১.
জারিয়া ঝাঞ্জাইল নামে বাংলাদেশে কোন স্টেশন আছে জানা ছিল না মারুফের। প্ল্যাটফর্মে নামার পর স্টেশনের অদ্ভুত নামটা দেখলো সে। ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে ময়মনসিংহের ট্রেনে ওঠার সময় তাকে বলে দেয়া হয়েছিল ময়মনসিংহও তার জন্য নিরাপদ নয়। সে যেন ময়মনসিংহ নেমে শহরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা না করে জারিয়াগামী কোন একটা লোকাল ট্রেনে উঠে পড়ে। জারিয়া থেকে সড়কপথে দুর্গাপুর। দুর্গাপুর থেকে নদী পার হয়ে সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করতে হবে। এই ছিল শওকতের বাতলে দেয়া পলায়নপথ। মারুফ জীবনে কোনদিন উত্তরবঙ্গে আসেনি। বাংলাদেশে তার গতিবিধি সীমাবদ্ধ ছিল ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত।
এখন এই অদ্ভুত সময়ে, অদ্ভুত একটা স্টেশনে নেমে সমস্ত শরীরের ক্লান্তি যেন ঝাঁপিয়ে পড়লো তার শরীরে। এরকম জঘন্য ট্রেনে সে জীবনেও চড়েনি। ঘুটঘুটে অন্ধকার বগিতে, অচেনা অজানা বিচিত্রসব লোকজনের ভিড়ের মধ্যে বসে গরমে তার শরীর চ্যাটচ্যাটে হয়ে আছে। ট্রেনটা এক ঘন্টা দেরী করে সাড়ে আটটার জায়গায় রাত সাড়ে নটায় ছেড়ে জারিয়া পৌঁছেছে রাত বারোটার দশ মিনিট আগে। বাংলাদেশের মানচিত্র সম্পর্কে তার কিছু কিছু ধারণা থাকলেও এদিকটা সম্পর্কে একেবারেই অন্ধকার। দুদিন আগেও সে কী জানতো এমন একটা ঘটনায় তাকে প্রাণ বাঁচাতে এমন করে পালিয়ে আসতে হবে চিরচেনা ঢাকা শহরের নিরাপদ জীবনকে পেছনে ফেলে। কিন্তু ঘটনাটা ঘটে গেল। এটা যেন অনিবার্য ছিল। আত্মীয় পরিবার বন্ধুবান্ধব কেউ তাকে আশ্রয় দেবার সাহস করেনি। একমাত্র শওকতই সাহস করে এগিয়ে এসে তাকে গোপনে ময়মনসিংহের ট্রেনে তুলে দিল।