Sunday, February 27, 2011

(আউট) বই কেনা

নাহ, এইবার বইমেলায় যাওয়াই হলো না!! কপালের দোষ নাই। আসল কথা, অফিস ফাঁকি দেবার কোন সুযোগ করতে পারি নাই। এই মাসের ফাঁকির বাজেট শেষ। মাসে একদিন নিয়ম করে অফিস ফাঁকি দেবার চেষ্টা করি। মাসটা আটাশে হওয়াতে বাজেটে টান পড়ছে। বই মেলা নয়, বইকেনা নিয়ে একটা বকরবকর পোষ্ট লিখতে ইচ্ছা হইল। পুরান কথা নিয়ে একটা চুইংগাম পোষ্ট।
‍ ‍= = = =

বই কিনে দেউলিয়া হবার কোন সম্ভাবনা আমার ছিল না, কারণ দেউলিয়া বড়লোকের কারবার। আমি তার ধার দিয়েও ছিলাম না।

বই কেনা একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ মধ্যবিত্ত পরিবারে। যাদের 'আউট বই' পড়ার নেশা আছে কিন্তু বই কেনার সামর্থ্য নেই, তাদের মর্মবেদনা আমার খুব ভালো করেই জানা। তবে টাকা না থাকার অন্ততঃ একটা ভালো দিক হলো, না পাওয়া জিনিসের প্রতি আমাদের হাহাকার থাকে সবচেয়ে বেশী। টাকার টানাটানিতে বই পড়ার তৃষ্ণাটা প্রলম্বিত হয়েছিল।

মাঝে মাঝে দার্শনিক চিন্তা ভর করতো। 'টাকা নেই কিন্তু বই পড়ার তৃষ্ণা আছে' এবং 'টাকা আছে কিন্তু বই পড়ার তৃষ্ণা নেই', এই দুই দলের মধ্যে ভাগ্যবান কে?

বইকেনা নিয়ে টাকাপয়সার এই টানাটানির আরেকটা মধুরতম দিক হলো শেলফে সাজানো প্রতিটা বইয়ের পেছনে একেকটা গল্প আছে। আর দরিদ্র মানুষের গল্পগুলি সাধারণতঃ আকর্ষনীয় হয়, আর্ট ফিল্মের মতো। স্কুল কলেজের বই কেনার টাকা বাবার হোটেল থেকে নির্বাহ করা হলেও 'আউট বই'য়ের জন্য কোন বরাদ্দ ছিল না। তাই স্কুলে থাকতে বেশীরভাগ আউট বই পড়া হয়েছে আত্মীয়-বন্ধুর কাছ থেকে ধার নিয়ে। নিজের তেমন কোন সংগ্রহ ছিল না স্কুল বয়সে। মাঝে মধ্যে বাবার টাকায় যদি কোন আউট বই কেনা হতো সেটা অবশ্যই বিজ্ঞানের বা শিক্ষামূলক বই হতো।

কলেজে ওঠার পর রিকশাভাড়া দৈনিক বাজেট দশ টাকা। বাসে আসা যাওয়া করলে সাত টাকা সাশ্রয়। তাই রিকশা বাদ দিয়ে বাসে চড়া শুরু করি। ওই সাত টাকায় বন্ধুদের সাথে চা সিঙ্গাড়া আড্ডাবাজি। একদিন কলেজ থেকে ফেরার সময় ফুটপাতে পাতলা কভারের একটা চটি বই চোখ কাড়ে। নাম 'তানিয়া'। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কিংবা রাশিয়ান বিপ্লবের একটা করুণ ঘটনা নিয়ে লেখা অসাধারণ মানবিক কাহিনীর অনুবাদ। প্রথম পৃষ্ঠা পড়ে এত মুগ্ধ হলাম যে পাঁচ টাকা দিয়ে নিউজপ্রিন্টের বইটা কিনেই ফেলি। নিজের টাকায় কেনা প্রথম বই। ছোট্ট সেই চটি বইটা আমার পড়াশোনার জগতের মধ্যে একটা বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছিল।

দিন দিন আউট বইয়ের চাহিদা আরো বাড়তে থাকলেও টাকার যোগান নেই। একেকটা বই কিনতে ঘাম ছুটে যেতো। অন্যদের দেখতাম বইয়ের দোকানে গিয়ে নাম ধরে বই খুজছে, অমুক লেখকের তমুক বই। আর আমি দোকানের চিপায় চুপায় নীচে মেঝেতে অবহেলায় পড়ে থাকা পুরোনো সংস্করনের বই খুঁজি। এটা আমি বেশ উপভোগ করতাম। প্রতিবার কারেন্ট বুক সেন্টারে গেলে কোন না কোন পুরাতন বই আবিষ্কার করতাম। সেই সস্তা বইগুলো দেখা যেত নতুন বের হওয়া বইগুলো থেকে এগিয়ে থাকতো। সৈয়দ মুজতবা আলী কিংবা আবুল মনসুর আহমদের আমলের বইগুলো সংগ্রহ করা গেছে সেভাবেই।

পাঁচটাকা দিয়ে শুরু করে পনেরো টাকা ছিল প্রাথমিক রেঞ্জ। বিশ টাকার উপরের বইয়ের দিকে তাকাতাম না নাগালের বাইরের জিনিসে কখনোই হাত বাড়াতে ইচ্ছে করতো না। এমনকি এক পৃষ্টা পড়ে জিনিসটা চেখেও দেখতে ইচ্ছে করতো না। যেটা আমার হবে না ওদিকে খামাকা তাকিয়ে কাজ কি?

একটা ঘটনা বলি। তখন কলেজ ছাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে। একবার নিউমার্কেটের এক দোকানে গিয়ে বাংলাদেশের ছোটগল্প নামের মোটাসোটা একটা বই চোখে পড়ে গেল। গল্পের তালিকায় চোখ বুলিয়ে আমি বইটার প্রেমে পড়ে গেলাম। গত একশো বছরের ক্লাসিক সব ছোটগল্পের সংকলন। অনেক পুরোনো সংস্করন বলে দাম চল্লিশ টাকা মাত্র।

কিন্তু চল্লিশ টাকাও অগম্য আমার। পকেটে ছিল বিশটাকা। এরকম বই বেশীক্ষণ থাকবে না, পরের বার আসলে নাও পেতে পারি। কি করি? বিশ টাকা বাকীতে দেবে না। বইটা ছেড়েও আসতে পারছি না। পরে লজ্জার মাথা খেয়ে পাশের এক পরিচিত দোকান কর্মচারী থেকে ২০ টাকা ধার নিয়ে বইটা কিনলাম। এখনো বইটা ছুঁয়ে দেখলে ২২ বছর আগের স্মৃতির গন্ধ পাই, মনে হয় মাত্র গতকাল!

আরেকবারের কথা। বইয়ের খিদে পেল খুব। গরীবের খিদা বেশী, খাবার কম পকেট থাকে খালি। বাসা থেকে সাপোর্ট পাওয়ার কোন রাস্তাও দেখি না। তখন চোখে পড়লো তাকের উপর ইন্টারমিডিয়েটের মোটা গাবদা পদার্থবিজ্ঞান বইটা অপদার্থের মতো শুয়ে আছে। দেড় কেজি ওজনের বইটা তখনো প্রায় নতুন (আমার প্রায় সব একাডেমিক বই নতুনই থাকতো পড়াশোনা করে ওদের বেশী কষ্ট দিতাম না বলে)।

বইটা পলিথিনে ভরে সোজা আন্দরকিল্লা পুরোনো বইয়ের দোকানে। সেখানে দেড়শো টাকার বইটা বিশ টাকায় রফা করে, সে টাকায় শওকত আলীর 'যাত্রা' কিনে ফিরে আসি। একদিনের খিদা মিটলো।

সস্তার তিন অবস্থা। বইয়ের ক্ষেত্রে একদম ভুয়া কথা। আমি বলি সবচেয়ে সস্তা বইগুলিই সবচেয়ে মজাদার। মুক্তধারা, বাংলাএকাডেমী,বইঘর এইতিনটা ছিল সস্তার প্রথম পছন্দ। গুগল প্লেকস নামে মুক্তধারার একটা বই কিনেছিলাম। মাত্র দুই টাকা দামের বইটা আমার বইকেনা ইতিহাসের সবচেয়ে সস্তা বই। ওখান থেকে জেনে চমৎকৃত হয়েছিলাম পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সংখ্যার নাম নাকি গুগল প্লেকস(googolplex)।

কষ্টের টাকায় বই কেনা যেরকম আনন্দ, তার পাঁচগুন কষ্ট যদি সেই বই কেউ হাপিশ করে দেয়।

গ্রুপ থিয়েটার করতাম একসময়। সেই দলের এক পড়ুয়া বড়ভাই বই নিয়ে অপমানজনক কথা শোনালো একদিন। কি এক তর্কে বদ্দা হঠাৎ ক্ষেপে গিয়ে বললো, তুই তো এখনো সুনীল-শীর্ষেন্দু-আবুলবাশার পড়িস নাই, তোর সাথে কিসের বই তর্ক। যা, আগে সুনীলের 'সেই সময়' পড়ে আয়!

কথাটা সত্য বলেই গায়ের চামড়া জ্বলে গেল। আসলেই ওই বাংলার তেমন কোন বই পড়িনি তখনো। অত দাম কে কিনে? বইটা দোকানে সাজানো দেখে মনকে বলেছি, "চোখ সামালে রাখো। আড়াইশো টাকা দাম ওটার। তুমি পঞ্চাশ টাকার বইতেই যেতে পারোনি এখনো"।

আজব কান্ড। বদ্দাকে জবাব দিতেই যেন কদিন পরেই আচমকা একটা দৈব প্রাপ্তিযোগ ঘটলো। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনশো টাকার অপ্রত্যাশিত কামাই। টাকাটা দ্রত তুলে নিয়ে সোজা 'কারেন্ট বুক সেন্টার'। বীরদর্পে সুনীলের 'সেই সময়' নিয়ে বাসায়। প্রায় গোগ্রাসে গিলে হজম করি বইটা। এত ভালো লেগেছিল যে বইটা পড়ার পর কিছুদিন উনিশ শতকের উপর ঘোর চলে এসেছিল। কালীপ্রসন্ন সিংহের 'হুতোম পেঁচার নকশা' পড়ার আগ পর্যন্ত ঘোরটা লেগেই ছিল।

একদিন সেই বইটা আরেক বিদ্যামাস্তান বদ্দা ধার নিল। তার কাছ থেকে থেকে নিল আরেকজন, তার থেকে আরেকজন.......এভাবে বইটা ক্রমাগত কয়েক হাতে যাবার পর শোনা গেল সে নিখোঁজ হয়ে গেছে কোন এক মার্ক টোয়েনের হাতে। কষ্টটা গেঁথে ছিল অনেকদিন।

আরো লিখতাম কিন্তু মার্ক টোয়েনের নাম এসে গেছে বলে ক্ষ্যামা দিলাম। এই গুরুর কথা লিখলে আরো কয়েক পৃষ্টা গড়াতে কাহিনি। সেটা অন্য কোনদিন।

Saturday, February 12, 2011

সান্ধ্যাকালীন ব্লগরব্লগর প্রচেষ্টা

১.
রাতে একটা মেজবানের দাওয়াত আছে। চট্টগ্রামের মেজবান জিনিসটা প্রায় সবার মতো আমারও পছন্দ। কিন্তু আজকের দাওয়াতের জায়গাটা নাপছন্দ আমার, হৈ হৈ করে খানাপিনার ব্যবস্থা নাই ওখানে। খেতে হবে চুপচাপ, ছুরি কাটায় কেবলি টুংটাং। সবকিছু খুব বেশী সাজানো গোছানো সুশৃংখল, সুন্দর। এত বেশী শুভ্রতা ভালো লাগে না অনভ্যস্ত চোখে। বেয়নেট দেয়া রাইফেল হাতে উর্দিপরা সিপাহির নিরাপত্তা ছাউনিতে এখনো স্বস্তিবোধ করি না। হাসি হাসি চোয়াল ব্যাথা করা কাষ্ঠহাসি, বড়লোকী দাওয়াতের বিড়ম্বনা। তবু কর্মসুত্রের দাওয়াতে না গিয়েও হয় না।

২.
যখন কিছু লিখতে ইচ্ছে করে, কিন্তু মাথার ভেতরে কোন বাক্য কাজ করে না সেরকম দুঃসময়ে যেসব এলোমেলো বাক্য পয়দা হয় তাকে কোবতে বলে ভুল হতে পারে। যেমন-

বেহিসেবি কথা বলার একজন বন্ধু দরকার
বেয়াড়া সময় কাটানোর একটা জীবন
বেসামাল হারিয়ে যাবার একটা অরণ্য আর
বেহুদা লেখালেখি করার একটা খাতা
পাইনি পাইনি করে সব পাওয়া হয়ে গেলে

একদিন- বন্ধু এসে জানালো
এইসব পাগলামিতে কোন প্রেম নেই,
এর সবকিছুই অসুস্থতার লক্ষণ!

তারপর থেকে আমি হাসপাতালে বন্দী,
আর তুমি মুক্ত বিহঙ্গ।

এইটা কোন জাতের পদ্য হইলো না। তবু আজকাল ব্লগরব্লগর আবিষ্কার হবার পর আবজাব কিছু ফেললে ডিলিট বাটনের বদলে পোষ্ট বাটন টিপে দিতে ইচ্ছে হয়। প্রযুক্তির বিড়ম্বনা।

৩.
ডিলিট বাটনের ব্যবহারে মনে পড়লো আজকে ফেসবুকে ঢুকে দেখি এক ভার্চুয়াল বন্ধুর তালিকা থেকে দ্বিতীয়বারের মতো শহীদ। বিনা কারণে। কেন যে এডায় কেন ডিলিটায় বুঝি না। ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব বড় কুটিল।

তয় তার কাছে বিনীত অনুরোধ, ভাই মাফ চাই আর কাপুরুষ বানাইস না। আমাকে আবার এড করিস না, ৩য় বার ডিলিটও করিস না। কাপুরুষই বারবার মরে, বীরেরা নাকি মরে একবার। আমি কাপুরুষ হইতে চাহি না।

কাপুরুষের কথায় মনে পড়লো কা-নারী জাতীয় কিছু নেই কেন বাংলা অভিধানে? নাকি আছে?

ব্লগরব্লগর প্রচেষ্টা কদ্দুর সফল হলো কে জানে?

ধরাশায়ী

ধরা কাহিনী সবারই আছে। জীবন মাত্রেই মরণশীল, মানুষ মাত্রেই ধরাশীল। ধরা খাওয়ার মধ্যে কোন লজ্জা নাই, কোলেষ্টেরোলও নাই। তবে ধরা কাহিনী নগদের চেয়ে বাসীই মজাদার। তাই গতকাল যে ধরাটা খেয়েছি সেটা এখন না বলে পুরোনো গুলিই বলছি।

মোবাইল 'ধরা': একটেল

দশ-বারো বছর আগেও ভোররাত থেকে লাইন ধরে হুড়োহুড়ি ধাক্কাধাক্কি করে ত্রিশ চল্লিশ হাজার টাকা খরচ করে মিনিটে ৭ টাকায় কথা বলার সুবর্ণ সুযোগ পাবার জন্য যে কোম্পানীর কানেকশান কিনতো মানুষ, তার নাম গ্রামীণ ফোন। ক্রেতা সামলানোর জন্য পুলিশ ডাকতে হয়েছে সেরকম কোম্পানী পৃথিবীতে খুব বেশী নেই। গ্রামীণের ক্রেতাভাগ্য ঈর্ষনীয় ছিল।

আমি গ্রামীনের লাইনে দাঁড়াইনি কখনো। মোবাইল ফোন বড়লোকের জিনিস, বাসার ল্যান্ডফোনই যথেষ্ট, এই ধারনাটা এক বন্ধু এসে নাড়িয়ে দেয় যখন সে বিদেশ যাবার আগে তার একেটেল মোবাইলটা আমাকে বন্ধুসুলভ দামে 'উপহার' দিয়ে যেতে চাইল।

'উপহারে' আমার আপত্তি নেই জেনে 'মাত্র' আট হাজার টাকায় দূর্লভ একটেল পোষ্টপেইড সিম আর সাথে বোনাস হিসেবে সাড়ে তিন হাজার টাকার দুমাসের বকেয়া বিল বুঝিয়ে দিয়ে সে বিদেশে চলে গেল। একটেলের ওই সিমটা তখন মহার্ঘ ছিল 'ইনকামিং ফ্রি' ছিল বলে।

কিছুদিন পরে এক প্রতিবেশী আমার কাছে সীমটা 'মাত্র' দশ হাজার টাকায় কিনতে চাইলে আমি ঝাপটা দিয়ে উড়িয়ে বললাম, 'বেকুব পাইছো আমাকে? ওই সিমের দাম শেয়ার বাজারের মতো বাড়তেছে, ছমাস পর বিশ হাজার টাকায় উঠবে'। বুদ্ধিমান হলাম, সিমটা যত্ন করে রেখে দিলাম।

কিন্তু মাত্র ১১ মাসেই সিমের দাম মাটিতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। ৫০০ টাকায়ও কেউ মুলোয় না দশ হাজার টাকার সিম। উল্টা বেহুদা মাসিক কানমলা আড়াইশো টাকার লাইন রেন্ট। সিমটা নর্দমায় ফেলেও দিতে পারছি না কারণ বাসার ঠিকানায় বিল আসে, সিম ফেলে দিলেও খেলাপী বিলের জন্য কোনদিন আবার পুলিশ আসে । পরে পাড়ার এক ছোটভাই দয়া করে বিনে পয়সায় সীমটা 'উপহার' নিয়ে আমাকে উদ্ধার করলো।
========================================

মোবাইল 'ধরা': টেলিটক
গ্রামীনের সিম নিয়ে মারামারি, কাড়াকাড়ি থেমে গেলেও টেলিটক নামের সোনার হরিণের জন্য ঢাকায় কয়েক দফা মারামারি হয়ে গেছে তখন।

বাঙালীর ধর্ম নতুন কিছু পাবার জন্য দাঙ্গাদাঙ্গি করতেই হয়। সেই সময় ঘোষনা এলো ঝামেলা এড়াতে টেলিটক ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভাগ্যবানদের নির্বাচিত করবে। চট্টগ্রামে বসেই আবেদন করা যাবে।

নিয়ম হলো জনপ্রতি মাত্র একটা আবেদন। বললেই হলো? দিলাম দুটো এপ্লাই করে, একটা নিজের নামে,আরেকটা বউয়ের নামে। আইন ভাঙার মজাই আলাদা। কিন্তু লটারীভাগ্য খারাপ আমার, বউয়ের নামটাই জিতলো। তবু খুশী কারন আইন অমান্য করার নগদ ফজিলত পেলাম।

২৭০০ টাকা জমা দিয়ে নির্দিষ্ট ব্যাংক থেকে সীম নেবার জন্য বলা হলো। সেই ব্যাংকটা অফিস থেকে অন্তত দশ বারো কিলোমিটার দুরে জঘন্য যানজট এলাকা খাতুনগঞ্জে। পরদিন আমি খাতুন গঞ্জের নির্দিষ্ট ব্যাংকে গেলাম সিম তুলতে।

দুপুর পেরিয়ে গেছে তখন। ব্যাংক থেকে বলা হলো যার সিম তাকেই তুলতে হবে। যদি সে আসতে না পারে তাহলে আমাকে অথরাইজ করে দিতে হবে, সাথে ফটো জাতীয়তা আর মেট্রিকের সার্টিফিকেট লাগবে। এক ঘন্টার মধ্যে না দিতে পারলে আজকে বন্ধ, আগামীদিন আবার আসতে হবে। মাথা খারাপ? একটা সিম নিতে দুদিন গচ্ছা দেবো? আজকেই নেবো। টেক্সী নিয়ে সোজা বাসায় গিয়ে বউয়ের স্বাক্ষর, ছবি, সার্টিফিকেট নিয়ে সেই অতি দুর্লভ সিমটা সংগ্রহ করলাম।

অবশেষে টেলিটক নামের সোনার হরিনের মালিক। সস্তায় কথা বলা, ইনকামিং ফ্রী, লাইন রেন্ট নাই, টিএন্ডটিতে ফোন করলে এক্সট্রা বিল নেই, মাত্র ২৭০০ টাকায় কত্তো সুবিধা! গর্বে বুক টানটান।

মাসখানেক পর।

পাশের টেবিলের রাশেদ জানালো সে এইমাত্র দুটো টেলিটক সিম কিনছে আগ্রাবাদ থেকে। আমি চোখ তুলে তাকালাম।
-টেলিটক? কেমনে? আবার দিচ্ছে নাকি? লটারীতে?
- আরেন্না, রাস্তা থেকে।
-আহা, রাস্তা থেকে কিনলা? দাম বেশী নিছে নিশ্চয়ই
-বেশী নিবে কেন?
-আমরা তো ব্যাংক থেকে বেসিক প্রাইসে কিনছি, বাইরের লোক তো প্রফিট যোগ করে বিক্রি করবে। তা কতো নিল তোমার কাছে, তিন হাজার নাকি চার?
-প্রতিটা বিশ টাকা
-কি????
-বিশ
-মশকরা করো?
-কসম
-তোমার কসমের গুল্লি মারি, সত্যি বলো কত খসলো
-সত্যিই বিশ টাকা। কেউ কেউ নাকি বিশ টাকায় দুটো সিমও পেয়েছে, আমার চল্লিশ গেল দুটোতে।
-কী?????

ফিট না খেলেও গুম হয়ে বসে থাকি। ২৭০০ টাকার সিম ২০ টাকায় ফুটপাতে নেমে আসবে কে জানতো। আর কটা দিন অপেক্ষা করলেই হতো।

========================================
আন্তর্জাতিক ধরা
এক দশক আগের কথা। অফিসের কাজে পূর্ব এশিয়ার একটা দেশে গিয়েছি ৭ দিনের জন্য। হোটেলের থাকা খাওয়ার সমস্ত খরচ কোম্পানীর। রাতে শোবার আগে বিছানার পাশে রাখা টেলিফোনটা দেখে ইচ্ছে হলো দেশে ফোন করি। কিন্তু লাভ নাই। হোটেলের রুমে সাধারনত লোকাল ফোনই থাকে। তবু বেনিফিট অব ডাউট চিন্তা করে ফোনটা কানে লাগাতেই দেখি টোঁ টোঁ করছে আইএসডি টোন। বোতাম টিপতেই সাঁ করে লাইন বাংলাদেশে চলে গেল। মজা তো!

প্রত্যেকদিন রাতে হোটেলে ফিরে দেশের খোঁজ খবর করি। ফোন ফ্রী পেলে বাঙালীর খোঁজ খবরের কাজ বেড়ে যায়। ফ্রী না হলেও দুচারশো টাকার বিল আসলে ক্ষতি কি। কোম্পানী দেবে নতুবা আমিই দিয়ে দেবো। কিন্তু হোটেল ছাড়ার সময় কেউ বিল খুঁজলো না ফোনের। আমিও অফিসকে জানালাম না ব্যাপারটা।

দেশে ফিরে আসলাম নিরুপদ্রপেই। দশ পনেরোদিন পর অফিসের কাজটাজ গুছিয়ে বেরুচ্ছি, এমন সময় একটা মেইল এলো আমার হেড অফিস থেকে। সাথে একটা এটাচ ফাইল। সেই হোটেলের বিলের কপি। ওটায় লেখা আছে, ৫ দিনে ৩৫ মিনিট কথা বলা বাবদ আমার কাছে পাওনা হয়েছে ১১৫ ডলার! কল নাম্বারের লগ সহ দেয়া আছে।

ওই দেশের আন্তর্জাতিক কল রেট যে আমাদের প্রায় দশগুন ছিল কে জানতো!
========================================

শেয়ার বাজার ১৯৯৬
শেষে বললেও আসলে এটাই ছিল জীবনের প্রথম ধরা।

শেয়ার বাজারে চরম চাঙ্গা ভাব দেখে বাবার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে দুটো কোম্পানীর সেকেন্ডারি শেয়ার কিনে ট্রান্সফার করে ভদ্রলোক হয়ে বসে ছিলাম। ভেবেছি এটা ভদ্রলোকদের ব্যবসা, এত বেচাবিক্রি কার্ভ মার্কেট ইত্যাদি নিয়ে অস্থির হবার কি আছে। শেয়ারের দাম আস্তে আস্তে বাড়ুক। কয়েক বছর পরে মোটা লাভ নিয়ে বিক্রি করবো।

এক লাখ টাকার বিনিয়োগ যখন দুমাসের ব্যবধানে দুলাখে উঠলো তখন অনেকে বললো বিক্রি করে লাভ উঠিয়ে নিতে। বন্ধুদের কেউ কেউ কিনতেও চাইল ভালো দামে। আমি তাদের গম্ভীর হয়ে বললাম, আমি ফটকা কারবারী না। একদিনে সব লাভ খেয়ে ফেলতে চাই না। কারো কথায় কান না দিয়ে শেয়ার সার্টিফিকেটগুলো আলমারীতে তুলে রাখলাম ভবিষ্যতের রিজার্ভ সম্পদ হিসেবে এবং চাকরীতে মনোযোগ দিলাম।

কিন্তু অন্ধ হলে তো প্রলয় বন্ধ থাকে না। তিন-চার মাস পরেই শেয়ার বাজারের পাহাড়টা পতেঙ্গা সৈকতের বালিতে মিশে গিয়ে আমার দু'লাখ টাকাকে দশ হাজার টাকা বানিয়ে চলে গেল।

সেই ক্ষতির একটা উপকার পেলাম পনেরো বছর পর। ন্যাড়া আর বেলতলায় যায়নি বলে ২০১১ সালের শেয়ার ধ্বসে কোন আঘাত লাগেনি তার।

.
[উৎসর্গঃ সকল ধরাশায়ী ব্লগার]

[অচেনা পাহাড়ে, পার্বত্য চট্টগ্রামে-পাঁচ] অভিশপ্ত ঘড়ি

কেরোসিন স্টোভ জ্বেলে ভাত আর আলু একসঙ্গে সেদ্ধ করতে দিল ধনু। হঠাৎ করে মাছ খেতে ইচ্ছে করলো আমার। আবদার পাড়লাম,খালি ভাত আর আলু সেদ্ধ খাওয়াবি? মাছ খাইতে মন চায়, তোদের এই নদীতে মাছ নেই? ধনু চোখ টেরা করে তাকালো, তারপর হেসে ফেললো, তোর দেখি খায়েশ কম না। এই রাতে মাছ ধরবো কেমনে?

আমি জানি মাছ খেতে ইচ্ছে করাটাই সার। রাতের বেলা মাছ ধরা অসম্ভব। কথার কথা বলা। কিন্তু ধনু ভাত চুলায় দিয়ে নৌকার পেছনে চলে গেল। ওখান থেকে দুটো বাঁশ বের করলো। বাঁশ দুটোতে গামছামতো কিছু বাঁধা আছে। আমি অন্ধকারে বুঝতে পারলাম না কি ওটা। জাল নাকি?

ধনু বললো, একটা বুদ্ধি আসছে মাথায়। নদীর ওইপাশে ছোট খাড়ি আছে। এসব খাড়িতে বড় বড় চিংড়ি মাছেরা সাঁতার কাটে সন্ধ্যেবেলা। সেরকম পাওয়া গেলে নদীতে নামতে হবে না, ছেঁকেই তুলে নেয়া যাবে কয়টা। চল নৌকাটা কাছে নিয়ে যাই।

নৌকা খাড়িটার কাছে গেলে সে বাঁশ দুটোকে ক্রস করে কায়দামতো পানিতে ফেললো। আবার তুললো, আবার ফেললো। এরকম বেশ কয়েকবার করার পর, ধনু চিৎকার করে উঠলো। ফাই ফাই ফাইদিইইইইই ........আমি খুশীতে লাফ দিলাম। চিংড়ী পাইছস? ধনু বললো, আরে না চিংড়ীর বদ্দা। একটা আস্ত সাপ ধরছে জালে। দারুন রান্না হবে রে।

আমি বললাম, সাপ??? তুই সাপ খাবি?? ইয়াক!!
সে অবাক হয়ে তাকালো, তোরা বাঙালীরা খাওয়ার মজাই বুঝলি না। তোর চিংড়ির চেয়ে এই সাপের তরকারী অনেক মজার। খেয়েই দেখ না আগে।
আমি বলি, তোর সাপ তুই খা ব্যাটা, চিংড়ী পাওয়া না গেলে আমি আলুসেদ্ধ দিয়েই খাবো।
ধনু হেসে বলে, চিন্তা করিস না। এখানে চিংড়িও পেয়ে যাবো দুয়েকটা।

সাপটাকে নৌকার সাথে এক আছাড় দিয়ে খতম করে ছুরি দিয়ে মাথা কেটে নদীতে ফেলে দিল। শরীরের বাকী অংশটা নৌকার একপাশে ছুড়ে মারলো।

আবার খাঁড়িতে খোঁজ দ্য সার্চ চললো। কয়েকবারের চেষ্টার পর আবারো ধনুর চিৎকার। ফাই ফাই ফাইদিইইইইইইই.........আমি মনে মনে বিরক্ত হয়ে বললাম, ব্যাটা আরেকটা সাপ পাইছে।

না, এবার সত্যি সত্যি চিংড়ী। সাইজ দেখে বাগদা চিংড়ি মনে হলো। চার পাঁচটা বড় বাগদা ত্রিং ত্রিং করে হাতপা ছুঁড়ছে জালের মধ্যে।

হঠাৎ পোড়া গন্ধ নাকে যেতেই, হারেরেরেরে করে ধনু ছুটে গেল চুলার কাছে। সব গেছে পুড়ে। পোড়াভাতই খেতে হবে আজ। চাল নাই আর। কিন্তু চিংড়ির যে সাইজ তাতে ভাত না হলেও চলবে আমার। ধনুর চোখেও খুশীর ঝিলিক, সাপ দিয়েই পেট ভরাবে ব্যাটা।

খাওয়া সেরে আমি চা বানালাম। টি ব্যাগ ছিল আমার। টিনের মগে চা নিয়ে ধনু ছইয়ের বাইরে চলে গেল। আমি চা খাওয়া শেষ করে সিগারেটে আগুন দিলাম। ধনুও হাত বাড়িয়ে নিল একটা। তারপর আনমনে কথা বলতে শুরু করে-

আমার বাবারা অনেক ভাই। এগারোজন। তার মধ্যে মাত্র একজন আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখতো। মিজুক মার্মা। সেও খানিকটা বাবার মতো বাউন্ডুলে। কোথায় কোথায় উধাও হয়ে যেতো কিছুদিন পর পর। কি করতো কেউ জানতো না। আমার বয়স যখন ষোল সতেরো বছর, তখন একদিন এসে আমাকে নিয়ে শিকারে যাবার প্রস্তাব দিল। মা রাজী না, বাবাও মত দেয় না।

কিন্তু আমি যাবার জন্য গোঁ ধরি। সবার নিষেধ অমান্য করে আমি মিজুকের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ি। আসলে শিকার হলো অজুহাত। মিজুক আমাকে অদ্ভুত একটা জায়গার গল্প করেছিল। সেখানে নিয়ে যাবার জন্য আমিই গোঁ ধরেছিলাম। বাবামা যেতে দেবে না বলে, শিকারের অজুহাত দিতে হয়েছিল।

কিছুদূর নৌকা, কিছুদুর পায়ে হেঁটে, বেশ কয়েকদিন পর যে জায়গায় হাজির হই সেটা অন্যরকম জগত। বনজঙ্গল পাহাড় পর্বত সবই আমাদের মতো। কিন্তু কেমন যেন সুনসান গা ছমছম নীরবতা। কোথাও কোন শব্দ নেই।

আমাদের পাহাড়ে যতই নির্জনতা থাকুক, পাখি গান গায়, পোকা গান গায়, ফড়িং উড়ে ফড়ফড় করে, কাটবেড়ালী লাফ দেয় গাছ থেকে গাছে। নানারকম শব্দে আলোড়িত থাকে গ্রাম। কিন্তু এই জায়গায় কোন শব্দ নেই। একদম চুপচাপ চারদিক। এমন নিঃশব্দ জগত আমি আর কখনো দেখিনি। দম বন্ধ করা নিস্তব্ধতা। পায়ের নীচে একটা শুকনো পাতা পড়লেও মচ করে শব্দটা অনেক দূরে চলে যায়। এত নিস্তব্ধতার কারণ কি?

খানিকক্ষণ ঘুরে বেড়ানোর পর আবিষ্কার করি, এখানে কোন পাখি নেই। একটাও না। শুধু পাখি না উড়ন্ত কোন প্রাণীই দেখা গেল না। এত সুন্দর একটা জায়গায় এই নীরবতাটা কেমন বেমানান। গায়ে কাটা দিল।

এখানে নাকি জঙ্গলের ভেতর কোথাও একটা গীর্জা আছে। মিজুক শুনেছে ওই গির্জাটা কয়েকশো বছরের পুরোনো। পর্তূগীজ একদল তান্ত্রিক গির্জাটা নির্মান করেছিল। গির্জাটা উপাসনার কাজে যতটা ব্যবহার হয়েছে তার চেয়ে বেশী ব্ল্যাক আর্ট চর্চার কাজে।

কিরকম চর্চা করতো একালের কেউ জানে না। কিন্তু এই অঞ্চলে নাকি কথিত আছে, ওরা এই গির্জা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানে মানুষ দূরে থাক, পশুপাখিও পালিয়ে গেছে বন থেকে। শোনা যায় প্রধান পুরোহিত নাকি বাজপাখীর চেহারায় উড়ে বেড়াতো জঙ্গলে। উড়ন্ত যে কোন প্রাণী বলি দেয়ার নিয়ম ছিল ওদের। যদিও মানুষ বলি দেবার কথা শোনা যায়নি, তবু ভয়ে সব মানুষ এলাকা ছেড়ে পালায়।

গত দূশো বছরে এখানে কোন বসতি হয়নি আর। এই দুর্গম অঞ্চলে বিদেশী কোন শক্তি পা দিয়েছে ভাবতে অবিশ্বাস্য লাগে।

এই এলাকাটা কোন দেশের তাও নিশ্চিত না। এটা নাকি বার্মা ভারত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা। দুর্গমতার কারণে আদিকাল থেকেই সীমানা নির্ধারিত হয়নি এই অঞ্চলের। তিন দেশের আদিবাসী বিদ্রোহীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। গীর্জাটা কাদের দখলে আছে তাও জানা যায় না। কিন্তু এই জঙ্গলের কয়েক মাইলের মধ্যে আছে। মিজুক শুনেছে ওই গীর্জায় প্রাচীন কিছু ইউরোপীয় আসবাব আর সৌখিন দ্রব্য আছে। সৌখিন দ্রব্যগুলো কোনমতে হাত করতে পারলে অনেক দামে বিক্রি করা যাবে। আমাকে সাথে নিয়ে আসার ওটাও অন্যতম কারণ।

কিন্তু গীর্জা খোঁজা কতটা নিরাপদ? বিদ্রোহী বাহিনীর হাতে পড়লে গুলি খেয়ে মরতে হবে। মিজুক অভয় দিল, আমাদের পরিচয়ও বিদ্রোহী। আমরা বাংলাদেশী বিদ্রোহী হিসেবে পরিচয় দেবো। ধরা পড়লে বলবো আমরা দেশ থেকে পালিয়ে এসেছি শান্তিবাহিনীতে যোগ দিতে।

আন্দাজ করা যায় গীর্জাটার অবস্থান হবে পাখিবিহীন এলাকার ভেতরে। সুতরাং খুঁজতে হবে যেখানে পাখি নেই কেবল সেই এলাকায়ই। কিন্তু কতোবড় এই এলাকা? তাছাড়া এত বছর পরেও মন্দির এবং তার আসবাবগুলো সংরক্ষিত আছেই সেটা কি করে ভাবলো মিজুক। আমি সংশয়ে আছি তবু কিছু বললাম না মিজুককে। এতদূরে যখন এসেছি, খুঁজেই দেখি।

দুদিন এলোপাথাড়ি চষে ফেললাম এলাকাটা। গীর্জা দূরে থাক, একটা জনপ্রাণীর দেখাও মেললো না।

তৃতীয় দিন রান্নার জন্য লাকড়ি পাড়তে একটা বড় গাছে উঠেছি। গাছে উঠতেই চোখে পড়লো অদূরে ঘন একটা জঙ্গল, যেখানে অনেকগুলো গাছ জড়াজড়ি করে লতায় পাতায় সবুজের একটা স্তুপ তৈরী করেছে। বিশাল পরিধির জংলার সামনে খোলা এক ফালি প্রান্তর। এক মানুষ উচ্চ ঘাসে ছাওয়া। জঙ্গলের আকৃতিটা আমার চোখে সন্দেহ যোগালো। ওটার ভেতরেই কি সেই গীর্জা? গাছ থেকে নেমে মিজুককে ডাক দিলাম। মিজুক ছুটে এসে গাছে চড়লো। সে আনন্দে লাফ দিল। মোটামুটি নিশ্চিত এটাই সেই গীর্জা। কিন্তু জায়গাটা যদিও মাত্র দুশো গজ দূরে, কিন্তু এই ঘন জঙ্গল পেরিয়ে ওখানে পৌছানো অসম্ভব। হয়তো গত একশো বছরেও কারো পদার্পন পড়েনি ওদিকে।

জঙ্গল কেটে ওটার কাছে যেতে যেরকম যন্ত্রপাতি লোকবল দরকার তার কিছুই নেই আমাদের। আমি হাল ছেড়ে দিয়ে মিজুককে বললাম, যথেষ্ট হয়েছে। আর ভাল্লাগছে না। ভয়ংকর গীর্জাটার ভেতর মহামূল্যবান হীরক খন্ড থাকলেও আমি নিতে রাজী না। ফিরে যাই চলো। কিন্তু মিজুক এসেছে কেবল ওটা খুঁজে বের করার জন্য। সে ওটার ভেতরে না ঢুকে যাবে না। কিছু মানুষ এত গোঁয়ার ও লোভী হতে পারে। নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে সম্পদ গড়তে চায়।

আমাকে বললো, তোর ভালো না লাগলে ফিরে যা,আমি ওখানে ঢুকেই ছাড়বো।

এখান থেকে একা ফেরার কথা ভাবাই যায় না। পথঘাট চিনি না, তাছাড়া ভয়ংকর এলাকা এটা। অশরীরী কোন ব্যাপার আছে এখানে।

পরদিন একটা রাস্তা আবিষ্কার করা গেল। জঙ্গলটার ঠিক পেছনে পাহাড়টা নেমে গেছে অনেক ঢালুতে। ওইদিকে গিয়ে মিজুকের চিৎকার, পেয়ে গেছি।

আমি দৌড়ে গিয়ে ঢালুর দিকে নেমে এগিয়ে গেলাম মিজুকের দিকে। এদিকটা খাড়াই বলে বোধহয় অরক্ষিত। কোন জঙ্গল নেই। গীর্জার ভগ্নপ্রায় কাঠামোটা দেখা যাচ্ছে এখান থেকে।

আর দেরী হলো না। হাতের ছোট ছুরি দিয়ে জঙ্গল কেটে সাফ করতে করতে এগোচ্ছি, এমন সময় একটা পাথরে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম। চোট লাগলো খুব। মিজুক ছুটে এল আমার কাছে। কিন্তু আমাকে না তুলে আমি যে পাথরে আছাড় খেলাম সেদিকে তাকিয়ে আছে। আমিও এতক্ষনে খেয়াল করলাম। তিনটা পাথর খাড়া দাঁড়িয়ে। ওটার উপর আরেকটা পাথর ছাদের মতো দিয়ে কিছু একটা তৈরী করা হয়েছে। একটা নয়। এদিক ওদিক ছড়ানো আরো অনেকগুলো। কি এগুলো? বসার স্থান? পূর্তগীজ ওঝারা বসে চা খেত বিকেলবেলা?

মিজুক আমার সংশয় দূর করে বললো, এগুলো কবর। এটা একটা কবর খানা। কথাটা বিশ্বাস করতে আপত্তি রইল না। এরকম কবর কাদের হতে পারে। খ্রিষ্টানদের তো এরকম কবর থাকার কথা না। এই প্রশ্নের উত্তর দেবার কেউ নেই ওখানে। সুতরাং আমরা গীর্জায় প্রবেশ করার জন্য উঠলাম। গীর্জটা এককালে যে খুব সমৃদ্ধ ছিল কাঠামোই বলে দিচ্ছে তা। কিন্তু গীর্জাপতিদের উদ্দেশ্য এখনো পরিষ্কার হলো না। কখনো হবেও না। গীর্জার পেছনদিকে দরোজা নেই, একটা ফোকর মতো আছে ক্ষয়ে যাওয়া দেয়ালে ওটা দিয়ে একটা শেয়াল সহজেই ঢুকতে পারে। মানুষেরও ঢুকতে অসুবিধা হবার কথা নয়। কিন্তু ফোকরের ভেতরে জমে থাকা অন্ধকার আমাকে না না করতে লাগলো। ইচ্ছে করছে পালাই। এই অশুভ মন্দির থেকে পালানো দরকার।

মন বলছে ঠিকই, কিন্তু শরীর উল্টো পথে। পা দুটো টেনে নিয়ে যাচ্ছে যেন কেউ। ফোকরের কাছে পৌছে মিজুক উঁকি দিল ভেতরে। এই লোকের সাহস আছে। এমন ভাবে উঁকি দিল যেন প্রতিদিন ওখানে যায়। নৈঃশব্দটা এখন আরো প্রকট হয়েছে। তিরতির করে পাতার কাঁপুনির শব্দও কানে বাজছে। মিজুকের দাঁত বেরিয়ে পড়লো বামদিকে কি যেন দেখে। আমাকে হাত ইশারায় ডাকলো। আমি বললাম, না তুমি যাও। আমি আছি এখানে। কিন্তু সে ধমকে উঠাতে আমাকে যেতে হলো। বামদিকে একটা ঝুরঝুরে কাঠের তক্তা, যেটা এককালে দরজা ছিল বলে মালুম হয়। লাথি দিয়েই ভেঙ্গে ফেলা যাবে।

মিজুক দেরী না করে দড়াম করে একটা লাথি দিলে মড়াৎ করে তক্তাটা ভেতরের দিকে পড়ে গেল। গীর্জার ভেতরে ভয়াবহ অন্ধকার। তিনদিকে জঙ্গলে ঘিরে পিষে ফেলছে। ভেতরে ভয়ংকর সাপখোপের আখড়া আছে নিশ্চয়ই। নিজেরা সাপ খেলেও সাপের কামড়ে ভয় ছিল। তাছাড়া তখনো সাপ ধরায় ততটা পাকা হইনি। ঢোঁড়া সাপ বাদে আর কোন সাপ ধরতে জানি না।

কিন্তু মিজুকের হাতে যে ছুরি ওটা দিয়ে সাপের কল্লা ফেলে দিতে এক সেকেন্ডও লাগবে না। ভেতরে ঢুকে ম্যাচের কাঠি জ্বালালো। একটুকরো আলো কোনমতে হাসলো তার হাতের তালুতে। কিন্তু এত অল্প আলোয় সেই ভয়াবহ অন্ধকার দূর করার কোন ব্যবস্থা হলো না। মিজুক কোমর থেকে গামছা খুলে ফরফর করে ছিঁড়ে একটা ডালের আগায় বেধে দিল। হয়ে গেল একটা মশাল। এবার ভেতরের চেহারা ভেসে উঠলো।

আশ্চর্য! গীর্জার ভেতরটা একদম ফাঁকা। চেয়ার টেবিল দেরাজ ড্রয়ার কিচ্ছু নেই। চারপাশে চারটা দেয়াল বাদে কোথাও কিচ্ছু নাই। কিন্তু মিজুক খুঁজতে থাকলো গুপ্তধন। সবগুলো দেয়ালে মেঝেতে টোকা দিল একে একে। কোথাও কিচ্ছু নাই দেখে পাগলামি শুরু করলো রীতিমতো।

মশালের আলোটা উপর দিকে যেতে কিছু একটা চোখে পড়লো আমার। ছাদের বীম থেকে দড়িতে ঝুলছে একটা ঘড়ি। ওটা মিজুককে দেখাতেই তার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো খুশীতে। আমাকে কাঁধের উপর দাঁড় করিয়ে নামিয়ে আনলো ঘড়িটা। অল্প আলোয় ঘড়িটা দেখেই আমি ওটার প্রেমে পড়ে গেলাম। এত সুন্দর ঘড়ি হতে পারে? এটা যদি আমি পেতাম? কিন্তু এটা তো মিজুকের হবে। মিজুক এরকম দূর্লভ জিনিসের খোঁজেই এখানে এসেছে। ভেবেছে আরো অনেক কিছু পাবে যা বিক্রি করে বড়লোক হয়ে যাবে। ঘড়িটা নিয়েই বললো এটা ইন্ডিয়া পার করতে পারলে লাখ রুপেয়া! হা হা।

শুনে আমি কেন যেন কেঁপে উঠলাম।

আর কিছু না পেয়ে শুধু ঘড়িটা নিয়েই আমরা ফেরার পথ ধরলাম। ফেরার পথে মিজুকের সাথে দৌড়ে পারছি না। যেন উড়ে যাচ্ছে। চার পাঁচদিন এক নাগাড়ে হেটেছি। রাতে কোথাও ঘুমিয়ে পার করি, আর দিনের বেলায় হাঁটি। চারদিন হাঁটার পর এক জায়গায় এসে থামলাম। মিজুক আমাকে বললো, তুই এদিক দিয়ে গ্রামের পথে চলে যা, তিনদিন পশ্চিম দিকে হাঁটলেই চেনা পথ পাবি। এই ছড়া ধরে হেঁটে যাবি। আমি ইন্ডিয়া ঘুরে আসি। দাদাকে চিন্তা করতে বারন করিস। আমি ফিরলেই সুখবরটা দিবি।

আমি মিজুকের কাছ থেকে বিদায় নিলাম। নামতে নামতে ছড়ার কাছে নেমে পানিতে পা ছোঁয়াতেই পেছন থেকে মিজুকের তীব্র আর্ত চীৎকার। মাত্র কয়েকশো ফুট উপরে সে। কিন্তু চট করে ওঠা যায় না। উঠতে উঠতে চাচার দেহটা নিথর হয়ে গেল।

কানের ঠিক নীচে দুটো দাঁতের ছোবল। সাপে কেটেছে। মিজুকের শরীর ঝাঁকি দিলাম। কোন সাড়া নেই। কানের পাশে কিভাবে কামড়ে দিল বুঝলাম না। পাশেই পড়ে আছে ঘড়িটা। ওটা হাতে নিলাম। ঘড়িটার নীচের অংশে একটা দরোজা মতো। দরজায় একটা গোলাকার ছিদ্র। দরজাটা খুলতেই ভেতরে একটা ছোট্ট প্রকোষ্ঠ। সেখানে বিজাতীয় ভাষায় কি জানি লেখা আছে । এখানেই কি উড়কা সাপটা লুকিয়ে ছিল?

সাপটা পালিয়ে গেছে। মিজুকের লাশটা নিয়ে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। গ্রামে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। কিছু ডালপালা কেটে তার নীচে চাপা দিলাম দেহটা। ফেরার পথে পা চলছিল না। ঘড়িটা হাতে ঝুলিয়ে ফিরছি। সবুজ বনানী আর পর্বতময় বিরান ভূমি। লোকবসতির কোন চিহ্ন নেই। ছড়া ধরে হাঁটা শুরু করলাম। মিজুক বলেছিল পশ্চিম দিকে হাঁটতে। কিন্তু আমি পশ্চিমে যাবার রাস্তা পাচ্ছি না। এই ছড়ার কোথাও না কোথাও মানব বসতি থাকে। পাহাড়ে পানির সংকট প্রবল। তাই সবগুলো পাড়া কোন না কোন নদী কিংবা ছড়ার ধারে। সন্ধ্যের মুখে মুখে রাত কাটাবার মতো একটা উপযুক্ত জায়গা খুঁজছি তখনই ডানদিকের পাহাড়ে একটা ধোঁয়ার রেখা দেখা গেল। মেঘ না ধোঁয়া?

আরো ভালো করে পরখ করলাম। নাহ ওটা ধোঁয়াই। ওদিকে পাড়া আছে হয়তো। ছড়া থেকে উঠে পা চালালাম দ্রুত। আঁধার নেমে আসছে দ্রুত। জোরে জোরে পা চালাতে গিয়ে খেয়াল করিনি আমার পেছনে কেউ আসছে। কাঁধের উপর কেউ হাত রাখতেই ছিটকে লাফ দিলাম ভয়ে। ফিরে দেখি বয়স্ক একজন মানুষ। চেহারা বলছে বম গোত্রের লোক। আলাপ হলো। পরিচয় হলো। ওরা খুব নম্র ভদ্র শান্তশিষ্ট অতিথি পরায়ন। কুরংখা আমাকে আশ্রয় দিতে রাজী হলো ওদের গ্রামে। ওই ধোঁয়া ওঠা গ্রামটা ওদেরই।

গ্রামে গিয়ে পৌছে দেখি এরা আমার দেখা সবচেয়ে পশ্চাদপদ গোষ্ঠি। সভ্যতার কোন আলো প্রবেশ করেনি এখানে। অন্ধকার গ্রামে আর কোন ঘরবাড়ী দেখা গেল না। আরো ঘর আছে কিন্তু ওরা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে বলে দেখা যাচ্ছে না। এই পাড়ায় একমাত্র কুরংখার ঘরেই সন্ধ্যের পর বাতি জ্বলে। কারণ তার ঘরে আশ্চর্যতম বস্তু হারিকেন আছে। পাড়ার সর্দার বলে সে এটা যোগাড় করেছে বহুদূরের বাজার থেকে।

কুরংখার পাশের ঘরে থাকে ছোট ভাই আরাংখা। খাওয়া সেরে আরাংখা হুঁকো নিয়ে আসলো অতিথির সাথে গল্প করতে। গীর্জার গল্প সহ সব গল্পই হলো। ঘড়িটার গল্প করতে করতে হারিকেনের মৃদু আলোয় দেখা গেল, আরাংখা কেমন একটা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঘড়িটার দিকে। তার দৃষ্টিই বলে দিচ্ছে সে আমার কথাগুলো বিশ্বাস করেনি। ঠোটের কোনে তার ঝুলে থাকা হাসিটা ভালো লাগলো না। রাতে ঘুমোতে দেয়া হলো ঘরের সামনে মাচাং এর উপর। নীচে হাসমুরগীর ঘর। মাচার উপর শোয়াটা সুখের নয়। কিন্তু শোয়ামাত্র চোখ জড়িয়ে এলো সারাদিনের ক্লান্তিতে।

খুব ভোরের দিকে কারো তীব্র চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে গেল। আলো ফুটেছে মাত্র তখন। জেগে উঠে আধো অন্ধকারে দেখলাম পাড়ার সবাই ছুটে যাচ্ছে আরাংখার ঘরের দিকে। শব্দটা ওদিক থেকেই এসেছিল? আমিও গেলাম। দেখি আরাংখার নিথর দেহটা তার ঘরের সামনে পড়ে আছে চিত হয়ে। পাশেই আমার ঘড়িটা পড়ে আছে। ওটা ওখানে কি করে গেল?

বুঝতে বাকী বইল না আরাংখা চুরি করেছে ওটা কাল রাতে। তারপর খেয়াল করে দেখলাম ওর কানের লতির ঠিক নীচে দুটো দাগ। সাপ!! এই সাপ এখানেও আছে? তার মানে সাপটা ঘড়িটার পিছু নিয়েছে? ভয়ে গা শির শির করে উঠলো আমার। আমাকে কোন দিন ছোবল দেয় ঠিক নাই। কি বিপদ। পাড়ার মধ্যে তুমুল হৈ চৈ চলছে, কে মারলো কেন মারলো। কিন্তু সে মরেছে নিজের দোষে। তাই কেউ আমার দোষ দিতে পারবে না। তবু কুরংখা আমাকে বললো, তুই এখনি চলে যা, তোর এই জিনিসটা অভিশপ্ত। পাড়ার লোকজন তোকে ভালো চোখে দেখছে না। তোর জিনিস নিয়ে তুই চলে যা।

আমি ঘড়িটা হাতে ঝুলিয়ে বের হয়ে গেলাম। কিছুদূর গিয়েই ছড়াটা পেলাম আবার। ছড়া ধরে মাইলখানেক যাবার পর একটা পেঁপে গাছ দেখলাম, বুনো পেঁপে ধরে আছে। খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছিল। একটা পাকা পেঁপে কেটে খেয়ে নিলাম। আর দুটো থলেতে ঝুলিয়ে নিলাম। অজ্ঞাত কারণে ঘড়িটা ফেলতে পারলাম না। যথেষ্ঠ সমীহ করে এগিয়ে চললাম। কিন্তু মনটা আশংকায় ছোট হয়ে রইল। দুদুটো মানুষ মরে গেল এই ঘড়ির জন্য। এটাকে ফেলে দিলে কি হয়। কিন্তু ফেলতে পারছি না। মনে ভয়ও তাড়াতে পারছি না। সাপটা নিশ্চয়ই গাছে গাছে অনুসরন করছে। এটা উড়কো সাপ। উড়কো সাপ গাছ থেকে গাছে লাফ দিয়ে চলে।

তিনদিন হাঁটার পর চেনা পথের সন্ধান পাওয়া গেল। এখান থেকে দেড় দিন হাঁটলেই আমাদের গ্রাম। বাকী রাস্তায় আর কোন সমস্যা হলো না। নিরাপদে বাড়ী ফেরা হলো।

সেই থেকে ঘড়িটা আমার সাথে আছে।
............................................................................
ধনুর গল্প শেষ।

রাত কতো এখন? ভোর হয়ে আসছে নাকি? শীতের তান্ডবে হাড় মজ্জা সব এক হয়ে যাচ্ছে। এবার বুঝলাম ধনু নাপ্পি খাওয়ার জন্য এত উতলা হয়েছিল কেন। নাক কান সব টুপিতে ঢেকে শুয়ে পড়লাম।

সকালে জাগলাম অনেক বেলা করে। সূর্য উঠে গেছে। ধনু তখনো ঘুমে। মাথার ওপর ঝোলানো ঘড়িটা দেখলাম। কৌতুহল চাপতে না পেড়ে ঘড়িটা নামিয়ে দেখতে লাগলাম উল্টে পাল্টে। কাঠের কারুকাজের মধ্যে ছোট্ট একটা লাইন দেখে পড়তে চেষ্টা করলাম। ভাষাটা চেনা মনে হচ্ছে! লেখা আছে-
me ver, me adore, acredite em mim, ou morrer

পর্তূগীজ ভাষার একটা সতর্কতা। কিন্তু কেন? শিরশিরে অনুভুতিতে ডান হাতটা আপনাআপনিই ডান কানের লতির নীচটা স্পর্শ করলো।