Thursday, July 10, 2014

দুটো স্মৃতি এবং একটি সম্পর্কহীন গল্প


লাইব্রেরী ভ্রমণ

বহুদিন ধরে যাবো ভাবছিলাম। শেষবার গিয়েছি দুই দশক আগে। এমরানই নিয়ে গিয়েছিল। প্রাচীন একটা দালান। আবছা অন্ধকার ধোঁয়াশা ঢাকা একটা ঘর। টিমটিমে আলো জ্বলছে সিলিং থেকে। লম্বা টেবিল ঘরের মাঝখানে। সারিবদ্ধ চেয়ার। সারি সারি বইয়ের তাক দেয়াল জুড়ে।

ঘরজুড়ে অতি প্রাচীন একটা গন্ধ। যেন টাইম মেশিনে চড়ে হঠাৎ করে উনিশ শতকে চলে এসেছি। ঐ তো ওদিকে বঙ্কিম, রামমোহন, বিদ্যাসাগর। তার পাশেই তরুণ রবীন্দ্রনাথ কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নজরুল হামাগুড়ি দিচ্ছে ধুলোমাখা উঠোনে। জীবনানন্দ আচড় কাটছে মেঝেতে। এরা সব আমার চেনা।

আমি একটা চেয়ার নিয়ে বসে পড়লাম। মোটা একটা জার্নালে বুঁদ হয়ে গেলাম। এই তো এদের খুঁজছিলাম আমি এতকাল। সেই শেষ। দুই দশক ওমুখো হইনি। সময় পাইনি।

সেদিন আবারো ঝোঁক চেপে গেল। অফিসে ফাঁক বের করে আবারো ছুটলাম। ভেতরে ঢুকলাম। দুপুর একটা বাজে। নীরব নিস্তব্ধ পুরো দালান। একটা দরোজা খোলা। আমি আলগোছে ঢুকলাম। কেউ নেই। দিনের আলো যথেষ্ট ঢোকেনি। ঘুপঘুপ করছে অন্ধকার। চেয়ার টেবিল সব আগের মতন, আরো পুরোনো হয়েছে ২০ বছরে। একটাও মানুষ নেই।

না আছে। পেছন থেকে একজন কথা বলে উঠলো।
-কী চাই?

চমকে উঠে জবাব দিলাম,
-ইয়ে, পুরোনো কিছু বই পত্রিকা চাই।

-বই আছে পত্রিকা নাই।
-পত্রিকা কোথায়
-পত্রিকা সের দরে বিক্রি হয়ে গেছে।
-বইগুলো দেখতে চাই
-আপনি অসময়ে এসেছেন। এই লাইব্রেরী খুলবে দেড়টায়। বন্ধ হবে পাঁচটায়। আপনি এখন বাইরে যান।

আবছা আঁধারে মানুষটার দিকে দেখলাম ভালো করে। অসন্তুষ্ট চেহারা। বইপত্রের চেয়ে নিয়ম মানার দিকে আগ্রহ বেশী। বেরিয়ে এলাম। পুরোনো হতাশা এসে গ্রাস করলো। আমাদের লাইব্রেরীগুলো কেন যেন পড়াবান্ধব না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরী নিয়েও একই হতাশা ছিল।

মলিনতম অবহেলিত সেই প্রাচীন লাইব্রেরীটার নাম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশান লাইব্রেরী।


হারানো বন্ধু

রাঙ্গুনিয়া পেরিয়ে আরো বেশ কিছুদূর যাবার পর আমাদের বাসটা থামালো সরকারী বাহিনী। এক বিডিআর জওয়ান গাড়িতে উঠে কিছু একটা খুঁজছে।

আমরা তিনজন। দুজন জেগে আছি, মাঝখানের জন ঝিমাচ্ছে। বিডিআর আঙুল তুললো তার দিকে।

বললো, ওনাকে নেমে যেতে হবে। ...
আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কেন, সমস্যা কি?
বিডিআর জওয়ান বললো, পার্বত্য চট্টগ্রামে কোন বিদেশী নাগরিক নিষিদ্ধ।

আমরা তাকালাম আমাদের লালগোঁফের বন্ধুটার দিকে।
ঝাঁকি দিয়ে জাগিয়ে তুলে বললাম, "ঐ বেডা তোরে ত নামি যন ফড়িবু। তোর বাড়ি হন্ডে, রাশিয়া না?"

সে ধড়মড় করে জেগে উঠে বললো -"ধুর বেডা মশকারি নচুদাইস"।

বিডিআর জওয়ান ওর ভাষা শুনে চোখ কপালে তুলে সুরসুর করে নেমে গেল। গাড়ি আবারো চলতে শুরু করলো।

সেই বন্ধুটির নাম হোসেন শহীদ। সে আজো দুনিয়াতে আছে একই শহরে আছে, কিন্তু আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেছে অজ্ঞাত কারণে।


মহাচোর

দেশের উজির অনেক উচ্চ বংশীয় লোক। সমাজে সম্মানিত। অর্থে প্রতিষ্ঠিত। ক্ষমতায় দম্ভিত। শুধু একটি অতি গোপনীয় সমস্যা তার। উজির ভদ্রলোক সপ্তাহে একদিন চুরি করেন। চুরি করেন রাজকোষ থেকে। রাজা প্রতি রোববার শিকারে বেরোন, তখন তিনি চুরির কাজ সারেন। চুরির কথা রাজকোষ প্রহরী ছাড়া আর কেউ জানে না। প্রহরীকে বলে দিয়েছেন কাউকে জানালে চাকরী তো যাবেই, সাথে জানও। প্রহরী নিশ্চুপ।

একদিন ভদ্রলোকের নিজের ঘরে চোর ঢুকলো। চোর চুরি করে পালাবার আগেই ধরা পড়ে গেল। প্রকাশ্য রাজ দরবারের বিচারে সাজা হলো শূলে চড়ানো। শূলে চড়ার আগে চোর একবার রাজার সাথে দেখা করতে চাইল। রাজা অনুমতি দিল। চোর তার কোচড় থেকে একটি স্বর্ণমুদ্রা বের করে রাজার সামনে ধরলো।

রাজা বললো, "এ কী!!! এ তো রাজকোষের স্বর্ণ!!!!"
চোর বললো, "মহারাজ একটি স্বর্ণমুদ্রা চুরির সাজায় যদি শূলে চড়তে হয়, পুরো রাজকোষ চুরির সাজা কি?"

[বাংলাদেশেও বড় বাটপার ছোট বাটপারকে শাস্তি দিতে পারদর্শী যদি না তার রাজনৈতিক যোগাযোগ মজবুত থাকে]

=======================================================



No comments:

Post a Comment