১.
প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে অনলাইনে সাহিত্যচর্চার পরিমান বেড়ে গেছে তুমুলভাবে। অনলাইন পোর্টাল ছাড়াও সাহিত্য পত্রিকার সংখ্যাও অগণিত। দৈনিক, মাসিক, সাপ্তাহিক বাদেও ক্ষণে ক্ষণে গল্প কবিতা প্রকাশিত হয় তেমন পত্রিকাও কম নয়। ই-ম্যাগাজিন বা ওয়েবজিন বাদেও ফেসবুক সাহিত্য পত্রিকা নামের একটা নতুন জিনিস আবিষ্কার করলাম কিছুদিন আগে। ওখানেও হাজার সাহিত্য সৃষ্টি হচ্ছে আবার প্রতিনিয়ত বিলুপ্ত হচ্ছে অগণিত। বাংলা সাহিত্যের বাইরে এমন চর্চা আর কোন ভাষায় হয় কিনা জানি না। কোন কোন সাহিত্যগ্রুপে এত বেশী লেখালেখি প্রকাশ হয় যে কেউ কারো লেখা পড়ে উঠতে পারে কিনা জানা নেই। কিন্তু এই বিপুল সৃষ্টিকর্মের সাহিত্যমান কেমন? এক সাহিত্যিক বন্ধুর মতামত নিতে গেলে সে বললো, ৯৯% নিতান্তই আবর্জনা। তবু ভাগ্য ভালো যে শতভাগ আবর্জনা নয়। ১% যদি ভালো হয় সেও কম কথা নয়। একটা স্কুলের বার্ষিক ম্যাগাজিনে ১০০ জনের লেখা ছাপা হলেও সেখান থেকে ভবিষ্যত সাহিত্যিক উঠে আসার সম্ভাবনা থাকে ১ জন বা ২ জন। সেই হিসেবে অংকটা খুব খারাপ বলা যাবে না।
সাহিত্য চর্চার এই ধুম অনেকে ভালো চোখে দেখেন না। বিরক্তি প্রকাশ করেন যেনতেনভাবে সাহিত্যের নামে এসব আবর্জনা সৃষ্টি। আমার মনে হয় এর একটা ভালো দিক আছে। যারা এমন ধরণের লেখালেখি চর্চা করেন, তাদের সবাই তরুণ প্রজন্মের। তরুন প্রজন্মের এই অবক্ষয়ের যুগে যে কয়জন নিজেদের রক্ষা করতে পারছে তাদেরকে কোন না কোন মননশীল সৃজনশীল কর্মে নিয়োজিত থাকতে হয়। ওটাই তাদের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। সুতরাং তারা যত নিন্মমানের সাহিত্যই রচনা করুক না কেন, তারা অন্তত একটি সৃষ্টিশীল জগতে বাস করে। এই সৃষ্টিশীল সমাজ আমাদের খুব দরকার।
২.
কাগজের পত্রিকা এখনো আছে। কিন্তু সংখ্যার বিচারে অনলাইন পত্রিকার সংখ্যা শতগুন বেশী। অনলাইনে যেসব সাহিত্যচর্চা হচ্ছে, তা যেনতেন হলেও পরিবেশের কথা চিন্তা করলে কাগজের পত্রিকার চেয়ে অনলাইন পত্রিকাই উপকারী। কাগজের পত্রিকা প্রকাশ করতে গেলে পরিবেশের কোন না কোন ক্ষতি করেই করতে হয়। অনলাইন পত্রিকা সেই দায় থেকে মুক্ত। দৈনিক পত্রিকার অনলাইন পাঠকের সংখ্যা কাগজের চেয়ে কয়েকগুন বেশী। যদি সব পাঠককে কাগজের পত্রিকা পড়তে হতো, তাহলে কয়েকগুন বেশী পত্রিকা ছাপাতে হতো। একটি দৈনিকের এক লাখ সংখ্যা ছাপানোর জন্য যদি দশটি বৃক্ষকে প্রাণ দিতে হয়, পাঁচ লাখ হলে পঞ্চাশটি বৃক্ষের প্রাণ যেতো। প্রযুক্তির উন্নতির কারণে ৪০টি বৃক্ষ বেঁচে যাচ্ছে একটি দৈনিক পত্রিকার হাত থেকে। সবগুলো অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা যদি কাগজে প্রকাশ হতো, তাহলে এতদিনে পৃথিবীতে একটি বৃক্ষও বেঁচে থাকতো না। তাই যেনতেন হলেও অনলাইনেই হোক সাহিত্যচর্চার হাতে খড়ি।
৩.
আমরা এই আসরের অনেকেই কম বেশী লেখালেখি করি। যা পত্রিকায় প্রকাশিত হয় বলে দেখতে পাই। কিন্তু কিছু কী পড়ি? কে কী পড়ছি জানি না। এই পড়ার বিষয়টা কোথাও দেখি না। কারণ কী পড়ছি, কী ভাবছি এই বিষয়টা নিয়ে আমরা লিখতে আগ্রহ বোধ করি না। কেন করি না এটা একটা বিস্ময়। সৃষ্টিশীল মানুষদের এমন হবার কথা নয়। ব্যতিক্রম দুয়েকজন আছেন, তাদের সংখ্যা এত কম যে খুঁজে বের করা মুশকিল। কেউ কিছু পড়ছে জানলে অন্যরা তা পাঠে আগ্রহী হয়। চুপচাপ পড়ে গেলে কিছু বোঝার উপায় নেই। একটি ভাল গল্প উপন্যাস পড়লে, একটা ভালো সিনেমা দেখলে সেটা নিয়ে অবশ্যই দুয়েক কলম লেখার চেষ্টা করা উচিত। কিন্তু আমিও লিখছি না, আপনিও লিখছেন না। আমরা সবাই চুপকথার ডালে বসে থাকি।