয়েছিল পরবর্তী দুদিন। সেই মজার আড্ডা ছেড়ে রাতে আর বেরুতে ইচ্ছে করেনি।
No comments:
Post a Comment